অভিরূপ দাস: সচেতনতা শূন্য। আতঙ্ক ষোলোআনা। এবং তা পুরোটাই অমূলক। অহেতুক ভয়ের কারণেই দাঁড়াতে চাইছে না অটো, ট্যাক্সি। এমনকী সরকারি বাসও স্টপেজ দিচ্ছে না এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালের সামনে। তার জেরেই কিডনি বিকল হওয়া রোগীকে টানা দু’কিলোমিটার হাঁটতে হল।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোভিড রোগী। আর তাই সরকারি বাসের কন্ডাক্টরও বলছে, “পাগল নাকি, এখানে স্টপেজ দেব?” হাসপাতালের সামনে স্টপেজ থাকলেও অনেকটা দূরে নামানো হচ্ছে রোগীদের। সোমবার প্রায় দু’কিলোমিটার হেঁটে হাসপাতালে পৌঁছতে হয়েছে গড়িয়ার বোরালের বাসিন্দা বছর বাষট্টির রাজেন সমাদ্দারকে। রাজেনবাবুর একটি কিডনি বিকল। ডায়ালিসিস চলাকালীন দুটি চোখেরই দৃষ্টি চলে গিয়েছে। সপ্তাহে তিনদিন তাঁকে ডায়ালিসিস করাতে যেতে হয় এমআর বাঙ্গুরে (MR Bangur)। কিন্তু সে যাওয়াটাই যে প্রাণান্তকর! রাজেনবাবুর ছেলে অরূপ সমাদ্দার জানিয়েছেন, সপ্তাহে তিনদিন বাবার ডায়ালিসিসের প্রয়োজন হয়। কিন্তু হাতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় বেশি নিয়ে বেরতে হচ্ছে। তাঁদের গড়িয়ার বাড়ি থেকে এমআর বাঙ্গুর মেরেকেটে মিনিট তিরিশের পথ। অরূপের কথায়, “সে পথই পেরতে লেগে যায় দু’ঘণ্টা।” কারণ?
“এমআর বাঙ্গুর যাব”, এমনটা শুনলেই ঘাড় ঘোরান অধিকাংশ অটো-ট্যাক্সি চালক। যাও বা কেউ কেউ যেতে রাজি হন, তাঁরা আবার তিনগুণ ভাড়া দাবি করেন। যদিও টাকা দিয়েও নিস্তার নেই। “কোনও অটো, ট্যাক্সি চালক হাসপাতালের সামনে দাঁড়াতে রাজি হন না। সবাই বলেন, হয় আগে নেমে যান, নয়তো হাসপাতাল পেরিয়ে নামাব।” চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সংক্রমণের এ ভয় ষোলোআনা অমলূক। ডায়ালিসিস করে এমআর বাঙ্গুর থেকে বেরিয়েও আরেক বিপত্তি। হাসপাতালের পাশের অটো স্ট্যান্ড পাততারি গুটিয়েছে। চলে গিয়েছে অনেকটা দূরে। প্রৌঢ় রাজেনবাবুর আকুতি, “দুটো চোখে দেখতে পাই না। অনেক অনুরোধ করি ট্যাক্সি চালকদের। কিন্তু কেউই কোভিডের ভয়ে হাসপাতালের ত্রিসীমানায় দাড়ায় না। অনেক দূরে গিয়ে নামায়। সরকারি বাসই স্টপেজ দিচ্ছে না।” সপ্তাহে তিনদিন ডায়ালিসিস নিতে এমআর বাঙ্গুরের নতুন বিল্ডিংয়ে আসেন রাজেনবাবু। কিডনি কাজ করে না। ডায়ালিসিসই ভরসা।
করোনা (Coronavirus) নিয়ে সন্দেহ সংশয় কাটাতে শহরে একজোট হয়েছেন কোভিডজয়ী এবং চিকিৎসকরা। তৈরি হয়েছে ফোরাম, যার নাম ‘কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক’। ফোরামের পক্ষ থেকে ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের সামাজিক হেনস্তার মুখে পড়তে হচ্ছে। এখন কোনও হাসপাতালে কোভিড রোগী থাকলে তার আশপাশে যেতে চাইছেন না অটো, ট্যাক্সি চালকরা। মুমূর্ষুদের হাঁটতে হচ্ছে। এই ঘটনা অত্যন্ত অমানবিক। তাঁর কথায়, “ঘৃণা দিয়ে নয়, দায়িত্বের সঙ্গে কোভিড মোকাবিলা করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তিনটে পিলারের মধ্যে একটা হল কমিউনিটি এম্পাওয়ারমেন্ট। অর্থাৎ মানুষ মানুষকে বাঁচাতে পারে। কোনও মানুষ অসুবিধায় পড়লে তাঁর পাশে দাঁড়ান। হাসপাতালের সামনে গেলে করোনা ছড়ায় না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.