শাম্মী হুদা: বেপরোয়া বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল চিংড়িঘাটা। গোটা ঘটনায় অভিযোগের তির ঘাতক সরকারি বাসের চালকের বিরুদ্ধে। গত কয়েকদিন ধরে বড়মাপের পথদুর্ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছে সরকারি বাস। শনিবার সকালে ট্রাফিক সিগন্যাল লাল ছিল ব্যস্ত চিংড়িঘাটার মোড়ে। সেই সময়ই সাইকেলে রাস্তা পেরোচ্ছিলেন দুই যুবক। তখন কীভাবে সরকারি বাস চলতে শুরু করে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাহলে কী ট্রাফিক আইন মানছে না শহরের সরকারি বাস? নিত্যযাত্রীরা কোনও রকম প্রশ্ন চিহ্ন মানতে রাজি নন। সাফ দাবি, ট্রাফিক আইন অমান্য করে বেপরোয়া গতির তালিকায় একনম্বরে রয়েছে সরকারি বাসই। অফিসটাইমে সে শিয়ালদহ হোক বা ধর্মতলা, হাত দেখালেও নির্দিষ্ট স্টপেজে থামে না দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার বাস। ধর্মতলার মোড়ে যখন লাল থেকে সিগন্যাল সবুজ হয়, তখন থিকথিকে ভিড়কে একপ্রকার উপেক্ষা করেই তীব্র গতিতে এগিয়ে যায় সিএসটিসির বাসের চালক। স্টপেজে প্রতীক্ষারত যাত্রীরা দেখতে পান গোটা বাসটির সিংহভাগ আসনই ফাঁকা।
সরকারি বাসের ঔদ্ধত্যেই বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা। সরকার যখন ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে। তখন সরকার অনুমোদিত বাসের চালকদের এই দুর্বিনীত ব্যবহারে অতিষ্ট জনজীবন। শুধু ট্রাফিক আইন অমান্য করে বাস ছুটিয়েই ক্ষান্ত থাকে না চালকরা। অনাবশ্যক হর্ন মেরে যাত্রীকে ব্যতিবস্ত করতেও জুড়ি নেই এদের। সবশেষে যদি অফিস ফেরত যাত্রীদের সামনে এসে বাসটি থামতো তাতেও কিছু ইতিবাচক দিক খুঁজে পাওয়া যেত। কিন্তু না, বহু হাত অগ্রাহ্য করেই নির্দ্বিধায় বাসটি এগিয়ে যায়। এখনও শুকোয়নি দৌলতাবাদের বাসদুর্ঘটনার ক্ষত। ঠিক তার আগেই সরকারি বাসের বলি দুই পথযাত্রী। তাহলে কী ধরে নেওয়া হবে দৌলতাবাদের ঘটনাও বড় রকমের শিক্ষার তালিকায় পড়ে না? বাস চালকের হাতের মোবাইলকে আইনবন্দি করলেই দায় এড়িয়ে চলা যায়? ট্রাফিক যদি এতটাই সক্রিয় হবে, তাহলে চিংড়িহাটার মতো ব্যস্ত কানেক্টরের লাল সিগন্যাল কী করে ভাঙলো চালক? কোন ভরসায় মানুষ পথে নামবে? উঠছে প্রশ্ন। সরকার ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফে’র দোহাই দিয়ে মানুষকে আশ্বস্ত করছে। আর সরকার অনুমোদিত বাস সুযোগ পেলেই স্টিয়ারিংয়ের ঔদ্ধত্যে পিষে মারছে পথচারীদের। মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে যাচ্ছে বাস। সেখানেই যাত্রীদের নামতে বাধ্য করা হচ্ছে। এদিকে নামতে গেলেই পাশ থেকে সামনে চলে আসছে চলন্ত বাইক, অটো বা অন্য বাস। এই সময় দুর্ঘটনা ঘটলে দায় কে নেবে ? রাজ্যবাসীর জীবন তো মুড়ি মুড়কির মতো। হয় চাকার নিচে যাও, নাহলে লাঠির ঘায়ে মরো। সিভিক পুলিশরাও এখন কর্মবীর। তাদের লাঠির সামনে আমার আপনার মাথা তো নস্যি। চালকের বদান্যতায় বাসে বসেই জলে ডুবে পৈতৃক প্রাণটা যেতে পারে। অবাক হবেন না।
তাহলে পথনিরাপত্তা সপ্তাহ, ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কীসের জন্য? শুধু কী শব্দের বোঝা বাড়াতে? নাকি অবাধ দুর্ঘটনার পরে নিয়মরক্ষার শোকপ্রকাশ? উত্তর খুঁজছে রাজ্যবাসী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.