সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রান্তিক যৌনতা এই সেদিনও তেমন স্বীকৃত ছিল না। সাধারণ সমাজেও অনেকটাই উপেক্ষিত ছিলেন ভিন্ন যৌনতার মানুষরা। বৈষম্য কাম্য ছিল না, তবুও ছিল। সে আঁধার কাটাতেই হাতে হাত ধরে পথে নেমেছিলেন সকলে। অনুভূতির সাত রঙে মিলমিশে গিয়ে সমাজের আকাশে ফুটেছিল একতার রামধনু। আর সে মিছিলের নাম হয়েছিল ‘কলকাতা রেনবো প্রাইড ওয়াক’। দেখতে দেখতে ষোড়শ বর্ষে পা দিল এই অনুষ্ঠান। ১০ ডিসেম্বর শহরে হয়ে গেল এবারের রামধুন রঙে এক হওয়ার মিছিল।
[ হ্যাকারের দখলে হোয়াটসঅ্যাপ, অশ্লীল মেসেজ নিয়ে বিভ্রান্ত যুবক ]
যে সময় এই প্রাইড ওয়াক শুরু হয়, তখনও প্রান্তিক যৌনতা যেন কাব্যে উপেক্ষিত। ১৯৯৯ সালে প্রথম এই হাত-ধরাধরি করে অধিকার বুঝে নেওয়ার মিছিল নামে রাস্তায়। তখন এর নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ফ্রেন্ডশিপ ওয়াক’। কেন বেছে নেওয়া হয়েছিল তিলোত্তমাকে? বাছা হয়েছিল তার ঐতিহ্যের কারণে। আন্দোলনের শহর, মানবাধিকার থেকে রাজনৈতিক অধিকার বুঝে নেওয়ার এমন সুদীর্ঘ ইতিহাস আর কার আছে! সুতরাং প্রান্তিক যৌনতার মানুষরা এই ভূমিতেই তাঁদের অধিকার বুঝে নিতে চেয়েছিলেন। তবে পথ মসৃণ ছিল না তা বলাই বাহুল্য। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের যেমন সমানাধিকার প্রত্যাশিত, তেমনই তা যৌনতা নির্বিশেষেও কাম্য। এই ছিল পথে নামার উদ্দেশ্য। বৈষম্যের অন্ধকারে সহজে আলো ফোটেনি। তবে এই মিছিল বন্ধ হয়নি। দিনে দিনে তা আরও সংগঠিত হয়।
[ কৃত্রিম পায়ে ভর করেই রাজপথে ফেরার স্বপ্ন ট্রাফিক সার্জেন্ট সুদীপের ]
এদিকে সময় বদলায়। ধীরে ধীরে প্রান্তিক যৌনতা আর ততোধিক প্রান্তিক থাকে না। ক্রমশ তা মূলস্রোতের অঙ্গীভূত হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালত দেয় ঐতিহাসিক ‘নালসা ভার্ডিক্ট’। সেখানে প্রান্তিক যৌনতার মানুষদের নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত হয়। এখনও এ আন্দোলনের সামনে বহুবিধ বাধা আছে। সমস্যা আছে। কিন্তু তাঁদের মন্ত্র, ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু, বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে…’। অতএব এবছরও কলকাতার রাস্তা সেজে উঠল রামধনু রঙে। গে-বাইসেক্সুয়াল-লেসবিয়ান-ট্রান্সজেন্ডাররা হাতে হাত রেখে এবারও পথে নামলেন অধিকার বুঝে নেওয়া প্রখর দাবিতে।
[ মাদকচক্রের পর্দাফাঁস, রেভ পার্টির আগে পার্ক স্ট্রিটের নাইটক্লাবের ডিজে-সহ ধৃত ৩ ]
প্রিয়া সিনেমার পাশের গলি থেকে শুরু হয় মিছিল। বহু মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে খোলতাই হয় রামধুনর রং। সাতরঙের বিভাজন। তবু তো রামধুন এক। এই প্রতীকী বার্তাই মিছিলের ইউএসপি। মিছিল ক্রমে এগোয় পার্ক সার্কাস ময়দানের দিকে। গন্তব্য ছিল সেখানেই। অবশ্য এ মিছিলের গন্তব্য কোনও স্থানে থেমে থাকে না। এগোয় সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার দিকে। যেখানে একদিন প্রান্তিক শব্দ মুছে যাওয়ার প্রত্যাশা জেগে থাকে। জেগে তাকে বর্ণ-ধর্ম-যৌনতা নির্বিশেষে মানুষের এক অধিকারের মাইলস্টোন।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.