স্টাফ রিপোর্টার: মায়ের কাছে থাকবেন বলে প্রথমবার পাস করেও আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে কটকে যাননি তিনি। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় কমন ল অ্যাডমিশন টেস্ট বা ক্ল্যাট-এর মতো সর্বভারতীয় প্রবেশিকায় সারা দেশের মধ্যে নবম স্থান পেলেন বাংলার সৃজা পাল। কিন্তু আরও একটি পরিচয় রয়েছে সৃজার। ২০০৪ সালে খুন হওয়া শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের চিকিৎসক সুশীল পালের ছোট মেয়ে সৃজা আজ অনেক বড় হয়ে গিয়েছেন। কঠিন অধ্যবসায় তাঁকে এনে দিয়েঠে গগনচুম্বী সাফল্য। সর্বভারতীয় প্রবেশিকা ক্ল্যাট-এ গোটা দেশে নবম স্থান পাওয়া সৃজার সাফল্যে মা কণিকা পালও যথেষ্ট উচ্ছ্বসিত।
বাবা নেই। তাই মাকে ছেড়ে ভিনরাজ্যে পড়তে যাওয়া সম্ভব ছিল না তাঁর পক্ষে। গত বছর সর্বভারতীয় প্রবেশিকা ক্ল্যাট-এ কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ন হয়েও হাল ছাড়েননি সৃজা। কটকের ল স্কুলে ভর্তি হয়েও ফিরে আসেন তিনি। ফের শুরু হয় প্রস্তুতি। দেশের সেরা ল স্কুলে ভর্তি হতে গেলে যে প্রবেশিকায় পাস করতে হয় সেই কমন ল অ্যাডমিশন টেস্টের ফলাফল বেড়িয়েছে গত ২৩ মে। সফলদের তালিকায় গোটা দেশে নবম সৃজা। রাজ্যে প্রথম।
২০০৪ সালের জুলাই মাসে খুন হন শ্রীরমাপুর ওয়ালশ হাসপাতালের চিকিৎসক সুশীল পাল। তদন্তভার পড়ে সিআইডির উপর। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। আটজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বাকি চারজনকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দেয় বারাসত জেলা ও দায়রা আদালত। ওই বছরই জুলাই মাসে হাই কোর্ট থেকে জামিন পান সকলেই। পরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন সুশীল পালের স্ত্রী কণিকা পাল। এমনকি রাজ্য সরকারও জামিন বাতিলের আবেদন করে। কিন্তু সব আবেদনই খারিজ হয়ে যায়। সেই সময় দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন সৃজা। এই খবরে একেবারে ভেঙে পড়েন তিনি, জানাচ্ছেন মা। সৃজার কথায়, “বাবার জন্য যদি কিছু করতে পারতাম সেই ইচ্ছাতেই পড়াশোনায় মন দিই।“ তাঁর ইচ্ছা, বাবার মৃত্যুর সুবিচারের জন্য নিজেই মামলা লড়বেন তিনি। “নিজের সঙ্গেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভাল রেজাল্ট করার জন্য উঠেপরে লাগি। আমি ছোটবেলা থেকে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি যাতে কেউ সেই অভিজ্ঞতার সাক্ষী না হন সেই জন্য আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে শুরু করি।“ বাবার ইচ্ছা ছিল, বড় মেয়ে শ্রেয়া বড় হয়ে ডাক্তার হবে। সেই অনুযায়ী, ডাক্তারি নিয়ে পড়ছেন শ্রেয়া। কিন্তু সাত বছর বয়স থেকে মায়ের একার লড়াই দেখতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া সৃজার কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল আরও বড়। বাবার মামলা নিজেই লড়ার। সর্বভারতীয় এই প্রবেশিকায় মেধা তালিকায় স্থান পাওয়ার পর সবার লক্ষ্য যে প্রতিষ্ঠানে পড়ার সেই বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ল স্কুল অফ ইন্ডিয়া দেশের সেরা ল স্কুল বলে পরিচিত। কিন্তু কোথাও না গিয়ে এ রাজ্যেই পড়াশোনা করতে চান সৃজা। এক নতুন লড়াইয়ের জন্য তৈরি হতে চান তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.