শুভঙ্কর বসু: ফোনে লটারি জেতার টোপ! আর তা গিললেই নিমেষে পকেট ফাঁকা। এখানেই শেষ নয়। গরিব মানুষকে ফাঁদে ফেলে জড়ো করা সেই টাকা হাওলা হয়ে সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে জঙ্গি সংগঠনের কাছে।
কলকাতা হাই কোর্টে একটি জামিন মামলার সূত্রে এমনই এক অভিনব জামতারা চক্রের হদিশ মিলল, যাদের পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ও একাধিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে। তদন্তে নেমে সিআইডির হাতে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে বলে আদালতে দাবি করেছেন সরকারি কৌঁসুলি শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায়।
[আরও পড়ুন: টানা চারদিন পর ২৪ ঘণ্টায় বাংলায় চারশোর নিচে নামল আক্রান্তের সংখ্যা]
কিভাবে অপারেশন চালাত এই গ্যাংটি? জানা গিয়েছে, বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে রীতিমতো গেড়ে বসেছিল চক্রটি। মানুষকে ফোনে প্রথমে লটারি জেতার টোপ দেওয়া হতো। টোপ গিললেই কাজ হাসিল করার পালা। বলা হত, ‘আপনার নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হবে। সেখানেই জমা পড়বে লটারি বাবদ জেতা অর্থ।’ কিন্তু শর্ত হল অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ প্রথমে ন্যূনতম অর্থ অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে গ্রাহককে। লটারির অর্থ অ্যাকাউন্টে ঢোকার আগে পর্যন্ত বিশেষ কারণে এটিএমও জমা থাকবে তাদের কাছে। টাকা জমা পড়লেই তা ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে। এভাবেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় কয়েক হাজার অ্যাকাউন্ট খুলে ছিল প্রতারকরা। গ্রাহকের দেওয়া ন্যূনতম টাকা ব্যাংকে ঢুকলেই এটিএম ব্যবহার করে তা তুলে নেওয়া হত। এবার টাকা জঙ্গিসংগঠনগুলির কাছে পাঠানোর পালা।
দিল্লি পুলিশের সহায়তায় গোয়েন্দারা জানতে পারেন, সরাসরি টাকা নয়। বরং হাতিয়ে নেওয়া টাকায় মোটর পার্টস ওই জাতীয় সামগ্রী কিনে ক্যুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তা পাঠিয়ে দেওয়া হত দিল্লিতে। এবার সেখান থেকে আবার তা টাকায় রূপান্তরিত হয়ে হাওলা মারফত সরাসরি চলে যেত জঙ্গি সংগঠনগুলোর কাছে।
গতবছর জানুয়ারি মাস নাগাদ পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা থানায় এই চক্রের নামে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। এরপর মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া ও দুই পরগনা-সহ রাজ্যের একাধিক জেলায় অভিযোগ জমা হতে থাকে। গুরুত্ব বুঝে তদন্তভার যায় সিআইডির হাতে। এরপর বিভিন্ন জেলায় জাল পেতে চক্রের পাণ্ডা তৌহিদ আলম-সহ মোট ১৯ জনকে পাকড়াও করেন গোয়েন্দারা। মামলায় একপ্রস্থ চার্জশিটও জমা পড়ে গিয়েছে।
কিন্তু করোনা হানা দিতেই সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় প্রতারকরা। তাতে সাফল্যও মেলে। ইতিমধ্যেই এই চক্রের বেশ কয়েকজন জামিন পেয়ে গিয়েছে। স্বশরীরে জামিন মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণ দাখিলার যতটা সুযোগ থাকে অনলাইনে তা সম্ভব নয় জেনে শেষ পর্যন্ত হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় মূল চক্রী তৌহীদ। বিচারপতি রাজ শেখর মন্থার এজলাসে জামিনের আবেদন জানায়। কিন্তু এবার আর ভুল হয়নি। অনলাইন শুনানিতে তথ্য প্রমাণ-সহ সবটা তুলে ধরে জামিনের তীব্র বিরোধিতা করেন শাশ্বতবাবু। আর তাতেই কাজ হয়। পত্রপাঠ তৌহিদের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতি।