১৮ চৈত্র  ১৪২৯  রবিবার ২ এপ্রিল ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

কল সেন্টারের আড়ালে শহরে ফাঁদ পেতেছে প্রতারণা চক্র, পুলিশের জালে আট

Published by: Tanujit Das |    Posted: July 20, 2019 9:20 am|    Updated: July 20, 2019 6:24 pm

Police allegedly arrested 8 people on Fraud case from Bidhannagar

ছবি: প্রতীকী।

অর্ণব আইচ: ঋণ দরকার? ঋণ দেব। কোনও কাগজপত্র লাগবে না। শুধু ফোনে কিছু তথ্য দিলেই হবে। ব্যাংকে ঢুকে যাবে ঋণের লক্ষ লক্ষ টাকা। তার বদলে দিতে হবে কেবল প্রসেসিং ফি। আর এই প্রসেসিং ফি নেওয়ার নাম করেই শহরে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছিল একটি বড় চক্র। আগে বহুবার পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কিন্তু কোনও সূত্র ছিল না পুলিশের হাতে। শুধু একটি তথ্যই পেয়েছিলেন পুলিশ আধিকারিকরা৷ তাঁরা জানতে পেরেছিলেন, প্রসেসিং ফি’র নাম করে এটিএম থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা। তবে হাল ছাড়েননি তাঁরা৷ বিভিন্ন এটিএমের সিসিটিভি ফুটেজে খতিয়ে দেখে প্রথমে তদন্ত শুরু করেন বন্দর এলাকার সাইবার সেলের গোয়েন্দারা। আর সেই সূত্রে ধরেই সফলতা মেলে বিধাননগর এলাকার চিনার পার্ক ও সেক্টর ফাইভ থেকে৷ পুলিশ সূত্রে খবর, সম্প্রতি এই দুই এলাকার দু’টি কল সেন্টারে তল্লাশি চালিয়ে আটজনকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। এই ধৃতরাই এই প্রতারণা চক্রের পাণ্ডা বলে জানিয়েছে পুলিশ৷

[ আরও পড়ুন: ‘টিকটক’ অ্যাপে ছড়াচ্ছে মাদকচক্রের জাল, বিপথে স্কুল পড়ুয়ারা ]

জানা গিয়েছে, তল্লাশি চালাতে গিয়ে একটু অবাকই হয়েছিলেন গোয়েন্দারা। ঝকঝকে কর্পোরেট অফিস। কল সেন্টার। সর্বক্ষণ কাজ চলছে। কিন্তু তার আড়ালেই যে সারা কলকাতা ও তার আশপাশের জেলায় প্রতারণার জাল ছড়ানো হয়েছে, তা কেউ বুঝতে পারেননি। পুলিশ জানিয়েছে, একবালপুর থানা এলাকার এক বাসিন্দা অভিযোগ জানান যে, এক ব্যক্তি তাঁকে ফোন করে টাকা ঋণ নেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। তাঁর টাকার প্রয়োজন ছিল। তাই তিনি ৬ লক্ষ টাকা ঋণ নেবেন বলে জানান। পুরো যোগাযোগ ফোনেই হয়। ঋণদাতারা তাঁকে বলে, কোনও কাগজপত্র দিতে হবে না। কিন্তু প্রসেসিং ফি ও প্রশাসনিক কিছু খরচ বাবদ ৬ লক্ষ টাকা ঋণের জন্য তাঁকে ১ লক্ষ ৮ হাজার ৭০০ টাকা দিতে হবে। তিনি ওই টাকা একটি বেসরকারি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা করেন। ওই চক্রটি তাঁকে দু’টি চেকের মাধ্যমে পুরো টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু ঋণের টাকা আর আসেনি। তাঁর জমা দেওয়া টাকাও হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ৷ যে অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়েছিল, তার মাধ্যমে তদন্ত শুরু করেন আধিকারিকরা। জানা যায়, চিনার পার্কে একটি বিশেষ এটিএম থেকেই তোলা হচ্ছে টাকা। সেইমতো ওই এলাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম কাউন্টারের কাছে ফাঁদ পাতেন একবালপুর থানার পুলিশ ও বন্দরের সাইবার সেলের আধিকারিকরা। এক যুবককে ধরে ফেলেন তাঁরা৷ সূত্রের খবর, জেরা করতেই ভেঙে পড়ে ধৃত যুবক। তাকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে চিনার পার্ক ও তার পর সেক্টর ফাইভের মোট দু’টি কল সেন্টারে তল্লাশি চালানো হয়। এই প্রতারণা চক্রের আট মাথা চঞ্চল রায়, অঞ্জনকুমার দাস, আজহারউদ্দিন, হীরা পাণ্ডে, ধ্রুবজ্যোতি সারমা বড়ুয়া, প্রশান্ত চক্রবর্তী, কবীর মণ্ডল ও মিঠুন সাহাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে মোবাইল। পুলিশের পক্ষে সিল করে দেওয়া হয় দু’টি কল সেন্টার।

[ আরও পড়ুন: সব্যসাচী দত্তর ব্যাটন ধরতে চলেছেন সুজিত বসু! জোর জল্পনা রাজনৈতিক মহলে ]

জেরার মুখে ধৃতরা জানিয়েছে যে, দু’টি জায়গায় কল সেন্টার থেকে বিভিন্ন মানুষের কাছে ‘র‌্যানডম কল’ যেত। পর পর ফোন করা হত। নিজেদের ঋণদাতা সংস্থা বলে পরিচয় দেওয়া হত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা ইতিবাচক উত্তর পেত না। কিন্তু কয়েকজন ঋণ চাইতেন। তাঁদেরই জালে ফেলত তারা। প্রসেসিং ফি নেওয়ার নাম করে টাকা নিয়ে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখত। এর পর দফায় দফায় চিনার পার্ক ও সল্টলেকের বিশেষ কয়েকটি এটিএম থেকে তুলে নিত পুরো টাকা। এই চক্রটি কতজনকে এভাবে প্রতারণা করেছে, এখন তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে