স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘ উপেক্ষার পর অবশেষে নগরমুখী। জেলা-জেলায় সফর করার পরে কালবৈশাখী হাজির হল কলকাতায়। প্রবল অস্বস্তিতে যেন খানিক উপশম। সোমবারও দক্ষিণের বিভিন্ন জেলায় ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
রবিবার সন্ধ্যায় শহরের উপর দিয়ে বয়ে যায় ঝড়৷ হাওয়া অফিস বলছে, আলিপুরে ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৫ কিলোমিটার। এদিন সন্ধ্যা ৭টা ২৭ মিনিটে আলিপুরের উপর দিয়ে ঘণ্টা ৮৫ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যায়। মুষলধার বৃষ্টির সঙ্গে ছিল ঘন ঘন বাজ পড়ার দাপট। ঝড়ে বেলগাছিয়ার মিল্ককলোনীতে গাছ উপড়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়। কালবৈশাখীর প্রভাবে প্রবল ঝড়-জল হয়েছে বীরভূম, বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন অংশ।
সন্ধ্যায় ঝড় বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলেও এদিন দিনভর গরমে নাজেহাল হয়েছেন দক্ষিণবঙ্গবাসী৷ দুপুরের পর অবশ্য আবহাওয়া ভোল বদলাতে শুরু করে৷ কীভাবে?
আলিপুরের ব্যাখ্যা, মধ্যপ্রদেশ-ছত্তিশগড়ের উপর একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। এছাড়া উত্তরবঙ্গের উপর বিস্তৃত রয়েছে নিম্নচাপ অক্ষরেখা। এই দুই প্রাকৃতিক অনুষঙ্গই ঝড় বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। দপ্তরের অধিকর্তা গণেশচন্দ্র দাস জানিয়েছেন, এদিন ছত্তিশগড়ের একটি বিশাল বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়। সেটি ঝাড়খণ্ড দিয়ে ঢুকে বীরভূম, বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া হয়ে কলকাতার দিকে ধেয়ে এসেছে। কলকাতা লাগোয়া শহরতলির বিভিন্ন অংশে ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টিও হয়েছে৷ দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, কালবৈশাখীর জন্ম হয় মূলত ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহারের মালভূমি এলাকায়৷ এসব জায়গায় একাধিক মেঘপুঞ্জ তৈরি হওয়ার পর যদি কখনও একসঙ্গে মিলে যায়, তখনই কালবৈশাখীর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর ঝাড়খণ্ডের অদূরে ছত্তিশগড়ের উপর ঘূর্ণাবর্ত অবস্থান করায় সেটি মালভূমির গরম হাওয়া জলীয় বাষ্পের মিশ্রণকে উপরে তুলে কালবৈশাখীর পরিস্থিতিকে আরও জোরালো করছে। তাঁদের কথায়, নিম্নচাপ অক্ষরেখাটির প্রভাবে জলীয় বাষ্প যেমন ঢুকছে, তেমনই ঝাড়খণ্ডের আকাশে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। সেই মেঘ উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসের ধাক্কা পেয়ে পশ্চিমের জেলাগুলি পেরিয়ে কলকাতার আকাশে ঢুকে ঝড়-বৃষ্টি ঘটিয়েছে।
রবিবার সকাল থেকেই শহরে মেঘ-রোদের লুকোচুরি ছিল। তবে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পুরুলিয়া, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া বীরভূমের বিভিন্ন অংশে ঝড়-বৃষ্টি হয়। চলতি বছর মার্চ মাস ‘শুকনো’-ই থেকেছে। কিন্তু এপ্রিলের শুরুর দিনই ঝড়-জলের মুখ দেখল কলকাতা-সহ দক্ষিণের জেলাগুলি। এবছর বৃষ্টি না হওয়ায় মাঝ মার্চ থেকে শহরের তাপমাত্রা বেড়েছে চড়চড়িয়ে। চলতি মাসেই শহরে তাপমাত্রা ছুঁয়েছিল ৩৮ ডিগ্রির পারদ। সাম্প্রতিক প্রবণতা অনুযায়ী, মার্চে কলকাতার তাপমাত্রা ৩৫-৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকার কথা। যেখানে এবার বৃষ্টিহীন মার্চের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের দু’-তিন ডিগ্রি বেশি থেকেছে। কিন্তু এদিনের বৃষ্টির পর কলকাতা-সহ আশপাশের এলাকার তাপমাত্রা এক ধাক্কায় অনেকটাই নামবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.