Advertisement
Advertisement

শপথের মঞ্চ থেকেই তৃতীয় বিকল্পের মহড়া

নির্বাচনী প্রচারে তিনি বলেছিলেন, আমাদের এবার ভাল করে জেতান৷

Mamata Banerjee oath taking ceremony
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:May 23, 2016 9:21 am
  • Updated:May 23, 2016 9:21 am

কিংশুক প্রামাণিক: নির্বাচনী প্রচারে তিনি বলেছিলেন, আমাদের এবার ভাল করে জেতান৷ তৃণমূল যত বেশি আসন পাবে, আগামীদিনে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে আমাদের তত লাভ হবে৷ কারণ, বাংলা জয়ের পর আমাদের লক্ষ্য হবে দিল্লি দখল৷

শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক সন্ত্রাসের’ অভিযাগ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেছিলেন, বেঁচে যদি থাকি এর বদলা আমরা রাজনৈতিকভাবেই নেব৷ বাংলা থেকেই শুরু হবে দিল্লি দখল অভিযান৷ দরকারে সারা দেশ ঘুরব৷

Advertisement

আগামী ২৭ মে ২০১৬৷ দিনটা মনে রাখুন৷ দু’ বছর আগে দিল্লিতে এই দিনই নতুন সরকার বসেছিল৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নপূরণের দৌড়টা রেড রোড থেকে শুরু হচ্ছে ওই দিনই৷ শপথ গ্রহণের দিন তৃণমূল সরকারের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু৷ কিন্তু বাস্তবে রেড রোডের মঞ্চে হচেছ সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মমতাকে সামনে রেখে তৃতীয় বিকল্প গড়ার কাজটি৷

Advertisement

স্বাভাবিকভাবেই রেড রোডের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বর্ণাঢ্য রূপ নিচ্ছে৷ মঞ্চ তৈরি হচ্ছে ফোর্ট উইলিয়মের গেটের দিকে৷ অর্থাত্‍ সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তির দিকে মুখ করে৷ আসলে নেতাজির দিকে তাকিয়েই এবার শপথ নিতে চান মমতা৷ শপথের মন্ত্রগুপ্তি এবার আসলে ‘দিল্লি চলো’৷ মঞ্চ সাজানো হচ্ছে বঙ্গসংস্কৃতিকে মাথায় রেখে৷ সামনে ২৫ হাজার চেয়ার৷ আশপাশের ময়দান, র‍্যামপার্টের সীমান্ত মেলালে লক্ষ মানুষের আয়োজন৷ বৃষ্টি হলে হোক, কোনও ছাউনি থাকছে না, হলে সবাই ভিজবে৷ এটাই মত নেত্রীর৷ কারণ, কুড়ি বছর আগে ১৯৯৭ সালের ৯ আগস্ট এই নেতাজির দিকে মুখ করেই হয়েছিল মমতার ‘আউটডোর’ সমাবেশ৷ ‘ইনডোর’-এর দিকে তাকিয়ে সেদিনই মমতা কার্যত নতুন দল তৃণমূল কংগ্রেস গঠনের কথা ঘোষণা করেছিলেন৷ তবে সেই মঞ্চ ছিল নেতাজি মূর্তির কাছে মেয়ো রোডের মুখে৷ এবার অবশ্য একেবারে মহামেডান ক্লাব ছাড়িয়ে ফোর্ট উইলিয়মের গেটের কাছে৷ কীভাবে মঞ্চ তৈরি করতে হবে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবনা মুখ্যমন্ত্রীর৷ সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা হচ্ছে৷ অনেকেই বলেছিলেন, শপথ হোক নেতাজি ইনডোরে, অথবা বৃষ্টি এড়িয়ে ঘেরা কোনও জায়গায়৷ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী রাজি হননি৷ বহু মানুষ তাঁর কাছে আবেদন করেছেন, তাঁরা শপথ দেখতে চান৷ সেজন্যই ঐতিহাসিক রেড রোড৷

বাংলায় বিশাল জয়ের পর মমতাকে প্রধানমন্ত্রী প্রোজেক্ট করে তৃতীয় ফ্রণ্ট বা ফেডারেল ফ্রণ্ট গঠনের প্রস্তাব উঠতে শুরু করেছে৷ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের গাম্ভীর্য ও জাঁকজমক এবং অতিথি তালিকা সে কথাই মনে করাচ্ছে৷ যারা তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং প্রোটোকল অনুযায়ী যাঁদের আমন্ত্রণ করা উচিত তাঁদের সকলকেই অতিথিপত্র পাঠাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ অর্থাৎ, রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী শুধু নন, দেশের তাবড় রাজনীতিবিদ, এবং যাঁরা মমতাকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করছেন, তাঁদের অনেককেই সেদিন রেড রোডে দেখা যেতে পারে৷ যতদূর খবর, প্রোটোকল অনুযায়ী আমন্ত্রিত বিজেপি ও কংগ্রেসের নেতৃত্বের অনেকেই হাজির থাকলেও আসলে লালুপ্রসাদ, নীতীশ কুমার, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, চন্দ্রবাবু নায়ডু, জয়ললিতার মতো তৃতীয় বিকল্পের মাথারা রেড রোডে আমন্ত্রিত৷ বর্ণাঢ্য শপথ আরও ঐতিহাসিক রূপ নিচ্ছে নজিরবিহীনভাবে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে ওই দিন কলকাতায় আসার ইচ্ছা প্রকাশ করায়৷ থাকবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধিও৷ ২১১ আসন পেয়ে তিনি যেমন একটি ইতিহাস রচনা করেছেন, তেমনই ২৭ মে ঐতিহাসিক রেড রোড থেকে আরও এক স্বপ্নের দৌড় শুরু করতে চান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী৷ মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর জুনে দিল্লি যাবেন মমতা৷

১৯ মে-র আগে যে ছবি ছিল, ফল প্রকাশের পর সেটা সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে৷ সর্বভারতীয় রাজনীতির মাথাদের চোখ এখন ৩০ বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের দিকে৷ সবাই তাঁর সমর্থন পেতে চান৷ কিন্তু নীতিগত ভাবে কংগ্রেস ও বিজেপির সঙ্গে সমদূরত্ব রেখেই চলতে চাইছেন মমতা৷ সরকার চালানোর জন্য যে সহযোগিতা কেন্দ্রের সঙ্গে দরকার, তা তিনি করে চলবেন যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে৷ কিন্তু বিজেপি ও কংগ্রেস নেতারা নির্বাচনী প্রচারে যেভাবে, যে কায়দায় তাঁকে আক্রমণ করেছেন তা তিনি কিছুতেই ভুলে যেতে পারছেন না, ভুলতেও চান না৷ কারণ, মমতা বুঝে গিয়েছেন তাঁর উত্থানে আতঙ্কিত এই সর্বভারতীয় দলগুলি৷ তাই এদের কোনও ফাঁদে পা দেবেন না মুখ্যমন্ত্রী৷ বরং জবাবটা দেবেন ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে’৷
১৯ মে-র আগে যাঁরা ভাবছিলেন জোটই ক্ষমতায় আসবে, তৃণমূলের দিন শেষ, তাদের এখন ডিগবাজি দেখে হাসছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কালীঘাটে প্রতিদিন বহু মানুষের ভিড়৷ একবার দেখা করার জন্য উদ্বেলতা৷ সাধারণ মানুষ অথবা কর্মীরা তো সম্পদই৷ কিন্তু এমন কিছু তথাকথিত বিশিষ্ট মানুষ প্রতিদিনই ফুল আর মিষ্টির বাক্স নিয়ে কালীঘাটে আসছেন যাঁদের দেখে সত্যিই কৌতুকে হাসিমুখ মমতার৷ একটা জয় কীভাবে সব বদলে দিতে পারে! কীভাবে বদলে দিতে পারে মুখগুলোকে! এটাই বোধহয় সত্যিকারের জবাব৷ মমতা তাই ঘরের দরজা সবার জন্য হাট করে খুলে রেখেছেন৷ মমতা তাই সবার হাত থেকে ফুল নিচ্ছেন, আর হাসছেন৷

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ