সুচেতা সেনগুপ্ত: একতাল মাটি, তা থেকেই তিলে তিলে প্রতিমা নির্মাণ। তারপর সেই মৃন্ময়ী প্রতিমার ধীরে ধীরে চিন্ময়ী হয়ে ওঠা। দশভুজার আগমন, আরাধনার এমনই চিত্র মনে আঁকা রয়েছে আমবাঙালির। তবে মা দুর্গার মর্ত্যে আসা, দিন কয়েক থাকা, বিদায় নেওয়া- সবটা মোটেই এত ছকে বাঁধা নয়। ভক্তের ভাবনায় দেবী আরাধনার পৃথক পৃথক রূপ। যেমন ইস্ট বেলেঘাটা জনকল্যাণ সংঘ। এই ক্লাবের মাতৃবরণ কিন্তু মৃন্ময়ী মূর্তিতে নয়। বরং কাঠের পুতুলে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেই তারা দেবী দুর্গাকে (Durga) বরণ করে নেবে। গোটা একটা গ্রাম উঠে আসছে তাদের এবারের মণ্ডপে। আর চমক থাকছে সেই গ্রামেই। কাঠপুতুল তৈরিতে বিখ্যাত নতুনগ্রামের আদলে মণ্ডপের ভিতরে তাঁদের পুজোর থিম এবার – ‘কাঠপুতুলে জীবন’। শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি।
আসুন, প্রথমে নতুনগ্রামে একবার ঢুঁ মারা যাক। কলকাতা (Kolkata) থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে পূর্ব বর্ধমান জেলার অগ্রদ্বীপ স্টেশনের অদূরে নতুনগ্রাম। কাঠের তৈরি রংবেরঙের পুতুল তৈরিতে এই গ্রাম বিশ্বখ্যাত। পঞ্চাশটি পরিবারের বাস এখানে। প্রত্যেকেই দিনযাপন করেন স্রেফ কাঠের পুতুল গড়ে। ১৯৬৬ সালে কাঠের পুতুল তৈরির জন্য ‘রাষ্ট্রপতি পুরস্কার’ প্রাপ্তির মধ্যে দিয়ে সকলের কাছে পরিচিতি পায় নতুনগ্রাম। দিন কাটছিল ভালই। কিন্তু গত বছর থেকে তাল গেল কেটে। মহামারী করোনা ভাইরাসের (Coronavirus) আছড়ে পড়ল গোটা বিশ্বে। তার দাপটে দৈনন্দিন জীবন গেল থমকে। ছেদ পড়ল রোজকার কাজ, রুটিরুজিতে।
সেই আতঙ্ক এখনও কাটেনি। আসছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। কাজকম্ম চলছে ঢিমেতালে। কাঠপুতুলের নির্মাণকাজ যেন চলছে যান্ত্রিকভাবে। শহর থেকে বিচ্ছিন্ন নতুনগ্রাম। আন্তর্জাতিক উড়ানে বিদেশযাত্রার সম্ভবনাও প্রায় নেই। কিন্তু তবু নতুনগ্রাম পাড়ি দেবে ঘরের বাইরে। দুর্গাপুজোর ক’টা দিন বর্ধমানের এই নতুনগ্রামের ঠিকানা ইস্ট বেলেঘাটা জনকল্যাণ সংঘ। গ্রামের রোজনামচায় আবার ফিরে দেখা হবে শিল্পের রং, রোজকার ব্যস্ততা। ৭৮ তম বর্ষে ইস্ট বেলেঘাটা জনকল্যাণ সংঘে এবার তৈরি হচ্ছে খোদ নতুনগ্রাম। এখানে ওখানে ছড়িয়ে গ্রামেরই টুকরো। সেইসঙ্গে শিল্পীদের ব্যস্ততা। ‘কাঠপুতুলে জীবন’ থিম নিয়ে এবছর দেবীবরণে প্রস্তুত হচ্ছে কলকাতার এই ক্লাব। কাঠের পুতুলে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেই আরাধনা করবেন ক্লাবের সদস্যরা।
এহেন থিম ভাবনার নেপথ্যে যিনি রয়েছেন, তাঁর নাম সমর সাহা। তিনিই জানালেন, এবার কাঠের পুতুলের গ্রামকে তুলে আনা হচ্ছে তাঁদের মণ্ডপে। প্রায় ৩ লক্ষ টাকার পুতুল তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছে শিল্পীদের। এই পুতুলের কিছুটা তৈরি হবে নতুনগ্রামে, কিছুটা হবে কলকাতায় বসেই।
তাতে পুতুলশিল্পীদের ভাঁটা পড়া জীবনে কিছুটা জোয়ার আসবে। শুধু তাই নয়, এবার পুজোর অনুদান হিসেবে প্রতিটি ক্লাবকে মুখ্যমন্ত্রী যে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দিচ্ছেন, সেই টাকাও নতুনগ্রামের ৫০টি শিল্পী পরিবারের মধ্যে ভাগ করে দেবে ইস্ট বেলেঘাটা জনকল্যাণ সংঘ। আর এই পদক্ষেপের মধ্যে দিয়েই তাদের বার্তা, ‘শিল্প এবং শিল্পীসত্তা যাতে বেঁচে থাকে তাই এ বছর আমাদের এই সিদ্ধান্ত, পুজো হোক মানবতার’।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.