Advertisement
Advertisement

মাধ্যমিক ছাত্রী ও কাকার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ এলাকা

আশ্রয়হীন আরও অনেকে৷ ক্ষতিপূরণের আশ্বাস কাউন্সিলারের৷

Fire in Patipukur, locals mourns for Madhyamik student
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:December 17, 2016 3:02 pm
  • Updated:December 17, 2016 3:02 pm

স্টাফ রিপোর্টার: বিধ্বংসী আগুনের গ্রাসে সর্বস্বান্ত পাতিপুকুর সুভাষ কলোনি৷ জীবন্ত দগ্ধ মাধ্যমিকের ছাত্রী প্রিয়া অধিকারী ও তার কাকা নিমাই অধিকারী৷ আশঙ্কাজনক আরও এক ঝুপড়িবাসী৷ আহত বহু৷ স্থানীয় বাসিন্দা ও দমকলের তৎপরতায় অবশেষে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে৷

রাত তখন আড়াইটে হবে৷ ঠান্ডায় জবুথবু সুভাষ কলোনি৷ রাতের খাওয়া সেরে লেপ জড়িয়ে ঘুমিয়েও পড়েছেন অনেকে৷ সবে চোখ লেগে এসেছে দিলীপ অধিকারীর৷ হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তাঁর৷ ঠান্ডার রাতে এত গরম কেন! লেপ সরিয়ে উঁকি মারতেই দিলীপবাবু দেখেন সিলিং জ্বলছে৷ বাইরে তখন চিৎকার–‘আগুন, আগুন লেগেছে৷’ কোনওমতে বউ ও ছোট মেয়েকে নিয়ে বাইরে আসতে পারেন দিলীপ অধিকারী৷ পাশের ঘরেই থাকেন ভাই নিমাই অধিকারী৷ রাতে সেখানেই ঘুমিয়ে ছিল দিলীপবাবুর বড় মেয়ে প্রিয়া অধিকারী৷ সেই ঘর তখন দাউদাউ করে জ্বলছে৷ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের ঝুপড়িগুলিতে৷ হাতের কাছে যা ছিল তাই নিয়ে ততক্ষণে আগুন নেভাতে ঝাপিয়ে পড়েছেন পাড়ার ছেলেরা৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি৷ মেয়ে ও ভাইকে বাঁচাতে পারেননি দিলীপ অধিকারী৷ চোখের সামনেই ঝলসে গিয়েছে মেয়ে ও ভাই৷ ঘটনার জেরে শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা৷

Advertisement

খবর মেলা মাত্র ঘটনাস্থলে আসে দমকল৷ দমকলের তৎপরতায় ঘণ্টা দেড়েক পর আগুন আয়ত্তে আসে৷ ২০টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় আগুন বেশি দূর ছড়াতে পারেনি৷ তবে আগুনে সম্পূর্ণ জ্বলে গিয়েছে ১৮টি বাড়ি৷ ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় জল আনতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে দমকলের ফায়ার ফাইটারদের৷ আগুন নেভাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন আরেক ঝুপড়িবাসী৷ আহত হয়েছেন অনেকে৷ যদিও আগুন লাগার কারণ এখনও জানা যায়নি৷ দমকল কর্তৃপক্ষের ধারণা, গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে যাওয়ায় আগুন লেগে থাকতে পারে৷ তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ঠান্ডার রাতে আগুন পোহানো চলছিল৷ তা থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে৷ পাশেই মেট্রো রেলের কাজ চলছিল, সেখান থেকেও ফুলকি পড়ে আগুন লেগে থাকতে পারে বলে দাবি অনেকের৷ তবে নিশ্চিত করে এখনও আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি বলে খবর৷

Advertisement

পাতিপুকুর এলাকায় মেট্রো রেল ভূগর্ভে প্রবেশের সংযোগস্থল থেকে রেললাইনের ধার বরাবর সুভাষ কলোনিতে মোট ১৬০টি বাড়ি রয়েছে৷ সুভাষ কলোনির ঠিক মাঝ বরাবর ঘরগুলিতে আগুন লাগে বলে জানিয়েছে দমকল কর্তৃপক্ষ৷ সেখান থেকে দু’দিকের ঘরগুলিতে আগুন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে৷ স্থানীয় বাসিন্দা ও দমকল কর্তৃপক্ষের চেষ্টায় আগুন বেশিদূর ছড়িয়ে পড়েনি৷ সকালে মাধ্যমিক ছাত্রী প্রিয়া ও তার কাকা নিমাই অধিকারীর অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়৷ আহতদের আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷

ঘটনার পর সেখানে আসেন স্থানীয় কাউন্সিলর শান্তনু সেন৷ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর বাসিন্দাদের সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন তিনি৷ তিনি জানান, অবিলম্বে কলকাতা পুরসভার তরফে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে৷ তাঁদের খাবার, জল ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে৷ শান্তনু সেন বলেন, “এটি রেলের জায়গা৷ বিগত দিনে এই এলাকায় কোনও কাজে রেলের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি৷ আশা করব এই ঘটনার পর রেলের তরফে সহযোগিতা মিলবে৷” রেললাইন লাগোয়া এই এলাকায় আগুন লাগার কারণে প্রায় দেড় ঘণ্টা রেল চলাচল ব্যাহত হয়৷ আগুন লাগার পর নিরুপায় হয়ে রেল লাইনের পাশে আশ্রয় নেন বাসিন্দারা৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ