অর্ণব আইচ ও নিরুফা খাতুন: দেড় দিনের মধ্যেই গল্ফগ্রিনের উদ্ধার হওয়া কাটা মুন্ডু রহস্যে তদন্তের জাল প্রায় গুটিয়ে আনল পুলিশ। গ্রেপ্তার, জেরা, নমুনা ও প্রমাণ সংগ্রহের পর খুনের মোটিভ নিয়ে মোটামোটি নিশ্চিত তদন্তকারীরা। জামাইবাবুর প্রেমের ডাকে সাড়া না দেওয়াতেই বেঘোরে প্রাণ হারাতে হল খাদিজা বিবি নামে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই মহিলাকে। গ্রেপ্তার হয়েছে জামাইবাবু আতিকুর লস্কর। শনিবার এই ঘটনায় তদন্তের ভিত্তিতে একাধিক তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরলেন ডিসি (এসএসডি) বিদিশা কলিতা।
তদন্তকারী আধিকারিক জানাচ্ছেন, মগরাহাটের বাসিন্দা খাদিজা বিবিকে খুন করা হয় ১২ ডিসেম্বর। খাওয়াতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে তাঁকে প্রথমে মাথায় আঘাত এবং পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে শ্বাসরোধ করা হয়। এর পর দেহ তিন টুকরো করে ফেলে দেওয়া হয় দক্ষিণ কলকাতার নানা জায়গায়। ১৩ তারিখ সকালে গল্ফগ্রিনের আবর্জনা স্তূপ থেকে উদ্ধার হয় কাটা মুন্ডু। পরেরদিন বিকেলের মধ্যে রিজেন্ট কলোনি এলাকা থেকে দেহের বাকি অংশ উদ্ধার হয়। এহেন নৃশংস ঘটনার তদন্তে তিনটি থানা – রিজেন্ট পার্ক, গল্ফগ্রিন ও নেতাজিনগরের পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে তৈরি হয় সিট। তদন্তে নেমে অতি দ্রুত সেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যান সিটের আধিকারিকরা।
মহিলার দেহাংশ উদ্ধারের পর শনিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে ডিসি (এসএসডি) বিদিশা কলিতা জানান, ”অভিযুক্ত সন্দেহে আমরা যাকে গ্রেপ্তার করেছি, সেই আতিকুর সম্পর্কে মৃত খাদিজা বিবির জামাইবাবু। বেশ কয়েকদিন ধরে খাদিজাকে সে প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছিল। কিন্তু তা গ্রহণ করেনি খাদিজা। তা সত্ত্বেও বারবার তাঁকে নানাভবে উত্যক্ত করছিল আতিকুর। দুদিন আগে বিরক্ত হয়ে খাদিজা তার মোবাইল নম্বর ব্লক করে দেয়। একে প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি, তারপর মোবাইল নম্বর ব্লক করে দেওয়ায় কোওভাবেই আর যোগাযোগ করতে পারছিল না। সবমিলিয়ে প্রবল রাগ হয় আতিকুরের। সেই রাগ থেকে এই হত্যাকাণ্ড। ঘটনার দিন বাড়ি থেকে কলকাতায় কাজ করতে এসেছিল খাদিজা। সেদিনই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কলকাতায় আচমকা আতিকুরের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়ে যায়। আতিকুর তাঁকে খাওয়াদাওয়ার পর ফেরার কথা বললে রাজি হন খাদিজা। সেই সুযোগ তাঁকে কোথাও নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়। ঘটনা ঠিক কোথায় ঘটেছে, তা জানতে তদন্ত এখনও চলছে।”
আরও জানা গিয়েছে, আতিকুর পেশায় রংমিস্ত্রি। তাই তার কাছে বেশ কিছু সরঞ্জাম ছিল, যা খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন একটি কাটার, যা দিয়ে দেহ টুকরো করা হয়েছে। তার কাছে থাকা বস্তায় অনায়াসে দেহাংশ ভরে এদিক-ওদিক ফেলা হয়েছে। রবিবার আতিকুরকে আদালতে পেশ করে পুলিশ হেফাজতের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদিশা কলিতা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.