সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রয়াত হলেন কিংবদন্তি কার্টুনিস্ট চণ্ডী লাহিড়ী। বার্ধক্যজনিত কারণে বৃহস্পতিবার আর জি কর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলার খ্যাতনামা এই শিল্পী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। কিছুদিন আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভরতি হন তিনি। পরে হৃদযন্ত্রে সমস্যা, রক্তচাপজনিত সমস্যা দেখা দেয় তাঁর। এদিন দুপুরে তাঁর মৃত্য হয়। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত স্ত্রী তপতি লাহিড়ী, কন্যা তৃণা লাহিড়ী-সহ গোটা পরিবার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেছেন নবান্ন থেকে। বিকেলে তাঁর মরদেহ বেলগাছিয়ার রাজা মণীন্দ্র রোডের বাসভবনে নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবারবর্গ।
চণ্ডী লাহিড়ী সম্পর্কে বাঙালি পাঠককে আলাদা করে বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কমবেশি চার-পাঁচ দশক জুড়ে তাঁর কার্টুন মাতিয়ে রেখেছিল বাঙালিকে। খবরের কাগজ আর বিভিন্ন ম্যাগাজিনের পাতায় তাঁর কার্টুন বাঙালির খবর পড়ার আনন্দে যোগ করেছিল অন্য মাত্রা। যাঁদের সঙ্গে বই বা খবরের কাগজের বিশেষ সম্পর্ক নেই, তাঁরাও চণ্ডীবাবুকে চেনেন ‘চণ্ডীপাঠ’-এর অনবদ্য স্রষ্টা হিসাবে। সাংবাদিক জীবনে আনন্দবাজার গোষ্ঠীর ইংরেজি দৈনিক হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ডে আঁকতেন থার্ড আই ভিউ, Seen Askew শিরোনামে। আনন্দবাজারে তাঁর কার্টুন ছাপা হত ‘তির্যক’ শীর্ষনামে। বাংলায় পকেট কার্টুনের স্রষ্টা চণ্ডী লাহিড়ীর হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ডে আঁকা Seen Askew-এর কার্টুনের সঙ্গে আরও কিছু কার্টুন নিয়েই তৈরি হয়েছে অনবদ্য বই ‘ভিজিট ইন্ডিয়া উইথ চণ্ডী’।
১৯৫২ সালে সাংবাদিক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন চণ্ডী লাহিড়ী। ১৯৬১ সালে শুরু হয় তাঁর কার্টুনিস্ট জীবন। কার্টুন আঁকার পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু রঙ্গ-রসাত্মক রচনাও লিখেছেন বিভিন্ন ম্যাগাজিনে। বিপুল শ্রম ও অধ্যাবসায় নিয়ে লিখেছেন ‘কার্টুনের ইতিবৃত্ত’ শীর্ষক গবেষণাগ্রন্থ। ‘বাঙালির রঙ্গব্যঙ্গচর্চা’, ‘গগনেন্দ্রনাথের কার্টুন ও স্কেচ’, ‘সিনস ফ্রিডম: এ হিস্ট্রি ইন কার্টুনস ১৯৪৭-১১৯৩’ প্রভৃতি গ্রন্থ তাঁর নিবিড় নিষ্ঠার পরিচায়ক। মৃত্যুর কিছুদিন আগেও তিনি রাজ্য সরকারের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের সচেতনতামূলক কার্টুনের কাজ করছিলেন। এই বয়সেও অক্লান্ত পরিশ্রম ছিল তাঁর রোজনামচা। রাত রাতভর জেগে কাজ করা তাঁর নেশায় পরিণত হয়েছিল। অশক্ত হাতেও সাদা ফুলস্কেপে ফুটিয়ে তুলতেন অনবদ্য সব সৃষ্টি। সমসাময়িক নারায়ণ দেবনাথ, শৈল চক্রবর্তীদের সঙ্গে সমান পরিচিতি ছিল তাঁর কার্টুনের রঙ্গদুনিয়ায়। অনেকে তাঁকে বাংলার আর কে লক্ষ্মণও বলতেন। কিন্তু কাজ নিয়ে চিরকাল ভাঙাচোরা করেছেন চণ্ডীবাবু। সেই গুণই পেয়েছিলেন মেয়ে তৃণা। ৯ বছর ধরে ক্যানসারের জ্বালা শরীরে বয়ে নিয়ে চলেছেন ৪০ বছরের তৃণা। কিন্তু বাবার মতোই অক্লান্ত পরিশ্রমই তাঁর পাথেয়। এখনও বাবার যোগ্য উত্তরসূরি হিসাবেই ক্রাটুনের জগতে খ্যাতি তাঁর। চণ্ডী লাহিড়ীর মৃত্যুতে একটা যুগের অবসান হল বলা যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.