শৌনক চক্রবর্তী: গল্প হলেও সত্যির মতোই ব্যাপার। শীতের সকালে মিঠে রোদ গায়ে নিয়েই বনভোজন সারলেন গোপালরা। পিকনিক ভেনুতে যে সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়াল ৯১-এ। দমদম স্টেশনের গায়েই দমদম এমসি গার্ডেনের কালীবাড়ি রোড। ওই জায়গায় প্রায় ১৮৪টি পরিবারের বাস। যাদের মধ্যে ৯১টি বাড়ির গোপাল ঠাকুর সিংহাসন ছেড়ে হাজির হয়েছিলেন বনভোজনে। কেউ এসেছে কোলে চেপে, কেউ আবার মাথায় করে। মাঝারি সাইজের মঞ্চের উপর পাঁচ থাকে সবাইকে জায়গা করে দেওয়া হয়েছিল। এবং অতিথি গোপালদের নিয়েই এলাকার মানুষ ব্যস্ত থাকলেন দিনভর। খোল বাজল, কীর্তন ধ্বনিতে এবং গোল করে প্রায় সাড়ে তিনশো-চারশো মানুষের দু’হাত তুলে নাচ যেন কোনও অংশে বৃন্দাবনের থেকে কম নয়। উজ্জ্বল সংঘ ময়দানে অনুষ্ঠানটি হয়েছে।
৯১ গোপাল। এবং তাদের প্রত্যেকের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। প্রত্যেকের জন্য মোটা রজনী, গাঁদার ফুলের মালা তো ছিলই, সঙ্গে মাথা পিছু বেশ কিছু ক্যাডবেরি, চার-পাঁচরকমের লজেন্স, ফল। ভোগেরও এলাহি আয়োজন। ৫০কিলো চাল লেগেছে। যা দিয়ে পোলাও, খিচুড়ি হয়েছে। ১০ লিটার দুধে ২৫০ চাল সহযোগে পায়েস। তালিকা থেকে বাদ পড়েনি নতুন গুড় ও নতুন চাল। সেই তালিকা বেড়ে গেল ফুলকপির তরকারি, লুচি, সুজি, আলুর দম, চাটনি, পাঁপড়, ক্ষীর, স্বর, মাখন, মালপোয়া, পাটিসাপ্টা, রসগোল্লা এবং আরও অনেক কিছুর সংযোগে।
দমদমের এই অভিনব পিকনিকের প্রধান উদ্যোক্তা বছর তেইশের অভিষেক পোদ্দার। এমএমসি কলেজ থেকে অ্যাকাউন্টেন্সিতে অনার্স নিয়ে পাস করেছেন তিনি। ছোটবেলায় বাকিরা যখন খেলাধুলো করতে ব্যস্ত থাকত, তিনি তখন পুজো, মন্ত্রোচ্চারণে মশগুল থাকতেন। তিনি এখন নিজেই মানছেন, আধ্যাত্মিক ব্যাপারটা রক্তে মিশে গিয়েছে। কিন্তু এমন গোপালের বনভোজন আয়োজনের কারণ? অভিষেক বলছিলেন, “আমি গোপালকে নিজের মতো করে দেখেছি। সবারই তো বনভোজনের ইচ্ছা হয়। আর গোপাল তো ছোট। ওর তো আরও বেশি করে ইচ্ছা করে। তাই ১০০ গোপালের বনভোজনের আয়োজন করেছিলাম। এসেছে ৯১ জন।” তিনি জানালেন, গত বছরই এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন তিনি শুরু করেছেন। সেবার মোট ৪৬ জন গোপাল মিলে বনভোজন সেরেছিল।
[ মেট্রোয় মত্ত যুবককে নিয়ে বিড়ম্বনায় মহিলা যাত্রীরা, নিরাপত্তা নিয়ে উঠল প্রশ্ন]
কিন্তু এত গোপালকে সামলানোর ঝক্কিও তো কম নয়। হাসিমুখেই অভিষেক জানালেন, এক বাড়ির গোপাল আর এক বাড়িতে চলে গেলে সেটা লজ্জার ব্যাপার। তাই তিনি কুপন তৈরি করে প্রতি গোপালের জামায় আটকে দিয়েছেন। বাড়ি ফেরার সময় যাতে কোনও বাড়ির গোপালেরই পথ চিনতে সমস্যা না হয়।দমদম তো বটেই, কলকাতার কোথাও এমন ঘটা করে গোপালের বনভোজন পালন হয়েছে বলে কেউ মনে করতে পারলেন না। ইতিহাস বলে প্রকটকালে ১৭ পৌষ না কি গোপাল বৃন্দাবনে বনভোজন করেছিল। সেই মতো, সেই নির্দিষ্ট তারিখেই কালীবাড়ি রোডের পাশে গোপালরা ব্যস্ত থাকল সারাদিন। সন্ধ্যাবেলা ভোজন শেষে কোলে চেপে বা মাথায় বসে বাড়িও ফিরল তারা।
দেখুন ভিডিও: