ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: কাতারে বিশ্বকাপ ঘিরে উন্মাদনা কলকাতাবাসীর। বছর কয়েক আগে এই কাতারে বসেই বাংলাদেশে তোলাবাজি করত সেদেশের ত্রাস তথা কুখ্যাত অপরাধী নুর উন লতিফ নবি, যে পরিচিত ছিল ‘ম্যাক্সন’ নামে। অনেকে তাকে বলত ‘জঙ্গি নেতা’। কাতার থেকে চোরাপথে কলকাতায় এসে লিভ ইন শুরু করেছিল এক যুবতীর সঙ্গে। কলকাতায় গ্রেপ্তারির পর পেয়েছিল জামিন। সম্প্রতি দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুরে থাকত ওই বান্ধবীর সঙ্গে। মঙ্গলবার বেশি রাতে ঘরের ভিতর থেকে তার দেহ উদ্ধার করেন ওই যুবতী। গলায় ছিল ওড়নার ফাঁস। ওই মৃত্যু ঘিরে দানা বেঁধেছে রহস্য।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, আত্মঘাতী হয়েছে ম্যাক্সন। জামিন পাওয়ার পর হাতে কোনও কাজ ছিল না তার। তাই বান্ধবীর রোজগারের উপরই নির্ভর হয়ে ছিল সে। মাদক সেবন নিত্যকার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর তা নিয়েই যুগলের মধ্যে গোলমাল বাঁধত। বান্ধবীর সঙ্গে গোলমালের জেরে সে আত্মঘাতী হয়েছে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
বাংলাদেশের সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিল ম্যাক্সন। বাংলাদেশে তোলাবাজি থেকে শুরু করে অস্ত্র সরবরাহ, বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল সে। বাংলাদেশ থেকে পলাতক অপরাধী করোনা পরিস্থিতির আগেই মধ্য প্রাচ্যের কাতার থেকে চোরাপথে ভারতে প্রবেশ করে। চলে আসে কলকাতায়। নিজেকে নিউ মার্কেটের মাছের ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিয়ে এক যুবতীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। লকডাউনের সময় থেকে তাঁর সঙ্গেই লিভ ইন শুরু করে ম্যাক্সন। ভোল বদলে লতিফ নবি হয়ে যায় তমাল চৌধুরী। ওই নামেই ভুয়ো পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট তৈরি করে। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের পুলিশ ও র্যাবের কাছ থেকে গোপনে খবর পেয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ডানলপের কাছ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বরানগর থানা ও সিআইডি।
বাংলাদেশি ওই যুবকের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ, জালিয়াতি, প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়। প্রথমে পুলিশ ও জেল হেফাজতে থাকে। এর কয়েকমাস পর বারাকপুরের মহকুমা আদালত থেকে জামিনও পেয়ে যায় সে। এরপর সে ডানলপের ডেরা বদলে বান্ধবীকে নিয়ে গত এপ্রিল থেকে হরিদেবপুরের মতিলাল গুপ্ত রোডে ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করে। তখন বাংলাদেশ পুলিশও তাকে খুঁজছিল। বেকার অবস্থায় মাদক নিতে থাকে সে। তার বান্ধবী বরানগরের একটি শপিং মলে চাকরি করেন। গত এক সপ্তাহ ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিল। বান্ধবীর সঙ্গে একাধিকবার গোলমালও করে। মাদক নিতে বারণ করা হলেও কর্ণপাত করত না।
মঙ্গলবার সকালে ওই যুবতী কাজে বেরন। রাত ন’টা নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখেন দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। অনেকক্ষণ ধরে কোনও সাড়া না পাওয়ায় এলাকার বাসিন্দাদের সাহায্যে তিনি দরজার লক ভাঙেন। দেখেন, ঘরের মেঝেয় পড়ে রয়েছে ম্যাক্সন। তার গলায় ওড়নার ফাঁস বাঁধা। আর ওই ওড়নার বাকি ছেঁড়া অংশ ঝুলছে সিলিং ফ্যান থেকে। বেশি রাতে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। মৃত্যুর খবর বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
২০১১ সালে চট্টগ্রামের ব্রাহ্মণবেড়িয়া থেকে ম্যাক্সন ও বায়াজিদ থেকে সারোয়ার এবং গিত্তু মানিককে র্যাব গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় একে ৪৭ ও প্রচুর বুলেট। সারোয়ার ও ম্যাক্সন চট্টগ্রামের জেলে বসেই তোলাবাজি চালাত। ২০১৭ সালে সারোয়ার, ম্যাক্সন জামিন পাওয়ার পর চোরাপথে কাতার পালায়। চট্টগ্রামের স্কুলছাত্রী খুনের অভিযুক্ত সঙ্গী এক্রামও তাদের পিছু নেয়। কাতারে বসে বাংলাদেশে ক্রমাগত তোলাবাজি করতে থাকে। এক গাড়ি ব্যবসায়ী টাকা দিতে না চাইলে তাঁর বাড়ির সামনে ম্যাক্সনের অনুগামীরা বোমা ছোঁড়ে। সেই অভিযোগে গ্রেপ্তার হয় পাঁচজন। এরপর কাতার পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে লকডাউনের আগে কলকাতায় পালিয়ে আসে ম্যাক্সন। তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.