Advertisement
Advertisement

Breaking News

হাসপাতালে জরায়ুর বাইরেই প্রাণ পেল শিশু, কীর্তি ন্যাশনাল মেডিক্যালের

এই অসাধ্য সাধন করেছেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তাররা।

The child was born outside the uterus in the hospital
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:July 3, 2018 10:04 am
  • Updated:July 3, 2018 10:04 am

গৌতম ব্রহ্ম: প্রসব বেদনায় প্রসূতি ছটফট করছিলেন। ঝুঁকি না নিয়ে বারুইপুর হাসপাতালের চিকিৎসকরা সিজার করলেন। কিন্তু এ কী? বাচ্চা কোথায়? জরায়ু তো খাঁ খাঁ! ধড়াস করে ওঠে ডাক্তারবাবুর বুক। তড়িঘড়ি প্রসূতির পেট সেলাই করে তাঁকে পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। নোট দেন ‘এক্সট্রা ইউটেরিয়ান প্রেগন্যান্সি’।

গত শুক্রবার অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় মাবিয়া মণ্ডল নামে ওই মহিলাকে পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ভরতি করা হয় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হীরালাল কোনারের অধীনে। দেরি করেননি হীরালালবাবু। দ্রুত সিজার করেন। দেখেন, বাচ্চা রয়েছে পেটের ভিতর, পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটিতে। চিকিৎসক মহলের দাবি, এমন ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম। কোটিতে একটা হয় না। হলেও বাচ্চা পরিণতি পায় না। পরিণতি পেলে জীবন্ত ভূমিষ্ঠ হয় না।

Advertisement

লোকসভার রণকৌশল প্রস্তুত করতে প্রদেশ নেতৃত্বকে জরুরি তলব রাহুল গান্ধীর ]

Advertisement

কিন্তু এক্ষেত্রে সবাইকে অবাক করে শিশুটি জীবন্ত ভূমিষ্ঠ হয়েছে। যদিও ওজন অনেকটাই কম ছিল। মাত্র ১.৭৫ কেজি। অস্ত্রোপচারের পর মা’র প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল। কিন্তু অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই রক্তপাত বন্ধ করেন ন্যাশনালের ডাক্তারবাবুরা। মা ও সন্তান দু’জনেই সুস্থ রয়েছেন।

আর এই ঘটনার সূত্র ধরেই চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে ন্যাশনালের স্ত্রীরোগ বিভাগ। ন্যাশনালের সাফল্যকে কুর্নিশ জানিয়েছেন রাজে্যর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা তথা বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবাশিস ভট্টাচার্য। তিনি জানান, বিরল বলেই এই অস্ত্রোপচারের অভিজ্ঞতা নেই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের।  তাছাড়া ঝুঁকিও অনেক। সব সামলে ন্যাশনাল অতুলনীয় কৃতিত্ব দেখিয়েছে। একই বক্তব্য বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পল্লব গঙ্গোপাধ্যায়ের। তাঁর মত, অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সিতে জীবন্ত বাচ্চার জন্ম খুবই বিরল। ২-৩ কোটিতে একজনেরও হয় কি না সন্দেহ। ফলত এই সার্জারি করা খুবই কঠিন। পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা ও পরিকাঠামো না থাকলে এগোনো উচিত নয়। সেই নিরিখে বারুইপুর হাসপাতাল সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

[ ভোটের আগে দপ্তর ঢেলে সাজাতে উদ্যোগ রাজ্যের, তৈরি নতুন কমিটি ]

চিকিৎসকরা বলছেন, ফ্যালোপিয়ান টিউবে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলনের পর জাইগোট জরায়ুতে গিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। তারপর প্ল্যাসেন্টার উপর বাচ্চা বেড়ে ওঠে। প্ল্যাসেন্টা থেকে অ্যাম্বিলিকাল কর্ডের জন্ম। যার মাধ্যমে বাচ্চা পুষ্টিরস পায়। জরায়ু ছাড়া অন্যত্র প্ল্যাসেন্টা প্রতিস্থাপিত হওয়া মুশকিল এবং বিপজ্জনক। হলেও বাচ্চার পূর্ণতা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ, বাচ্চার কথা ভেবেই জরায়ুর পেশীতে রক্তপ্রবাহ অত্যন্ত বেশি। যাতে পুষ্টির কোনও ঘাটতি না হয়। তাই জরায়ুর পেশীর উপর প্ল্যাসেন্টা প্রতিস্থাপিত হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটিতে বাচ্চাটি বড় হয়েছে। বেঁচে থেকে ভূমিষ্ঠও হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, নিয়মের বাইরে গিয়েই মাবিয়ার ফ্যালোপিয়ান টিউব থেকে পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটিতে কোনও ধমনীর উপর ঘাটি গেড়েছিল জাইগোটটি। সেখানেই বেড়ে উঠেছে, পূর্ণতা পেয়েছে। ধমনীর রক্তপ্রবাহ থেকে পুষ্টি নিয়ে পৃথিবীর আলো দেখেছে। এমন ঘটনা বাস্তবিকই বিরলের মধ্যে বিরলতম। এমনটাই জানালেন ন্যাশনালের স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান ডা. আরতি বিশ্বাস। হীরালালবাবুও বলেন, ‘সেকেন্ডারি অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি’ অত্যন্ত বিরল। শিশুকে বাঁচানো আরও কঠিন। কিন্তু এক্ষেত্রে মা ও শিশু, দু’জনকেই আমরা সুস্থ রাখতে পেরেছি।”

ভূস্বর্গে পৌঁছানো এবার আরও সহজ, শিয়ালদহ থেকে ছাড়ছে নতুন সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ]

মাবিয়ার বাড়ি বারুইপুরের সূর্যপুরে। প্রসব বেদনা ওঠায় শুক্রবার তাঁকে বারুইপুর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। চিকিৎসকরা প্রথমে স্বাভাবিক প্রসব করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিস্থিতি জটিল দেখে সিজারের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পেটে কাটার পর বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান তাঁরা। আরতিদেবী জানিয়েছেন, ফ্যালোপিয়ান টিউবে বা ডিম্বাশয়ে জাইগোট আটকে বড় হয়েছে। টিউব ফাটিয়ে দিয়েছে। এমন উদাহরণ রয়েছে। দুই জরায়ু বিশিষ্ট প্রসূতিও ধাঁধায় ফেলেছেন চিকিৎসকদের। কিন্তু, পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটিতে একটি শিশুর পূর্ণতা পেয়ে জীবন্ত ভূমিষ্ঠ হওয়াটা বেনজির।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ