ফাইল ছবি।
অর্ণব আইচ: ‘হাইপোভলিউমিক শক’! বউবাজারের হস্টেলে ইরশাদ আলমের মৃত্যুর কারণ হিসেবে উঠে আসছে এই শব্দবন্ধটিই। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এই কথাই উঠে আসছে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। কী এই ‘হাইপোভলিউমিক শক’?
ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয়েছে, হৃদপিন্ড-সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে পর্যাপ্ত রক্ত বা ফ্লুইড না পৌঁছলে এই শারীরিক অবস্থা তৈরি হয়। মনে করা হচ্ছে, শরীরে একাধিক চোটের জেরেই রক্ত পৌঁছয়নি। এবং বেধড়ক মারধরের ফলেই শরীরজুড়ে চোট লেগেছিল। তাতেই বউবাজারে হস্টেলে মৃত্যু হয় টেলিভিশন মেকানিকের। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, হাত ও পায়েই বেশি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মারের চোটে ভেঙে গিয়েছে বহু হাড়। ক্রিকেট ব্যাট, উইকেটের মতো ভোঁতা বস্তু দিয়ে পরপর আঘাত করার জন্য শরীরের ভিতর রক্ত জমাট বেঁধে যায়। তাতেই মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির।
গণধোলাই করে খুনের পর বউবাজারের হস্টেলের এক ঘণ্টারও উপর ফুটেজ মুছে দিয়েছিল অভিযুক্ত ছাত্ররা। ওই কীর্তিটি কার, এবার তা জানার চেষ্টা করছেন মধ্য কলকাতার মুচিপাড়া থানার আধিকারিকরা। এমনকী, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত হস্টেলের গেটও বন্ধ করে রেখেছিল ১৪ জন ছাত্র। ওই ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ধরে টানা মারধর করা হয় ওই ব্যক্তিকে। এমনকী, সকাল দশটার সময় খবর পেয়ে মুচিপাড়া থানার পুলিশ আধিকারিকরা গেলেও তাঁদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তার উপর সকালে হস্টেলের সিসিটিভির ফুটেজ মুছে ফেলা হয়। সিটিটিভির হার্ড ডিস্ক ফরেনসিকে পাঠানো হচ্ছে।
শুক্রবার সকালে ওই হস্টেলের ভিতরই মোবাইল চোর সন্দেহে ইরশাদ আলম নামে পেশায় এক টিভি মেকানিককে আবাসিক ছাত্ররা পিটিয়ে খুন করে বলে অভিযোগ। ওই ১৪ জনকেই মুচিপাড়া থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে বারোজনই সংস্কৃত কলেজ, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র। বাকি দুই প্রাক্তন ছাত্র এখন ওই হস্টেলেরই কর্মী। এদিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাদের জামিনের বিরোধিতা করেন সরকারি আইনজীবী অরূপ চক্রবর্তী। তাদের ৪ জুন পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার হস্টেলের আবাসিক শঙ্কর বর্মনের মোবাইল চুরি যায়। প্রেসিডেন্সি কলেজের ওই ছাত্র ২০১৯ সালে পাস করার পর থেকে এই হস্টেলে ‘দারোয়ান ও নাইট গার্ড’ হিসাবে কাজ করত। অন্য চাকরিরও চেষ্টা করছিল সে। শঙ্কর বৃহস্পতিবারই মুচিপাড়া থানায় অভিযোগ জানায়। তারা হস্টেল ও আশপাশের দোকানের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে একজনকে শনাক্ত করে। তাদের দাবি, ওই ব্যক্তিই ইরশাদ আলম। ইরশাদ চাঁদনি চকের যে দোকানে কাজ করতেন, তার মালিক মহম্মদ ইমরান ও ইরশাদের পরিবারের লোকেরা পুলিশকে জানান, শুক্রবার সকালে তিনি কফি কিনতে বউবাজারের ওই জায়গায় যান। কিন্তু বেলগাছিয়া থেকে কেন তিনি সেখানে যাবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তিনি যে আগে মোবাইল চুরি করেছেন, এমন প্রমাণ পুলিশ পায়নি।
ইরশাদকে শঙ্কর ও তার সঙ্গীরা মালিকের কাছ থেকে দশ হাজার টাকা আনতে বলে। তাঁকে যে প্রচণ্ড মারধর করা হচ্ছে, তা জানিয়ে তিনি বাঁচতে চান। এর মধ্যেই মালিক পুলিশ আধিকারিকদের নিয়ে সেখানে যান। আধ ঘণ্টার উপর পুলিশকে বাইরে দাঁড় করিয়ে ইরশাদের হাত-পা বেঁধে মারধর করা হয়। পুলিশ যখন উদ্ধার করে তাঁকে বাইরে নিয়ে আসে, তখনও তিনি হাঁটতে পারছিলেন না। এই খুনের ঘটনায় হস্টেলের আরও কোনও আবাসিক জড়িত কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.