অর্ণব আইচ: সেমিনার হলে মহিলা চিকিৎসককে পড়ে থাকতে দেখেছিলাম। ডাকতে গিয়ে দেখি মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
পলিগ্রাফ পরীক্ষা চলাকালীনও সিবিআইকে বিভ্রান্তিতে ফেলার চেষ্টা করে আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়। সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, জেরার সময়ও তার বক্তব্যে ছিল বহু অসঙ্গতি। তবে সঞ্জয়ের ঘনিষ্ঠ ও ‘মেন্টর’ বলে পরিচিত কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর অনুপ দত্তর নাম শুনেই চমকে ওঠে সে। এমনকী, আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করতেও সঞ্জয় সাফ সিবিআইয়ের কাছে দাবি করে যে, সে তাঁকে চিনতই না। শুধুমাত্র চিকিৎসক দিবসেই সন্দীপ ঘোষকে সে দূর থেকে দেখেছে। যদিও তার বহু বয়ান বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে দাবি সিবিআইয়ের।
জেল হেফাজতে থাকাকালীনই সিবিআই অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করে। নিজেদের হেফাজতে সঞ্জয়কে জেরা করে বেশ কিছু তথ্য পায় সিবিআই। সিবিআইয়ের দাবি, তখনও সঞ্জয় রায় বিভিন্নভাবে সিবিআই আধিকারিকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। সে আধিকারিকদের বোঝানোর চেষ্টা করে যে, পুলিশ তাকে হুমকি দেওয়ার কারণে অনেক কিছু বলতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তরুণী চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণের ব্যাপারে সে কিছু জানে না। তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। এমনকী, সিবিআইয়ের কাছে সঞ্জয় দাবি করে যে, তার সন্ধানে সিবিআই চতুর্থ ব্যাটালিয়নে যায়নি। তাকে আর জি কর ফাঁড়িতে পুলিশ ডেকে পাঠিয়েছিল। সেখানে সাক্ষীর সামনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর চতুর্থ ব্যাটালিয়নে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। ততক্ষণ সে নিজের জামাকাপড় ও জুতো কেচে পরিষ্কার করে দিয়েছিল। সাত তাড়াতাড়ি কেন সে জামাকাপড়, এমনকী জুতোও কাচতে গেল, সেই ব্যাপারে তার বয়ানে ছিল অসঙ্গতি। যেহেতু সঞ্জয়ের বয়ানে বহু অসঙ্গতি ও ধন্দ রয়েছে, তাই সেগুলি যাচাই করতেই লাই ডিটেক্টরের সামনে বসিয়ে তার পলিগ্রাফ পরীক্ষা নেন সিবিআই আধিকারিকরা।
সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্সি জেলের ভিতরই একটি বিশেষ ঘরে সঞ্জয় রায়ের পলিগ্রাফ পরীক্ষা নেওয়া হয়। তাকে পরপর দশটি প্রশ্ন করা হয়। প্রথমে তার নাম ও পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন সিবিআই আধিকারিক ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। এর পর তাকে তদন্তের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আর জি কর হাসপাতালের চারতলায় ভোর চারটে থেকে সাড়ে চারটের মধ্যে সে কী ঘটনা ঘটিয়েছিল? এই প্রশ্নের উত্তরে সিবিআই ও ফরেনসিককে সঞ্জয় রায় জানায়, তারই এক সহকর্মীর বাবা আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁকে খুঁজতেই সে বিভিন্ন তলায় যায়। ট্রমা কেয়ার ও অপারেশন থিয়েটারগুলিতে ওই রোগীকে খুঁজতে থাকে সে। সেই সূত্র ধরেই সঞ্জয় পৌঁছে যায় চারতলার সেমিনার রুমে।
পলিগ্রাফ পরীক্ষা চলাকালীনই সে সিবিআই ও কেন্দ্রীয় ফরেনসিককে জানায়, ভোর চারটের পর সে সেমিনার রুমে প্রবেশ করেছিল। সেখানে ওই তরুণী চিকিৎসককে সে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। সে তাঁকে স্পর্শ করে ডাকে। কোনও সাড়া পেয়ে বুঝতে পারে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তখন সে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। তখন তাকে প্রশ্ন করা হয়, সেটিই যদি সত্যি হয়, তবে একজন সিভিক ভলান্টিয়ার হয়ে কেন তরুণী চিকিৎসকের দেহ পড়ে থাকতে দেখেও সে থানার পুলিশ বা আরজিকর হাসপাতালের ফাঁড়ির পুলিশকর্মীদের কিছু জানায়নি কেন? এর কোনও সদুত্তর সে দিতে পারেনি। ফলে পলিগ্রাফেও তার মিথ্যা ধরা পড়ে যায়। সিবিআই তাকে জিজ্ঞাসা করে, ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার সময় সে ছাড়াও কতজন ছিল? সঞ্জয় বিভ্রান্তি বাড়িয়ে দাবি করে, সে নিজেই ছিল না। তাই সে কিছুই জানে না। এমনকী, তার সন্দীপ ঘোষকে না চেনার দাবি নিয়েও ধন্দ বেড়েছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.