Advertisement
Advertisement

ক্যাম্পাসের মায়া কাটল না ‘ডন’-এর, যাদবপুরই অন্তিম ঠিকানা

বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনদার ক্যান্টিনের পাশে সমাধিস্থ প্রিয় সারমেয়।

'Don' of Jadavpur University dies
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:March 12, 2019 9:34 am
  • Updated:March 12, 2019 9:34 am

অভিরূপ দাস: ছোটবেলা থেকেই একটা পা ছিল না। সারাদিন খুঁড়িয়েই হাঁটত। ভালোবেসে কেউ দুটো বিস্কুট খাওয়াত, তো কেউ ছুঁড়ে দিত কাটলেটের একটা টুকরো। তবু সে ছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডন। অপরিচিত লোকজন তার কথা মনে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দু’বার ভাবত। তিন পায়েই সে ক্যাম্পাসের বাইরে তাড়িয়ে দিয়ে আসত অনাহুত অতিথিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকা এহেন পাহারাদার, সদস্যের মৃত্যুতেই অন্যরকম সকাল দেখল যাদবপুর।

বাংলায় ৭ দফার ভোট বিজেপির গেমপ্ল্যান, অভিযোগ মমতার

Advertisement

বয়স তেইশ। তাতে কী? মানুষ হিসেবে সে বেঁচে ফেলেছে ১৬১ টা বছর। অঙ্কের হিসেবে কুকুরের এক বছর মানে মানুষের সাত বছর যে! বয়সের ভারে ঝুঁকে পড়েছিল শরীর। রবিবার যাদবপুরের ইনিংস শেষ করেছিল ডন। তার মৃত্যুতে শোক বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর জুড়ে। হবে না-ই বা কেন? তার পরিচিতরা আজ দেশ থেকে দেশান্তরে। এত দীর্ঘ বন্ধুত্বের পরিধি আর কারও আছে কি? মনে করতে পারছেন না যাদবপুরের ছাত্ররা।
গত দু’দশক ধরে ডনকে দেখে আসছেন যাদবপুরের ছাত্রছাত্রী, গবেষক, অশিক্ষক কর্মীরা। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে অনেকেই সাগরপারের বহুজাতিক কোম্পানিতে, কেউ দেশের মধ্যেই খ্যাতনামা পদে বহাল। ডনের জন্য তাঁরা প্রত্যেকেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সহানুভূতি জানিয়েছেন। সামান্য এক সারমেয়, যাদবপুরের কৃতীদের দৌলতেই আজ পরিচিত মুখ। বাঁকুড়ার শুভজিৎ মুখোপাধ্যায় যেমন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে এখন বেঙ্গালুরুতে ডক্টরেট করছেন। সেই তিনিও ফেসবুকে জানিয়েছেন, কলেজে পড়ার সেই দিনগুলোয় পায়ে পায়ে কেমন ঘুরত তাদের প্রিয় ডন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র সার্থক গুহর কথায়, এ এক অন্যরকম সম্পর্ক। আর পাঁচটা কুকুরের মতো আচরণ ছিল না তার। কখনও লেজ নেড়ে খাবার চাইতে দেখা যায়নি তাকে। বরং মুখের সামনে খাবার দিলে খেত, পেট ভরে গেলে আর ফিরেও তাকাত না। ডনের আরেক নাম, সাড়ে তিন পা। ছোটবেলাতেই দুর্ঘটনায় একটা পায়ের অর্ধেক খুইয়েছিল সে। সেই থেকেই প্রতিবন্ধী সেই কুকুরের এই নাম। আর ডন নাম প্রাপ্তি তার নিজের দাপুটে মেজাজের জন্য।

Advertisement

নির্ঘন্ট প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তুতি সব দলে, প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগেই শুরু প্রচার

রবিবারই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেছে ক্যাম্পাসের ম্যাসকট। সোমবা রজনীগন্ধা ঘেরা কেবিনে তাকে শুইয়েছিলেন যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীরা। সে ছবি দেখে চোখ কপালে উঠেছে অনেকেরই। এমনটাও সম্ভব! এর আগে বহুবার কর্পোরেশনের গাড়ি তুলতে এসেছিল তাঁকে। রুখে দাঁড়িয়েছিল যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীরাই। শেষযাত্রাতেও তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই বেঁধে রাখল তারা। যাদবপুরের মিলনদার ক্যান্টিনের পাশেই সমাধিস্থ করা হয়েছে ডনকে। পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, “যতদিন ও ছিল, আমরা ওকে আমাদেরই একটা অংশ ভাবতাম। ওকে তাই এখানেই রেখে দেওয়া হল। কখনও ওর কবরটার পাশে এলে আমাদের মনে হবে, ডন তো রয়েছে আমাদের সঙ্গেই।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ