Advertisement
Advertisement
দমদমে খুন

বর্ষবরণের রাতে পরিকল্পনামাফিক বন্ধুকে খুন, ৩ দিনের মাথায় গ্রেপ্তার দুই অভিযুক্ত

অপরাধীদের ছেড়ে রেখেই বাজিমাত পুলিশের।

DumDum murder case: two admitted that they killed their friend

ছবি: প্রতীকী

Published by: Sulaya Singha
  • Posted:January 6, 2020 9:01 am
  • Updated:January 6, 2020 9:01 am

স্টাফ রিপোর্টার, বিধাননগর: বাঁশ দিয়ে পেটানোর পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ইটের বাড়ি মেরে থেঁতলে দেওয়া হয়েছিল বছর আঠারোর তরুণের মুখ। তারপর দেহটিকে ভাগাড়ের সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দিব্যি এলাকায় ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছিল যুবকের সমবয়সি দুই বন্ধু। এমনকী মৃতের মায়ের সঙ্গে তারা থানায় নিখোঁজের ডায়েরি পর্যন্ত করতে গিয়েছিল। সদ্য দুই যুবকের এই পেশাদারি খুনের ভঙ্গি দেখে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছেন পোড়খাওয়া পুলিশ অফিসারও। তবে শেষরক্ষা হয়নি। জেরার সামনে প্রথমে মুখ না খুললেও পরে ভেঙে পড়ে খুনের কথা স্বীকার করে দু’জনেই। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঘটনা দমদমের মাঠকল অঞ্চলে। মৃতের নাম পল্লব হাজারি (১৮)। পেশায় রাজমিস্ত্রি। দমদমের মাঠকল পশ্চিমপাড়ায় দুই কামরার ঘরে মায়ের সঙ্গে থাকতেন। লোকের বাড়ি ঠিকে কাজ করেন মা চম্পা হাজারি। তিনি ছেলের দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে ছেলের নিখোঁজ হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। দুই বন্ধু তাঁকে আশ্বাস দিয়ে দমদম থানায় নিয়ে গিয়েছিল। ঠিক দু’দিন বাদে জানা যায়, এরাই পরিকল্পনা করে পল্লবকে খুন করেছে। দু’জনের নাম বিশাল যাদব ও সম্রাট নস্কর ওরফে জিৎ। তারা মাঠকল এলাকায় ভাড়ায় থাকে। শনিবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার আগে দু’বার তাদের জেরার টেবিলে বসিয়েছিল পুলিশ। প্রথমবার পুলিশকে তারা ভুল পথে চালিত করে। পরেরবার পুলিশ আরও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে তাদের জেরা শুরু করলে নার্ভ হারায় দু’জনেই। এবং অপরাধের কথা স্বীকার করে নেয়। তাদের দেখানো রাস্তা দিয়ে গিয়েই ভাগাড়ের মাঝখানের একটি সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে পল্লবের থেঁতলে দেওয়া দেহ উদ্ধার করে। সেটির অবস্থা এমন ছিল যে, মৃতের বাবা শ্যামল হাজারি প্রথমবার তা দেখে চিনে উঠতে পারেননি। কিন্তু ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু এমন কাণ্ড ঘটাল কেন?

Advertisement

[আরও পড়ুন: স্টেশন থেকে বেরতে না পেরে সুড়ঙ্গে দৌড়, যাত্রীর কাণ্ডে বিপর্যস্ত মেট্রো পরিষেবা]

মৃতের মা চম্পা হাজারি জানিয়েছেন, ছেলের পকেটে ৮০০ টাকা ছিল। সেটি নিয়েই পিকনিকে বেরিয়েছিলেন ৩১ ডিসেম্বর রাতে। তারপর টাকা বাড়িতে দেবেন বলে ফেরত আসেন। আর তক্ষুণি একটা ফোন আসে ছেলের মোবাইলে। বিশালের ফোন থেকে। আবার বেরিয়ে যান পল্লব। আর ফেরেননি। বিকাশকে জিজ্ঞেস করেছিলেন চম্পা। বিকাশ বলেছিল, পল্লব তার কাছেও যায়নি। এরপর ১ জানুয়ারি দমদম থানায় ছেলের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন চম্পা। পুলিশ তদন্তেও নামে।

Advertisement

তাহলে কি ৮০০ টাকার জন্য খুন হতে হয়েছিল পল্লবকে? পুলিশ বলছে, বিষয়টি অত সরল নয়। টাকা-পয়সার গন্ধ রয়েছে এই মামলায়। তবে তা সামান্য ৮০০ টাকা নয়। আরও বড় অঙ্কের টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে পল্লবের সঙ্গে সমস্যা চলছিল বিশাল আর জিতের। তার জেরে শত্রুতা তৈরি হয়েছিল। সে কারণেই খুন করা হয় তাঁকে। এবং সেটি পূর্বপরিকল্পনা মাফিকই করেছে এই দুই যুবক। আশ্চর্যের বিষয় হল খুনের নেপথ্যে পেশাদারি চাতুরি লক্ষ করা গিয়েছে। এমনকী দেহ হাপিস করে দেওয়ার জন্য জায়গাটা বাছাও হয়েছে খুব প্ল্যান করে। এই দুই সদ্যযুবকের পক্ষে এত পেশাদারিত্ব দেখানো কি সম্ভব? নাকি খুনের পিছনে আরও কোনও পোক্ত মাথা কাজ করছে তা খুঁজে দেখছেন তদন্তকারীরা।

[আরও পড়ুন: শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়, প্রতিবাদে গণইস্তফা যাদবপুরের SFI সদস্যদের]

প্রমোদগড়ের ভাগাড়টি দমদম ও বরানগরের সীমান্ত এলাকায়। বরানগরের একটি জায়গায় পিকনিকে গিয়েছিলেন পল্লব। সঙ্গে ছিল বিশাল-জিৎ ও আরও অনেক বন্ধু। সেখানেই খুনের অন্তিম পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে অনুমান পুলিশের। পিকনিক শেষে বাড়ি ফেরেন পল্লব। তারপর তাঁকে ফের ফোন করে একই জায়গাতে আসতে বলে বিশাল। খুন করা হয় সেখানে। এরপর দেহ ভাগাড়ে নিয়ে এসে ফেলে দেয় তারা। সন্দেহের পরও দুই অভিযুক্তকে ছেড়ে রেখেই তাদের অপরাধ জানার ছক কষেছিল পুলিশ। আর তাতেই বাজিমাত। রবিরার দুই যুবককে বারাকপুর আদালতে তোলা হয়েছিল। তাদের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য উঠে আসবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ