Advertisement
Advertisement
Kali Puja 2023

Kali Puja 2023: ধর্মপরিচয় হিন্দু না হলেও কীভাবে জুড়ল বিদেশির নাম? রইল ফিরিঙ্গি কালীমন্দিরের ইতিহাস

এই মন্দিরে কালীপুজোর সময় ভিড় হয় চোখে পড়ার মতো।

Kali Puja 2023: here is a brief history of Kolkata's Firingi Kali Temple | Sangbad Pratidin
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:November 7, 2023 2:55 pm
  • Updated:November 8, 2023 7:03 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ধর্মপরিচয় হিন্দু নয়। এমনকী ভারতের বাসিন্দাও নন। তবু তাঁর নামেই গড়ে উঠেছে কালী মন্দির (Kali Puja 2023)। শুধু তাই নয়, ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি দীর্ঘদিন ধরেই কলকাতার অন্যতম প্রসিদ্ধ এক কালীমন্দির হিসেবে পরিচিত। কিন্তু কীভাবে একজন বিদেশি সাহেবের নাম জড়াল বাংলার এই কালীমন্দিরের সঙ্গে? সেকথা জানতে গেলে চোখ রাখতে হবে কলকাতার কালী ইতিহাসের দিকে।

কথায় আছে, ‘কালী কলকেত্তায়ালি’। আর এ প্রবাদ যে কতটা সত্যি তার প্রমাণ মেলে তিলোত্তমায় পা রাখলেই। বারাণসী গেলে যেমন পথের বাঁকে দেখা মেলে শিবমন্দির, কলকাতার ক্ষেত্রে সেকথা খাটে কালীমন্দিরের ক্ষেত্রে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্রই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে একাধিক কালীমন্দির। যার মধ্যে বেশকিছু রীতিমতো প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ। বউবাজারের ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি তার মধ্যে অন্যতম। বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট আর সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের সংযোগে অবস্থিত এই মন্দির। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা পুজো দিতে ছুটে আসেন এই মন্দিরে। তবে কালীপুজোর সময় ভিড় হয় চোখে পড়ার মতো। দেবীমূর্তিটি মায়ের সিদ্ধেশ্বরী রূপের। পঞ্চমুন্ডির আসনে প্রতিষ্ঠিত মূর্তিতে নিত্যপুজো করা হয়। কথিত আছে, স্মল থেকে সেরে উঠে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন শ্রীমন্ত ডোম নামে এক ভক্ত। তবে সেইসময় থেকেই মন্দিরের সঙ্গে ফিরিঙ্গি সাহেবদের নাম জড়িয়ে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: হাই কোর্টে একের পর এক ধাক্কা! সরকারি আইনজীবী বদলাল নবান্ন]

সেকালের কলকাতা আজকের থেকে অনেকটাই আলাদা। তখন এই অঞ্চলের কাছ দিয়ে বয়ে যেত ভাগীরথী গঙ্গা। গঙ্গার পাশে গভীর জঙ্গলের মধ্যে মহাশ্মশানের ধারে ছোট্ট এক চালাঘরে কালীমূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শ্রীমন্ত। সঙ্গে শিবমন্দিরও ছিল। তবে শ্মশানে প্রতিষ্ঠা হলেও মূর্তির নাম সিদ্ধেশ্বরী। এরকম এক কলকাতায় সদ্য পা রেখেছেন জব চানর্ক। একে একে বিদেশ থেকে বহু যুবক এসে ঘাঁটি গড়ছেন এখানে। যাঁদের মধ্যে অন্যতম অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি সাহেব। কলকাতার ইতিহাসের সঙ্গে এই নামটা বিশেষভাবে জড়িয়ে। কারণ সাহেব হয়েও তাঁকে কবিগানের লড়াইয়ে হারানোর ক্ষমতা ছিল না কলকাতার তাবড় কবিয়ালদের। সেই ফিরিঙ্গি সাহেব ছিলেন প্রবল কালীভক্ত। একসময় তিনি নিয়মিত হাজির হতেন শ্রীমন্তের প্রতিষ্ঠিত সেই কালীমন্দিরে। চাতালে বসে একমনে গাইতেন মায়ের গান।

Advertisement

কথিত আছে, মাতৃভক্ত পর্তুগিজ সাহেব অ্যান্টনিকে একবার স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন স্বয়ং দেবী কালী। তাঁর আদেশ পেয়েই মন্দির সংস্কারে হাত দেন খোদ ফিরিঙ্গি সাহেব। বর্তমানে মন্দিরের আধুনিক রূপ তাঁর হাতেই তৈরি বলা চলে। তবে এই মন্দিরে স্রেফ অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি নন, পুজো দিতে হাজির হতেন বহু পর্তুগিজ সাহেবই। আর এই সবকিছু মিলিয়েই এই মন্দিরের নাম হয়ে যায় ‘ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি’। লোকমুখে মন্দিরের কথা ছড়িয়ে পড়লে, ইংরেজ সাহেবরাও এখানে পুজো দিতে শুরু করেন। শোনা যায়, সেকালে বহু ব্যবসায়ী স্রেফ ফিরিঙ্গি মায়ের পুজো দিয়েই ব্যবসায় ফুলেফেঁপে উঠেছিলেন। তালিকায় কোম্পানির সাহেব ব্যবসায়ীরাও ছিল বইকী।

[আরও পড়ুন: নরবলি থেকে শ্রীরামকৃষ্ণের উপস্থিতি, জানুন বাগবাজারের সিদ্ধেশ্বরী কালীর ইতিহাস]

অ্যান্টনি তাঁর এই আরাধ্যা দেবীকে ‘শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা ঠাকুরানি’ নামে পুজো করতেন। সেই ধারা আজও চালু রয়েছে। তবে মন্দিরের কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। দক্ষিণমুখী কালীমন্দিরটি চাঁদনি শৈলীতে নির্মিত। মাতৃমূর্তি সাধারণ কালীবিগ্রহের মতোই। তবে দেবীর দক্ষিণে একটি অষ্টধাতুর দুর্গা, একটি শিবলিঙ্গও রয়েছে। এছাড়া মন্দিরে মা শীতলা ও মনসারও মূর্তি দেখা যায়। বর্তমানে মন্দিরের সেবায়েতরা ব্যানার্জি উপাধিধারী। প্রতিদিন মিষ্টি আর ফল দিয়ে পুজো হলেও মাসে দু’বার করে হয় অন্নভোগ। এছাড়া প্রতিমাসের অমাবস্যায় বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা থাকে। আবার পূর্ণিমায় হয় নারায়ণ পুজো। তবে কার্তিক অমাবস্যাতেই মন্দিরের বার্ষিক উৎসব হয় বলা চলে। সারাদিন ধরে চলে মায়ের পুজোপাঠ, আরাধনা। সেইসঙ্গে ঘুরে ফিরে আসে ফিরিঙ্গি সাহেবদের মন্দিরে পুজো দেওয়ার স্মৃতি।

দেখুন ভিডিও:

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ