কুমারটুলিতে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। ছবি: পিন্টু প্রধান।
নিরুফা খাতুন: চণ্ডীমণ্ডপে খড়ের কাঠামোর উপর মাটি পড়ছে। ছেনির নিপুণ টানে এক এক করে মূর্ত হচ্ছে দেবীর চোখ-নাক, অসুরের পেশিতরঙ্গ। আর মুগ্ধ নয়নে সেই সৃষ্টি দেখতে ভিড় জমেছে বাড়ির কচিকাঁচাদের। বাতাসে পুজোর গন্ধ ভাসলেই বনেদি বাড়ির ঠাকুরদালানে এই দৃশ্য চিরন্তন। কিন্তু করোনা আবহে সেই চেনা ছবিও এবার উধাও। কেন না সংক্রমণের আতঙ্কে বাড়িতে গিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ থেকে এ বছর নিজেদের বিরত রেখেছেন অধিকাংশ মৃৎশিল্পী।
কলকাতা মহানগরীতে বাড়ির পুজোর (Durga Puja 2021) প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় সেই রথযাত্রার পর থেকেই। কুমোরটুলি থেকে শিল্পীরা বায়না নিয়ে বাড়িতে গিয়ে প্রতিমা তৈরি করে থাকেন। বংশপরম্পরায় এই বাড়ির পুজোয় জড়িয়ে আছেন কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ থেকে বিরত থেকেছেন অধিকাংশ শিল্পী। একইভাবে সংক্রমণের ভয়ে ক্লাবের মণ্ডপে গিয়েও কাজ করার অর্ডার ফিরিয়ে দিয়েছেন বহু শিল্পী। মৃৎশিল্পী নিলাম পালের কথায়, “শহর ও শহরের বাইরে মিলিয়ে প্রতি বছর চার থেকে পাঁচটি বাড়ির প্রতিমার অর্ডার থাকত। গৃহস্থের বাড়িতে গিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ করতে হত। কিন্তু এখনও করোনা যায়নি। তাই এ বছর বাড়িতে গিয়ে কোনও প্রতিমা তৈরি করছি না। ক্লাবের মণ্ডপে গিয়ে কোনও কাজ করছি না।”
সুরক্ষার কথা ভেবে বাড়ির অর্ডার ফিরিয়ে দিয়েছেন শিল্পী সমীর পালও। প্রতি বছর প্রায় ৩০-৩২টি প্রতিমার অর্ডার থাকে এই শিল্পীর কাছে। এবার তাঁর হাতে ১৩টি অর্ডার। হাতে কাজ কম থাকলেও বাড়িতে গিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ নিচ্ছেন না শিল্পী। তাঁর কথায়, “আগে কর্মীদের সুরক্ষা। তারপর কাজ। করোনার আগে শহর ও শহরতলির বহু বাড়ির পুজোর বরাত থাকত। রথের পর থেকে বাড়িতে গিয়ে কাজ শুরু করে দেওয়া হত। সংক্রমণের ভয়ে এ বছর বাড়িতে গিয়ে কোনও কাজ করছি না।”
একই বক্তব্য, শিল্পী অখিল পাল, রুদ্র পাল, কাশীনাথ পালের। শিল্পী প্রশান্ত পালও এবার সংক্রমণের আতঙ্কে বাড়িতে গিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন না। এ বছর তাঁর কাছে মুম্বইয়ের এক তারকার বাড়ির পুজোর জন্য প্রতিমা তৈরির বরাত এসেছিল কিন্তু তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। শিল্পী বলেন, “করোনার আতঙ্কে বাড়ি এবং ক্লাবের মণ্ডপে গিয়ে কোনও কাজ করছি না। মুম্বইয়ের একটি বড় পুজোর প্রতিমা তৈরির জন্য ডেকেছিল। মুম্বইয়ে গিয়ে কাজ করতে হবে বলেছিল। সংক্রমণের ভয়ে সেই অর্ডার ফিরিয়ে দিয়েছি।”
কুমোরটুলির সব শিল্পীর টিকাকরণ করা হয়েছে। অনেকের দুটি ডোজই হয়ে গিয়েছে। কর্মীদেরও একটি করে টিকা হয়েছে। কুমোরটুলি মৃৎশিল্প ও সংস্কৃতি সমিতির যুগ্ম সম্পাদক রঞ্জিত সরকার বলেন, টিকাকরণের পরও করোনা হচ্ছে। বাড়িতে কাজ করতে গেলে যদি কোনও শিল্পী কিংবা কর্মী আক্রান্ত হয়ে যান তাহলে কুমোরটুলির অন্যরা সংক্রমিত হতে পারেন। সেই আশঙ্কায় দু’-চারজন ছাড়া কোনও শিল্পী এবার বাড়িতে গিয়ে কাজ করছেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.