Advertisement
Advertisement
Calcutta National Medical College

গ্লাভসে রক্তের দাগের পর বেড বিক্রির অভিযোগ! এবারও মিলল না প্রমাণ

ড্রপবক্সে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি, সুপারের কাছে আসেনি একটাও লিখিত অভিযোগপত্র। প্রায় দেড় মাস তদন্ত চলার পরও মেডিক্যাল কলেজে টাকা নিয়ে বেড বিক্রির কোনও প্রমাণ মেলেনি, বৃহস্পতিবার এমনটাই জানান তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

No evidence found against complaint of selling beds in exchange of money at Calcutta Medical college
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:November 8, 2024 9:16 am
  • Updated:November 8, 2024 9:46 pm  

স্টাফ রিপোর্টার: প্রথম অভিযোগ ভুয়ো। দ্বিতীয় অভিযোগের তিলমাত্র প্রমাণ নেই। গ্লাভসে রক্তের দাগের পর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র ডাক্তারদের টাকা নিয়ে বেড বিক্রির অভিযোগের তদন্ত করতে নেমে কিচ্ছু পেল না তদন্তকারী টিম। নালিশ জানিয়ে কোনও মেল নেই। ড্রপবক্সে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি, সুপারের কাছে আসেনি একটাও লিখিত অভিযোগপত্র। প্রায় দেড় মাস তদন্ত চলার পরও মেডিক্যাল কলেজে টাকা নিয়ে বেড বিক্রির কোনও প্রমাণ মেলেনি, বৃহস্পতিবার এমনটাই জানান তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

মোটা টাকার বিনিময়ে বিক্রি হচ্ছে আইসিইউ বেড! সেপ্টেম্বরের শেষে অভিযোগ করেছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের স্টুডেন্টদের একাংশ। ২৮ সেপ্টেম্বর সে অভিযোগ পেয়েই মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল স্বাস্থ্য ভবন। যেখানে রাখা হয়েছিল জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিও। তদন্ত কমিটিতে ছিলেন অধ্যাপক ডা. সৌমিত্র ঘোষ, ডা. শিবজ্যোতি ঘোষ, ডা. সুর্নিমল চৌধুরী, ডা. জয়ন্ত সান‌্যাল, ডা. প্রবীর ভট্টাচার্য, নার্সিং সুপারিন্টেন্ডেন্ট শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী, ইন্টার্নদের মধ্যে ছিলেন অভিষেক সাধু, সৌম্যস্বরাজ কুইলা। জুনিয়র ডাক্তার মেহবুব হুসেন, প্রদীপ্ত মণ্ডল। তদন্তের শুরুতেই স্বচ্ছতা রাখতে হাসপাতাল চত্বরে বসানো হয় ড্রপ বক্স। কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়েছিল, যদি কোনও রোগীর পরিবারের তরফে টাকা নিয়ে সিসিইউতে ভর্তির অভিযোগ থাকে তারা যেন খামবন্দি চিঠি অ্যাডমিশন কাউন্টারের সামনে রাখা ড্রপ বক্সে ফেলে যায়।

Advertisement

অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রেখেই হবে তদন্ত। শুধু তাই নয় মেডিক্যাল কলেজের সুপারের তরফে একটি মেল আইডি দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, চাইলে কেউ সেখানেও কেউ অনলাইনে অভিযোগ জানাতে পারেন। সরাসরি সুপারের কাছে এসে লিখিত অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। এমনকী হাসপাতালের পুলিশ আউটপোস্টেও বলা হয়েছিল সন্দেহজনক কাউকে দেখলে সরাসরি সুপারের কাছে জানাতে। কিন্তু প্রায় দেড়মাস কেটে গেলেও কোনও রোগীর পরিবার টাকা নিয়ে অ্যাডমিশনের কোনও অভিযোগ করেনি। এদিন কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, মেডিক্যাল কলেজের একাধিক ওয়ার্ডে টাকা নিয়ে বেড বিক্রির যে অভিযোগ করা হয়েছিল, তার বিন্দুমাত্র প্রমাণ মেলেনি।

এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, এর আগে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে গ্লাভসে রক্তের দাগের অভিযোগ উঠেছিল। তদন্তে জানা যায়, ওই দাগ আদৌ রক্তের নয়, এমনকী গ্লাভসের ব্যাচ নম্বরের সঙ্গে হাসপাতালের গ্লাভসের ব্যাচ নম্বরও আলাদা। কুণাল ঘোষের বক্তব্য, নিশ্চিত কেউ আতঙ্ক ছড়াতে, মিথ্যা অভিযোগ করতে ওই গ্লাভসগুলো নিয়ে হাসপাতালে এসেছিল। এটা অন্তর্ঘাতমূলক চক্রান্ত। একইভাবে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অভিযোগও দেখছেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ। তাঁর বক্তব্য, যারা এগুলো নিয়ে মিডিয়ায় বয়ানবাজি করেছে, তাদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হোক। তারা বলুক এইসব ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে কারা। এদিকে মেডিক্যাল কলেজে টাকা নিয়ে বেড বিক্রির অভিযোগের তদন্তে তিনটি বৈঠক করে তদন্তকারী টিম।

৫ অক্টোবর, ২৩ অক্টোবর এবং ৩০ অক্টোবর তিনবার বৈঠকে বসে কমিটি। প্রতিবারই ড্রপবক্স, ই-মেলের ইনবক্স খুলে দেখা যায়, সেখানে টাকা নিয়ে বেড বিক্রির কোনও অভিযোগ নেই। এমনকী প্রতি মিটিংয়ে খতিয়ে দেখা হয়েছে হাসপাতাল চত্বরের সিসিটিভি। সেখানে না কাউকে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, না মিলেছে সন্দেহজনক কিছু। মিটিংয়ে উপস্থিত জুনিয়র ডাক্তাররাও স্বীকার করে নিয়েছেন তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রমাণ কিছুই নেই। তা হলে কেন এমন অভিযোগ করা হয়েছিল? যৌথ বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন, কয়েকজন রোগীর পরিবার তাদের জানিয়েছিল, এমনটা হয়তো হচ্ছে। স্রেফ আন্দাজের বশেই তাঁরা অভিযোগ এনেছিলেন। সবশেষে এদিন তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, মেডিক্যাল কলেজে চোখে পড়ার মতো একাধিক জায়গায় নোটিস টাঙানো আছে, “কোনও দালালকে একটিও পয়সা দেবেন না। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।”

তদন্তকারী টিমের তরফে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথমত, আগামিদিনে অনভিপ্রেত ঘটনা ঠেকাতে, হাসপাতালে ‘পেশেন্ট ফিডব্যাক ফর্ম’ চালু করা হচ্ছে। রোগীর সমস্ত মত নেওয়া হবে এই ফিডব্যাক ফর্মে। তাকে যদি কোনও সরকারি হাসপাতালে অব্যবস্থার শিকার হতে হয়, দ্রুত জানা যাবে এই ফিডব্যাক ফর্মের মাধ্যমে। তদন্ত কমিটির তরফে ঠিক হয়েছে, তৈরি হবে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। যেখানে থাকবেন মেডিক্যাল কলেজের সমস্ত বিভাগের বিভাগীর প্রধান, নার্স, সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার, ডেপুটি সুপার। হাসপাতালের কোনও কিছু সম্বন্ধে কোনও সুপারিশ থাকলেই দ্রুত তা জানাতে হবে গ্রুপে। হাসপাতালের প্রতিটি কর্মচারীকে রোজ নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম পরে আসতে হবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement