অর্ণব আইচ: দেওয়াল ভরতি ম্যাসাজ পার্লারের বিজ্ঞাপন। সুন্দরীদের হাতছানি। স্পা অথবা পার্লারে গেলে ‘সযত্নে’ শরীরে ম্যাসাজ করা হয়। বিজ্ঞাপনের পোস্টারের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এক নারী ম্যাসাজ করছেন এক পুরুষকে। নিচে দেওয়া কয়েকটি ফোন নম্বর। সেই নম্বরগুলির মধ্যে কয়েকটি কাজ করে, কয়েকটি আবার করেও না।
বিজ্ঞাপনের বহর দেখে সন্দেহ হয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশের। তাই সেই মোবাইল নম্বরগুলির সূত্র ধরেই শুরু করেন তদন্ত। স্পা অথবা ম্যাসাজ পার্লারে খদ্দেরের ছদ্মবেশেই হানা দেন গোয়েন্দারা। তদন্তের জাল গোটানোর আগেই গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন যে, কলকাতার বেশ কয়েকটি জায়গায় ম্যাসাজ পার্লারের আড়ালে রমরমিয়ে চলছে মধুচক্র ও যৌন ব্যবসা। কিন্তু একটি ম্যাসাজ পার্লারে তল্লাশি শুরু হলে যে সেই খবর পৌঁছে যেতে পারে অন্য পার্লারে। পালিয়ে যেতে পারে অভিযুক্তরা। তাই শনিবার রাতে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ ও স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) আধিকারিকরা একসঙ্গে তল্লাশি চালান কলকাতার চারটি ও বাগুইআটির একটি ম্যাসাজ পার্লারে। মোট ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ে অনেকে। ধৃতদের মধ্যে ৩৬ জন মহিলা। তাদের কেউ বা যৌনকর্মী, কেউ বা মধুচক্র তথা ম্যাসাজ পার্লারের মাথা। বিভিন্ন বয়সের যৌনকর্মীদের কারও বাড়ি শহরে, কারও বা শহরতলিতে। তাদের মধ্যে অনেকেই চাকরি করার নাম করে বাড়ি থেকে বের হয়। আবার কেউ পড়াশোনার নাম করেও। আর ১৮ জন পুরুষের মধ্যে কেউ ম্যানেজার, কেউ খদ্দের। পার্লারে খদ্দের নিয়ে আসার জন্য দালালের কাজ করে অনেকে।
[অব্যাহতি সিপি জোশীকে, বাংলায় কংগ্রেসের পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে এবার গৌরব গগৈ]
পুলিশ জানিয়েছে, টালিগঞ্জ থানা এলাকার শরৎ বসু রোডের একটি ‘ফ্যামিলি স্পা’ থেকে ধরা পড়েছে ৮ মহিলা ও দু’জন পুরুষ। লেক থানা এলাকার যোধপুর পার্কের একটি আবাসনের মধ্যে পার্লার থেকে গ্রেপ্তার হয় চার মহিলা ও চার পুরুষ। গড়িয়াহাটের ডোভার লেনের একটি বাড়ির তিনতলায় চলা পার্লার থেকে ধরা পড়ে ৯ জন মহিলা ও ৬ জন পুরুষ। কসবার শান্তিপল্লির একটি বাড়ির তিনতলা থেকে গ্রেপ্তার হয় ৯ জন মহিলা ও ৫ জন পুরুষ। ধৃতদের জেরা করা বাগুইআটি বাজার এলাকার একটি বাড়ির দোতলায় চলা পার্লার ও স্পা-তে চালানো হয় তল্লাশি। সেখান থেকে পাঁচজন মহিলা ও তিনজন পুরুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। জানা গিয়েছে, খদ্দেররা ওই ফোনের ফাঁদে পা দিলেই তাঁদের ডেকে নিয়ে আসা হত ওই পার্লার বা স্পা-তে। হাতে ধরিয়ে দেওয়া হত ‘রেট চার্ট’। কোন স্পা বা ম্যাসাজের কী ‘রেট’, তাও জানিয়ে দেওয়া হত। মধুচক্রের আসরে থাকা যৌনকর্মীকে পছন্দের পর আলাদা কিউবিকলে পাঠানো হত যুগলকে। শহরে আরও কয়েকটি পার্লার ও স্পার উপর নজরদারি রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।