অর্ণব আইচ ও গৌতম ব্রহ্ম: মরা মানুষকে বাঁচানোর ফর্মুলা জেনে ফেলেছিলেন তিনি! কিন্তু, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঠেকাতেই নিজের মৃত মা-কে বাঁচাননি বেহালার শুভব্রত মজুমদার! একথা শোনার পরই মনোবিদরা নিশ্চিত হয়ে যান, বেহালার ঘোলসাপুরের ওই যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে শুধু কথাবার্তাই নয়, এসএসকেএম হাসপাতালে শুভব্রত মানসিক স্থিতিও পরীক্ষা করে দেখেন মনোবিদরা। এসএসকেএম-র ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি-র চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত শুভব্রত। সবসময়ই কল্পনার জগতের বিচরণ করেন। অদৃশ্য মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন। বাস্তব জগতের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই। জানা গিয়েছে, মনোবিদদের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর ইংরেজিতে দিয়েছেন শুভব্রত। উচ্চারণ ছিল রাশিয়ানদের মতো। তাঁকে পাভলভ মানসিক হাসপাতালে ভরতি করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
[মা ফিরে আসবেন, বিশ্বাসে ৩ বছর মৃতদেহ ফ্রিজে ‘মমি’ করে রাখল ছেলে]
বেহালার ঘোলসাপুরে বাবা-মায়ের সঙ্গে খাকতেন শুভব্রত মজুমদার। বাবা-মা দু’জনেই রাজ্য সরকারের খাদ্য সরবরাহ নিগম বা এফসিআইয়ে চাকরি করতেন। তাঁদের একমাত্র সন্তান শুভব্রত নিজেও উচ্চশিক্ষিত। লেদার টেকনোলজি পড়াশোনা করেছেন তিনি। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বেসরকারি সংস্থার মোটা বেতনের চাকরি করতেন শুভব্রত। পরে অবশ্য সে চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। ২০১৫ সালে মারা মারা যান শুভব্রতের মা বীণাদেবী। তিন বছর ধরে মায়ের দেহ আগলে রাখে ছেলে। তবে কাঁচা হাতের কাজ নয়, রীতিমতো ফ্রিজারে ‘মমিফাইড’ সেই দেহ। বৃহস্পতিবার দেহ উদ্ধারের পর রীতিমতো তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন লালবাজারে দুঁদে গোয়েন্দারাও। শুভব্রত কি নিছকই একজন অপরাধী নাকি মানসিক ভারসাম্যহীন? ধন্দে পড়ে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা।
[পেনশন না ভালবাসা! কিসের টানে তিন বছর মায়ের দেহ আগলে রাখলেন শুভব্রত?]
শুক্রবার শুভব্রত মজুমদারকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। তাঁকে পরীক্ষা করেন ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি-র ডিরেক্টর প্রদীপ সাহার নেতৃত্বে একদল মনোবিদ। শুভব্রত মজুমদার জানিয়েছেন, রাশিয়া ও জার্মানিতে নাকি মরা মানুষকে বাঁচিয়ে তোলা নিয়ে গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানীদের কথোপকথনে আড়ি পেতে সেই ফর্মুলা রপ্ত করে ফেলেছেন তিনি। তাহলে নিজের মৃত মাকে বাঁচিয়ে তুললেন না কেন? বেহালার ঘোলসাপুরের ওই যুবকের দাবি, ওই ফর্মুলা প্রয়োগ করে মাকে বাঁচিয়ে তুলতেই পারতেন। কিন্তু, তাহলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যেত! এসএসকেএম-র মনোবিদরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই স্কিৎজোফ্রেনিয়া নামে একটি জটিল মানসিক রোগে ভুগছেন শুভব্রত। তিনি পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন। শুক্রবার শুভব্রত আদালতে পেশ করে পুলিশ। গোটা বিষয়টি আদালতে জানানো হয়। শুভব্রতকে পাভলভ মানসিক হাসপাতালে ভরতি করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। তদন্তে জানা গিয়েছে, মৃত মায়ের লাইফ সার্টিফিকেট দেখিয়ে তিন বছর পেনশনও তুলেছেন শুভব্রত। কীভাবে এটা সম্ভব হল? তা জানতে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তদন্তকারীরা। বৃহস্পতিবার রাতভর জেরা করা হয় শুভব্রতের বাবাকে। তবে তেমন কিছু জানা যায়নি বলে খবর। ওই বৃদ্ধকে অবশ্য এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি।
[লাগামছাড়া ফি নিয়ে অসন্তোষ চরমে, শহরের ২ স্কুলে তুমুল বিক্ষোভ অভিভাবকদের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.