অভিরূপ দাস: আধ ঘণ্টা কিংবা এক ঘণ্টার কোনও ছোট অস্ত্রোপচার, যার জন্য ভর্তি থাকতে হয় না হাসপাতালে। এবার সেই অস্ত্রোপচারের জন্যেও মিলবে মেডিক্লেম বা স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা। সোমবার রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে জানিয়েছেন বঙ্গের স্বাস্থ্য বিমা সংস্থার কর্তারা।
ছোট অস্ত্রোপচার শেষে দিনের দিন ছুটি। চিকিৎসা পরিভাষায় এহেন অস্ত্রোপচারকে বলা হয়, ‘ডে কেয়ার সার্জারি’। তার মধ্যে রয়েছে চোখের ছানি কাটা, চোখের মণি থেকে ‘ফরেন বডি’ রিমুভাল, পাইলস কিম্বা ফিসচুলা অস্ত্রোপচার, জিভের কোনও কাঁটাছেড়া, এগুলো সবই পড়ে ‘ডে কেয়ার সার্জারি’র তালিকায়।
এদিন স্বাস্থ্যবিমা সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারম্যান অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “এই ডে কেয়ার সার্জারির জায়গাটায় একটা অত্যন্ত অস্বচ্ছ ব্যবস্থা ছিল। এতদিন ছোট সার্জারি করলে স্বাস্থ্যবিমার সুযোগ পাওয়া যেত না। যে কারণে কিছু বেসরকারি হাসপাতালে জোর করে রোগীকে ভর্তি করা হত। স্বাস্থ্যবিমা সংস্থাকে দেখানো হত রোগী ভর্তি হয়েছে। তার জন্য ডাক্তারবাবুকে দিয়ে লিখিয়ে নেওয়া হতো ‘অ্যাডমিশনের দরকার।’ তা দেখিয়ে দু’দিনের বিল করে দিত বেসরকারি হাসপাতাল। আজকের বৈঠকে ইনসিওরেন্স সংস্থা আমাদের জানিয়েছে, ডে কেয়ার সার্জারিও তারা স্বাস্থ্যবিমার মধ্যে আনছে।”
এদিনের বৈঠকে চেয়ারম্যান ছাড়াও হাজির ছিলেন স্বাস্থ্য কমিশনের সদস্য ডা. মাখনলাল সাহা, বিনোদ কুমার, সচিব আরশাদ হুসেন ওয়ারসি, ডা. মৈত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ১১ বিমা সংস্থার কর্তারা। হাজির ছিলেন টিপিএ (থার্ড পার্টি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর)। এদিন স্বাস্থ্যবিমা সংস্থাগুলিকে জানানো হয়েছে, একাধিক বিমা সংস্থার ইনসিওরেন্স অ্যাপ্রুভাল মেমোতে কিছু অস্বচ্ছতা আছে। দ্রুত তা সংশোধন করতে হবে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, সমস্ত বিমা সংস্থা কনসিউমেবেল আইটেমকে বিমার আওতায় আনার কথা দিয়েছেন।
গজ-তুলো, মাস্ক, সার্জিকাল গ্লাভস, ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ, এসবই ‘কনসিউমেবেল আইটেম।’ এতদিন বিমায় এই ধরণের জিনিসকে নন মেডিক্যাল আইটেম বলে গণ্য করা হত। যার জন্য খরচ দিত না অধিকাংশ বিমা সংস্থা। হাসপাতালে ভর্তি হলে এসবের প্রয়োজন। যার জন্য বড় অঙ্কের টাকা যায় রোগীর পকেট থেকে। এদিন স্বাস্থ্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে সমস্ত বিমা সংস্থা জানিয়েছেন, এই ‘কনসিউমেবেল আইটেম’ কেও মেডিক্লেমের আওতায় আনা হবে।
এদিন স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, মেডিক্লেমের বিল বিমা সংস্থা মেটাতে দেরি করলেও তার জন্য ছুটি হয়ে যাওয়া রোগীকে হাসপাতালে আটকে রাখা যাবে না। বিল মেটাতে দেরি হওয়া নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালের যুক্তি, ‘টিপিএ অ্যাপ্রুভাল আসছে না।’ অন্যদিকে টিপিএ-দের (থার্ড পার্টি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর) বক্তব্য, ‘‘আমরা চেষ্টা করি দু’ঘন্টার মধ্যে সমস্ত অ্যাপ্রুভাল ছেড়ে দিতে। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে যাঁরা বসে থাকেন তারা ঠিকমতো সমস্ত ডকুমেন্ট আপডেট করেন না।” স্বাস্থ্য কমিশনের কড়া নির্দেশ, “এর জন্য রোগীর কিছু করার নেই। বেসরকারি হাসপাতাল-বিমা সংস্থা নিজেরা আলোচনা করে মিটমাট করে নিন। কোনও ভাবেই রোগীকে আটকে রাখা যাবে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.