BREAKING NEWS

১৫ জ্যৈষ্ঠ  ১৪৩০  মঙ্গলবার ৩০ মে ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

সেরিব্রাল স্ট্রোকে মৃত বর্ধমানের যুবকের অঙ্গে নতুন জীবন পেলেন চারজন

Published by: Biswadip Dey |    Posted: May 27, 2023 12:25 pm|    Updated: May 27, 2023 12:25 pm

Four people get new life by the organ of Bardwan youth who died of cerebral stroke। Sangbad Pratidin

স্টাফ রিপোর্টার: ‘বিনা মেঘে বজ্রপাত’ বললেও কম বলা হয়। তবে সেই দুরন্ত আঘাত সয়েও উজ্জ্বল মানবিকতা ফুটে বেরোল বিদ‌্যুচ্চমকের মতো। সাতাশ বছরের তরতাজা যুবক পনেরো মাসের ছেলেকে কোলে বসিয়ে খেলা করছিলেন সকালেও। রাতে তিনি আচমকা সংজ্ঞাহীন হয়ে ঢলে পড়লেন। এমনই করাল সেরিব্রাল স্ট্রোক মস্তিষ্কে থাবা মারল যে, জ্ঞান আর ফেরেনি। ছ’দিন বাদে হাসপাতালে ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা হওয়ার পরে পরিজনরা তাঁর অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিতেও দেরি করেননি। ‘‘আমরা যা হারালাম, তা কোনওদিন ফিরে পাব না। তবে ওই অঙ্গের মাধ‌্যমেই ও বেঁচে থাকবে আমাদের কাছে।’’ পাথরচাপা বুকে জানিয়েছেন মৃতের স্ত্রী।

শুক্রবার বিকেল চারটে নাগাদ সৌমেন ভদ্রর দেহটা ফুলে ফুলে সাজিয়ে শববাহী গাড়িতে তোলা হচ্ছিল হাসপাতালের ডাক্তার থেকে স্বাস্থ‌্যকর্মী সবার চোখে জল। রোজ কতই তো মৃত্যু হয়। কিন্তু মৃত্যুর পর সৌমেনের একেকটি দেহ যেভাবে আরও কয়েকজনের জীবন ফিরিয়ে দিল তাকেই সবাই কুর্নিশ জানিয়েছে। ঘটনাটা এমন। সৌমেন ভদ্র একটি বেসরকারি ব‌্যাংকের পদস্থ আধিকারিক। বাড়ি বর্ধমানের (Bardwan) পূর্বস্থলী। আর পাঁচটা দিনের মতোই গত ১৯ তারিখ সকালে ছেলেকে আদর করে অফিস যান।

[আরও পড়ুন: ফের বড়পর্দায় মুক্তি পাচ্ছে সানি-আমিশার ‘গদর: এক প্রেম কথা’, কিন্তু কেন?]

সন্ধ‌্যায় বাড়ি ফিরে একটু রেস্ট নিয়ে গল্পগুজব করে খাওয়া-দাওয়া করেন। রাত এগারোটা নাগাদ অসম্ভব মাথার যন্ত্রণা শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে খাট থেকে পড়ে যান। সৌমেনের শ‌্যালক টুপাই দাসের কথায়, ‘‘রাত এগারোটা নাগাদ জামাইবাবুকে অ‌্যাম্বুল‌্যান্সে করে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দূরের কালনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরা দেখে জানিয়ে দেন ম‌্যাসিভ সেরিব্রাল স্ট্রোক হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অন‌্য হাসপাতালে চিকিৎসার ব‌্যবস্থা করলে ভাল হয়।’’

এরপরে আর ভাবেননি সৌমেনের বাবা মণীন্দ্র আর মা ইতি। পরদিনই সকালে সোজা কলকাতার অ‌্যাপোলো হাসপাতালে ভরতি করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসকরা দেখেই বুঝতে পারেন অবস্থা সংকটজনক। আইসিইউতে ভরতি করা হয়। টুপাইয়ের কথায়, “প্রথম থেকেই ডাক্তারবাবুরা বলেছিলেন অবস্থা ক্রমশ জটিল হচ্ছে। যেকোনও রকম পরিস্থিতির জন‌্য তৈরি থাকুন। সেটাই সত্যি হল। বৃহস্পতিবার ডাক্তারবাবুরা ডেকে বলেন, আর কোনও আশা নেই!’’ পলকের মধ্যে খবর চলে গিয়েছে পূবর্স্থলীর বাড়িতে। বাড়িতে মা ইতি, স্ত্রী অঞ্জনা আর ভাই রয়েছেন। সেখানেই সৌমেনের মা আর স্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন। সৌমেন নেই। কিন্তু ওঁর শরীরের অঙ্গ থেকে যেন আর পাঁচজন নতুন জীবন পান।

[আরও পড়ুন: ‘অন্যের সিদ্ধান্তকে সম্মান করতে শিখুন..’, দ্বিতীয় বিয়ে বিতর্কে জবাব আশিস বিদ্যার্থীর]

সেই অনুযায়ী এদিন সকাল থেকে সৌমেনের শরীর থেকে হার্ট, দু’টি কিডনি ও লিভার তুলে নেওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, দু’টি কিডনির মধ্যে একটি এসএসকেএম হাসপাতালের ২৭ বছরের এক যুবক এবং অ‌্যাপোলো হাসপাতালের ২৮ বছরের এক যুবকের দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। লিভারও প্রতিস্থাপন হয়েছে অ‌্যাপোলোর এক রোগীর দেহে। তরতাজা যুবক সৌমেনের হার্ট পেয়ে নতুন জীবন পাচ্ছেন আর এন টেগোর হাসপাতালের এক যুবক। ‘‘সৌমেন চোখের আড়ালে গিয়ে আরও চারজনকে নতুন জীবন দিয়ে গেলেন। এমনটা ক’জন পারেন?’’ বলেছেন হাসপাতালের এক চিকিৎসক।

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে