সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লোকসভা নির্বাচনে একপ্রকার ধরাশায়ী অবস্থাই হয়েছিল তৃণমূলের। বিয়াল্লিশে-৪২ স্লোগান তুলে মোটে ২২ টি আসন ধরে রাখতে পেরেছিল শাসকদল। চাপের মুখে ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের দ্বারস্থ হয় তৃণমূল। তারপর থেকেই যেন সব বদলে যেতে থাকে। প্রথমে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি, তারপর কাটমানি ফেরত। এসবের মধ্যেই অবশ্য চলেছে গ্রাউন্ড ওয়ার্ক। পিকের লোকজন বিধানসভা আসন ধরে ধরে নিজেদের মতো সমীক্ষা চালিয়েছে। সব জায়গায় স্থানীয় ইস্যু ধরে ধরে তৈরি হয়েছে রিপোর্ট কার্ড। তারপরই উপনির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্য। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এর অনেকটা কৃতিত্বই বিহারের ভোটকৌশলীকে দিচ্ছেন।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর তৃণমূল স্তরের নেতাদের মধ্যে ঔদ্ধত্য দেখা যাচ্ছিল, ক্ষমতার দম্ভও চোখে পড়ছিল। আবার লোকসভা নির্বাচনের পর একসময় মুষড়ে পড়েছিলেন তৃণমূলের নিচুস্তরের কর্মীরা। সেসময় মুষড়ে পড়া দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে পিকে নিয়ে এলেন ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি। সাংসদ-বিধায়ক থেকে শুরু করে দলের প্রতিটি ব্লকস্তরের নেতাকে নামিয়ে দিলেন ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির প্রচারে। যে সমস্ত বিধায়ককে নিয়মিত দলের কর্মসূচিতে দেখা যেত না, বা যাঁদের এলাকায় সংগঠন তলানিতে ঠেকেছিল, সেসব বিধায়ককে মাঠে নামালেন পিকে। আগে সংবাদমাধ্যমে যেখানে শুধুই গেরুয়া শিবিরের কার্যকলাপ চোখে পড়ত, পিকে আসার পর তা বদলে গেল। তৃণমূলের ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতেই তখন ছেয়ে সংবাদমাধ্যম। তৃণমূল কর্মীদের ঔদ্ধত্য কমিয়ে ভাবমূর্তি ফেরাতে চালু হল কাটমানি ফেরত কর্মসূচি। শুরুর দিকে কিছুটা বদনাম হলেও, এই সিদ্ধান্ত যে কাজে দিয়েছে তা ফলাফলেই প্রমাণিত।
[আরও পড়ুন: রাজস্থানের পুর নির্বাচনে বড় জয় কংগ্রেসের, কার্যত সাফ বিজেপি]
এবার আসা যাক, সবচেয়ে মোক্ষম অস্ত্র অর্থাৎ এনআরসিতে। এনআরসি নিয়ে কীভাবে প্রচার করা হবে। অসমের এনআরসিকে বাংলার মানুষের কাছে কীভাবে তুলে ধরা হবে, এসবই প্রশান্ত কিশোর ঠিক করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেই মতো তৃণমূল নেতারা এই উপনির্বাচনের মূল ইস্যু হিসেবে এনআরসিকে তুলে ধরতে সফল হন। সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ, এনআরসি আতঙ্কেই বিজেপির থেকে মুখ ফেরান। এছাড়াও উপনির্বাচনের জন্য আলাদা বেশ কিছু পরিকল্পনা ছিল পিকের। এলাকাভিত্তিক স্থানীয় ইস্যু চিহ্নিত করে সেই এলাকার আলাদা কর্মসূচি নির্ধারণ, আলাদা ইস্তেহার প্রকাশ এবং স্থানীয় ইস্যুতে আলাদাভাবে প্রচার। খড়গপুরের জন্য আলাদা আলাদা ভাষায় ইস্তেহার, করিমপুরে মহুয়া মৈত্রের কাজকর্মের খতিয়ান দিয়ে তৈরি প্রচারপত্র এবং কালিয়াগঞ্জে রাজবংশীদের আলাদা পরিকল্পনা। এসবই করেছে তৃণমূল। যার সাফল্য দেখা যাচ্ছে নির্বাচন নির্বাচনী ফলাফলে।