সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: ‘আরে ব্যানার্জি নয়, মুখার্জি নয়, চ্যাটার্জি নয়, গাঙ্গুলি। নাম আমার কিশোরকুমার গাঙ্গুলি।‘ কিশোর কুমার। নামই যথেষ্ট বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমার গানকে ব্যাখ্যা করার জন্য। এই প্রবাদপ্রতিম শিল্পীকে এবার ভারতরত্ন উপাধিতে ভূষিত করার জোরালো দাবি উঠল বাংলায়। এই দাবি তুলেই এবার কলকাতা থেকে ‘কিশোর রথ’ বের করতে চলেছে সালকিয়া কিশোর কুমার মেমোরিয়াল কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন।
কলকাতা থেকে বেরিয়ে সারা দেশ প্রদক্ষিণ করবে এই রথ। কিংবদন্তির ভারতরত্নের দাবিতে চলবে দেশজুড়ে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান। এরপর ‘কিশোর রথ’ গিয়ে পৌঁছবে দিল্লির যন্তরমন্তরে। কিশোর কুমারকে ভারতরত্ন দেওয়ার দাবিতে সেখানে ধরনায় বসবেন শিল্পীর অনুগামীরা। ধরনার পর ভারতরত্নের দাবিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁদের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে কিশোরকুমারকে স্মরণীয় করে রাখতে শিল্পীর ৩০টি জনপ্রিয় হিন্দি গান বাংলায় অ্যালবাম করা হবে। তাতে গান গাইবেন কুমার শানু, অভিজিৎ, শান, বিনোদ রাঠোর, গৌতম ঘোষ, তরুণ সরকার, শিল্পীপুত্র অমিত কুমার, অমিত গঙ্গোপাধ্যায়, সংযুক্তা দে এবং মন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লাও। এর জন্য ইতিমধ্যেই রেওয়াজ শুরু করে দিয়েছেন লক্ষ্মী। হিন্দি গানকে বাংলায় রচনা করেছেন গীতিকার-সুরকার তপনকুমার দেবনাথ। তিনি রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সচিব বিবেক কুমারের জন্যও গান রচনা করছেন।
[বেআইনি নির্মাণের অভিযোগে অমিতাভকে নোটিস বিএমসি-র]
হাওড়ার ‘সালকিয়া কিশোর কুমার মেমোরিয়াল কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর চিফ প্যাট্রন হলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ রায় ও লক্ষ্মীরতন শুক্লা। মন্ত্রী অরূপ রায় জানান, ‘কিশোর কুমারের মতো এত বড় মাপের শিল্পীকে ভারতরত্ন দেওয়ার যে দাবি সালকিয়ার কিশোর কুমার মেমোরিয়াল কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন তুলেছে, তা অত্যন্ত ন্যায্য। এতদিন পর্যন্ত এই সম্মান শিল্পীকে কেন দেওয়া হয়নি, সেটাই আমাদের কাছে লজ্জার। আমি এই দাবিতে ব্যক্তিগতভাবে অ্যাসোসিয়েশনের পাশে আছি।‘ মন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লা জানান, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রথম থেকেই অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে রয়েছি। কিশোরদার জন্য যা-যা কর্মসূচি নেওয়া যায় তা নেব।’
ভারতরত্নের দাবিতে আগামী ৮ নভেম্বর ধর্মতলা থেকে ‘কিশোর রথ’ বের করবে সালকিয়া কিশোর কুমার মেমোরিয়াল কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম সদস্য তথা গীতিকার-সুরকার তপনকুমার দেবনাথ জানান, ‘কলকাতা থেকে বেরিয়ে এই রথ দেশের ২০টি রাজ্য প্রদক্ষিণ করবে। তার মধ্যেই এই রথ যাবে মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়ায় কিশোর কুমারের জন্মভিটেতে। এই বাড়িকে বর্তমানে হেরিটেজ হিসাবে ঘোষণা করেছে মধ্যপ্রদেশ সরকার। উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের দাবি তুলে আমাদের প্রতিনিধিরা মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ডেপুটেশন দেবেন।’
[‘যত্রতত্র জাতীয় সংগীত বাজিয়ে দেশপ্রেম প্রমাণের জোর করার দরকার নেই’]
২০টি রাজ্য ঘুরে ‘কিশোর রথ’ আগামী ২৫ নভেম্বর গিয়ে পৌঁছবে দিল্লিতে। সেখানেই ধরনা ও ডেপুটেশন। তপনকুমার দেবনাথ জানান, ‘ইতিমধ্যেই আমরা ভারতরত্নের দাবিতে কিশোর কুমারের ভাগ্নে বাপি লাহিড়ীর মাধ্যমে রাজ্যসভায় ডেপুটেশন দিয়েছি। ‘কিশোর রথ’-এর পর শিল্পীকে স্মরণীয় করে রাখতে তাঁর গাওয়া ৩০টি জনপ্রিয় হিন্দি গানকে বাংলায় রূপান্তরিত করে দু’টি অ্যালবাম করা হবে। রেকর্ডিংয়ের পর সিডি পৌঁছে যাবে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও অসম, মণিপুর, ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, লন্ডন ও আমেরিকার বাজারেও। ভারতরত্নের দাবিতে অ্যালবামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও বক্তব্য থাকছে।’