সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কথায় বলে, স্যাঁকরার ঠুকঠাক, কামারের এক ঘা! রাজ্য জুড়ে ৫৮ হাজার বুথে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্ব শেষ হওয়ার পরই বিরোধীদের নিশানা করে যাবতীয় বিতর্কের জবাব যেন দিয়ে গেলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রেস ক্লাবে বুদ্ধিজীবীদের বৈঠক থেকে শুরু করে শাসনে তৃণমূল নেতা খুন- যাবতীয় প্রসঙ্গে আজ অকপট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুদ্ধিজীবীরা তৃণমূলের ভোট মেশিনারি প্রশ্ন তুলে দেন আজ। উত্তরে নবান্নে দাঁড়িয়ে মমতা বলে দিলেন, ‘বুদ্ধিজীবীরা প্রাক্তন এসইউসিআই সাংসদ তরুণ মণ্ডলের গাড়ি করে প্রেস ক্লাবে গিয়েছিলেন। আপনার খোঁজ নিন। ফুটেজ দেখুন।’ শাসকদল বাধা দিলে বিরোধীরা সবমিলিয়ে প্রায় ৯০ হাজার মনোনয়ন জমা দিল কী করে, প্রশ্ন তুলে দেন দেন মমতা।
[পঞ্চায়েতে অশান্তি নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ বুদ্ধিজীবীদের, দলের মুখরক্ষায় আসরে পার্থ]
বুধবার প্রেস ক্লাবে একদা তৃণমূলপন্থী বিদ্বজ্জনরা তোপ দাগেন, রাজ্যে গণতন্ত্র বিপন্ন। পঞ্চায়েত ভোটে বেলাগাম সন্ত্রাস চালাচ্ছে শাসক দল। ওই বৈঠকের খানিকক্ষণ পর প্রেস ক্লাব থেকেই সাংবাদিক নিগ্রহের অভিযোগে মিছিল বের হয়। সে প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘আলিপুর তো আমার জায়গা। আমি পুলিশকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কী হয়েছে ভাই ওখানে। ওরা আমাদের বলল, দিদি কিছুই হয়নি বিশ্বাস করুন।’ এরপর চিরাচরিত ভঙ্গিতে মমতার সোজাসাপটা বক্তব্য, ‘একাংশের মিডিয়া সেনসেশন তৈরি করতে এসব খবর প্রচার করছে। আই অ্যাম ভেরি সরি টু সে। আপনারা পারলে আমার বক্তব্য দেখান টিভিতে। মানুষ সত্যিটা জানুক।’ রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান নির্দিষ্ট একটি সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে সরব হয়ে বলেন, ‘বলতে বাধ্য হচ্ছি, কিছু জায়গায় সাংবাদিকরা সাজিয়ে ছবি তুলছেন।’
[বদলেছে ‘পরিবর্তনের মুখ’! পঞ্চায়েতে অশান্তি নিয়ে সরব বুদ্ধিজীবীদের একাংশ]
পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীরা যে গেল গেল রব তুলেছেন, সে প্রসঙ্গও আজ এড়িয়ে যাননি মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নে দাঁড়িয়ে পঞ্চায়েত দপ্তরকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে বলেন, ‘গোটা রাজ্যে প্রায় ৫৮ হাজার বুথ রয়েছে। কত জায়গায় অশান্তি হয়েছে বলতে পারেন? সবমিলিয়ে সাতটি ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে সন্দেশখালিতে আমাদেরই দলের কর্মী গুলি খেয়েছে। আজও শাসনে আমাদের এক ভাই মারা গিয়েছেন। উত্তর দিনাজপুরে আমার পার্টির সিনিয়র নেতাকে নিগ্রহ করা হয়েছে।’ মহম্মদবাজারের অশান্তি বিজেপির তৈরি করা বলেও আজ বিরোধীদের নিশানা করেন নেত্রী। সেই সঙ্গে সিপিএম-কংগ্রেস ও বিজেপি একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে তৃণমূলকে হারানোর খেলায় মেতেছে বলে অভিযোগ মমতার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সিপিএমের তো লজ্জা হওয়া উচিত। কংগ্রেসই বা কি করে আজ বিজেপি হয়ে গেল? কেন্দ্রে ওরা বিজেপির বিরুদ্ধে, আর এখানে ভাই-ভাই? তিনটে একেবারে জগাই-মাধাই-বিদায় হয়েছে!’
বামেদেরও এদিন ছেড়ে কথা বলেননি মমতা। আগামী ১৩ এপ্রিল রাজ্যে বামেদের ডাকা ধর্মঘট হবে না বলে এদিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলাতে আর কর্মনাশা বনধ সংস্কৃতি তিনি ফিরিয়ে আনতে দেবেন না, স্পষ্ট করে দেন তিনি। বলেন, ‘১৩ এপ্রিল বাস, ট্যাক্সি সব চলবে।’