Advertisement
Advertisement
Haridevpur

‘দেখার কেউ নেই’, সুইসাইড নোটে আক্ষেপ প্রকাশ করে আত্মঘাতী অসুস্থ, বৃদ্ধ দম্পতি

মেয়ের জন্মদিনের পরেরদিনই হরিদেবপুরের ফ্ল্যাটে উদ্ধার দম্পতির দেহ।

Elderly couple found dead at Haridevpur just after the day of their daughter's birthday| Sangbad Pratidin

ছবি: প্রতীকী

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:January 11, 2021 8:48 am
  • Updated:January 11, 2021 8:51 am

অর্ণব আইচ: আগের রাতেই মেয়ের জন্মদিন পালন করেছেন। কিন্তু মনে আনন্দ ছিল না কোনও। তারই প্রমাণ মিলল পরেরদিন সকালে। ঘুম থেকে উঠে বৃদ্ধা মা—বাবার ঘরে ঢুকতে গিয়েই চমকে উঠেছিলেন মেয়ে। মা ও বাবা বিছানার উপর শুয়ে। কিন্তু তাঁদের মুখ দিয়ে গাঁজলা বের হচ্ছে! তাঁদের শরীর স্পর্শ করেই আঁতকে ওঠেন তিনি। মৃত্যু হয়েছে মা ও বাবার। পাশে পড়ে একটি বিশেষ ব্র্যান্ডের ঘুমের ওষুধের খালি স্ট্রিপ। পাশে একটি কাগজে লেখা সুইসাইড নোট। তার মাথায় লেখা ‘ইচ্ছামৃত্যু’। মেয়ের জন্মদিনের পরেরদিনই এমন মর্মান্তিক পরিণতিতে স্তব্ধ হরিদেবপুর (Haridevpur) থানা এলাকার জেমস লং সরণি।

‘দেখার কেউ নেই।’ এই আক্ষেপে নিজেদের ফ্ল্যাটেই আত্মঘাতী হলেন বৃদ্ধ দম্পতি। রবিবার দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুর থানা এলাকার জেমস লং সরনিতে ঘটেছে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি। মৃত্যু হয়েছে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ প্রদ্যুৎ লাহিড়ি ও তাঁর স্ত্রী প্রণতি লাহিড়ির। দু’জনের দেহ ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা পুলিশকে জানিয়েছেন, অতিরিক্ত সংখ্যক ঘুমের ওষুধ খাওয়ার ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। জানা গিয়েছে, হরিদেবপুরের এই দম্পতির অর্থের অভাব ছিল না। শুধু অভাব ছিল দেখাশোনা ও শুশ্রূষার। সুইসাইড নোটেই (Suicide note) তা স্পষ্ট। তাতে বাংলায় লেখা, তাঁদের একমাত্র মেয়ে থাকেন ৯০ কিলোমিটার দূরে থাকেন। দেখাশোনার অসুবিধা রয়েছে। তাঁর স্থাবর ও অস্থাবর যাবতীয় সম্পত্তি মেয়েই পাবেন। মেয়ের প্রতি তাঁদের কোনও অভিযোগ নেই। একটি খাতা ও একটি ডায়েরির ছেঁড়া পাতায় এই সুইসাইড নোট লেখা। নিচে বৃদ্ধ দম্পতির সই।

Advertisement

[আরও পড়ুন: সারমেয়দের ভালবেসে মেয়াদের ১০ বছর আগেই চাকরি ছাড়ছেন রেলকর্মী]

পুলিশ জানিয়েছে, জেমস লং সরণির একটি চারতলা আবাসনের দোতলার তিন কামরার ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ছিলেন লাহিড়ি দম্পতি। মেয়ে মধুমিতা দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের স্কুল শিক্ষিকা। কর্মসূত্রে অনেক সময়ই জয়নগরে থাকতেন। আবার কখনও মা—বাবার কাছে। শনিবার তাঁর জন্মদিন ছিল। জেমস লং সরণির বাড়িতেই ছিলেন তিনি। জন্মদিন পালনের পর রাতের খাবার খেয়ে প্রত্যেকে ঘুমোতে যান। মেয়ে মধুমিতা নিজের ঘরে ছিলেন। তিনি বুঝতেও পারেননি কখন তাঁর মা—বাবা একসঙ্গে সুইসাইড নোট লেখার পর ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন। সকালে উঠে মা—বাবাকে ডাকতে গিয়ে মেয়ে দেখেন, দরজা খোলা রয়েছে। মা—বাবার নিথর দেহ দেখে চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে হরিদেবপুর থানার পুলিশ। আসেন লালবাজারের গোয়েন্দারাও। পরে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরাও ঘটনাস্থলে তদন্তে যান। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, তাঁদের দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তাঁরা যে আত্মঘাতী হয়েছেন, সেই ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত।

Advertisement

[আরও পড়ুন: হেস্টিংসে বৈঠকে শোভন-বৈশাখী, দুই নেতাকে নিয়ে সোমবার ফের মিছিলের ডাক বিজেপির]

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জেনেছে, বৃদ্ধ দম্পতি বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তাঁদের মেয়ের সংসারেও অশান্তি চলছিল। তার উপর মেয়ে বহুদূরে চাকরি করতে যান। করোনা পরিস্থিতিতেও মাঝেমধ্যে যেতে হত স্কুলে। তাই মা—বাবাকে সেভাবে দেখাশোনা করতে পারতেন না মেয়ে মধুমিতাও। অন্য কেউ বিশেষ দেখার ছিল না। এ ছাড়াও মেয়ের ডিভোর্স ঘিরেও চিন্তিত, বিমর্ষ ছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি। তাঁদের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছিল। শুশ্রূষা পাচ্ছেন না বলে আক্ষেপও ছিল তাঁদের। পুরো ঘটনাটির তদন্ত চলছে। আত্মঘাতী দম্পতির মেয়ে মধুমিতা ও অন্য আত্মীয়দেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ