গৌতম ব্রহ্ম: নার্স ভুল করে তার ‘লিঙ্গপরিবর্তন’ করে ফেলেছিল৷ আর সেই ভুলের রেশ ধরে তাকে দূরে ঠেলে দিয়েছিলেন ‘বাবা-মা’৷
এমনকী জন্মদাত্রী তাকে স্তন্যপান করাতেও অস্বীকার করেছিলেন৷
বড়দের এই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করছে ‘দুধের শিশু’৷
ভূমিষ্ঠ হওয়ার আটদিনের মাথায় মায়ের কোল ছেড়ে তাকে চলে যেতে হচেছ হোমে৷
দুঃখের বিষয়, ‘বাবা-মা’-ও তাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে না৷ বরং উল্টোটাই করছেন৷ থানায় ‘শিশুবদল’-এর নালিশ জানিয়েছেন৷ বলেছেন, “ওই কন্যাসন্তানের অভিভাবক আমরা নই৷ আমাদের পুত্রসন্তান হয়েছে৷ ’’
‘দাবিহীন’ হওয়ায় শিশুটিকে আজ, বুধবারই কলকাতার ‘চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি’ (সিডব্লুসি)-র কাছে জমা দিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ অতঃপর আদালতের নির্দেশিত কোনও হোমই হবে তার ঠিকানা৷
জট কাটাতে এখন একমাত্র ভরসা ডিএনএ টেস্ট৷ এক মাস পর রিপোর্ট আসবে হাসপাতালে৷ জানা যাবে, শিশুটির ‘বায়োলজিক্যাল’ বাবা-মায়ের পরিচয়৷ তারপরও যে মায়ের কোলে ফেরাটা মসৃণ হবে তা নয়৷ ‘দত্তক’ সন্তান হয়ে ফিরতে হবে মায়ের কোলে৷
ঘটনার সূত্রপাত গত ১৭ মে৷ বেলা দশটা নাগাদ গড়িয়ার সারদা পল্লির বাসিন্দা গঙ্গা মান্নাকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়৷ হাসপাতাল সূত্রের খবর, বিকেল সওয়া চারটে নাগাদ এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন গঙ্গা৷ কিন্তু নার্সের ভুলে লেবার রুমের লগবুকে লেখা হয়, পুত্রসন্তান প্রসব করেছেন গঙ্গা৷ গোলাপি স্লিপের বদলে নীল স্লিপ দেওয়া হয়৷ এই ভুলের জেরেই যত অশান্তি৷
ওয়ার্ডের আয়ারা গঙ্গার পরিবারের কাছ থেকে পুত্রসন্তান হওয়ার আনন্দে মিষ্টি খাওয়ার টাকা আদায় করে নেন৷ জট আরও পাকে৷ এরপর গঙ্গার কোলে কন্যাসন্তান দিলে শুরু হয় গন্ডগোল৷ স্বামী অলোক মান্না ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে গঙ্গা ‘সন্তান বদল’-এর অভিযোগ জানান৷ পরিবারের পক্ষ থেকে বেনিয়াপুকুর থানায় অভিযোগ জানানো হয়৷ বুধবার ন্যাশনালের এমএসভিপি ডা. পীতবরণ চক্রবর্তী মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. পি পি মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সাত সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গঠন করেন৷
তদন্তে নেমে কমিটি জানতে পারে, নার্সের ভুলেই লিঙ্গপরিবর্তন হয়েছে শিশুর৷ কারণ, ওই দিন বিকেল সওয়া চারটের পর থেকে হাসপাতালে একটিও পুত্রসন্তানের জন্ম হয়নি৷ যদিও শিশুর পরিবার কমিটির রিপোর্ট মানতে চায়নি৷ এমনকী, গঙ্গাকে স্তন্যপান করতে অস্বীকার করেছিলেন শিশুটিকে৷ ডাক্তাররা অনেক করে বোঝানোয় নরম হয়েছে গঙ্গা৷ স্তন্যপান করিয়েছেন৷ আস্তে আস্তে অনুভব করছেন নাড়ির টান৷ কিন্তু, বাড়ির অন্য সদস্যরা এখনও পুত্রসন্তানের গোঁ ধরে বসে আছেন৷ পরিবার নাছোড়বান্দা মনোভাব নেওয়ায় ডিএনএ টেস্টের সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ কিন্তু রিপোর্ট আসা পর্যন্ত কোথায় থাকবে শিশুটি? আজ, দুপুরে সিডব্লুসি-র চেয়ারপার্সন ইন্দ্রাণী ব্রহ্মের সামনে পেশ করা হবে শিশুটিকে৷ তারপর ঠিক হবে ঠিকানা৷ কিন্তু যদি গঙ্গার পরিবারের আশঙ্কা সত্যি হয়? পীতবরণবাবু জানিয়েছেন, “হওয়া সম্ভব নয়৷ তবে যদি হয় তবে সেদিন যতগুলি শিশু জন্মেছে সবার ডিএনএ টেস্ট করাতে হবে৷” কিন্তু যদি ডিএনএ টেস্টে প্রমাণিত হয়, গঙ্গাই শিশুর মা? সেক্ষেত্রে নিজের শিশুকেই ‘দত্তক’ নিতে হবে গঙ্গাকে!
কেন বড়দের ভুলের মাশুল মাশুল দিতে হল শিশুটিকে? মেয়ে বলে?