স্টাফ রিপোর্টার: শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব কমতেই বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা উসকে দিলেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। প্রাক্তন মন্ত্রী তথা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিজেপি যাত্রার পরই হঠাৎ করে তৃণমূল কংগ্রেসে গুরুত্ব বেড়েছিল রত্না চট্টোপাধ্যায়ের। এদিকে ভাইফোঁটায় কালীঘাটের বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গিয়েছিলেন শোভন। সঙ্গে ছিলেন বৈশাখী। সেদিন মুখ্যমন্ত্রী শোভনকে ‘কাজে ফিরতে’ বলেছিলেন বলে খবর। এর দু’দিন বাদে শোভনের ‘ওয়াই ক্যাটেগরি’র নিরাপত্তা ফিরিয়ে দেয় রাজ্য সরকার। তার রেশ কাটতে না কাটতেই অবস্থা বুঝে রত্না বিজেপির আরও কাছে চলে গিয়েছেন বলে খবর।
বেলেঘাটায় একটি জগদ্ধাত্রী পুজোর নিমন্ত্রণে গিয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁর সঙ্গে কথা বলেন রত্না। বৈঠকের কথা স্বীকারও করেছেন সৌমিত্র। কিছুটা ধোঁয়াশা রেখে তিনি জানিয়েছেন, “রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীদের সাক্ষাৎ হলে রাজনীতি নিয়েই তো আলোচনা হবে। এটাই তো স্বাভাবিক। ওঁর সঙ্গেও অনেক কথা হয়েছে।” তবে এই জল্পনা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি রত্না।
তৃণমূল কংগ্রেসে যখন শোভনবাবু ছিলেন, তখন তাঁর স্ত্রী রত্নার গুরুত্ব যে কার্যত তেমন কিছুই ছিল না, তা জানে রাজনৈতিক মহল। কিন্তু ঘটনা পরম্পরায় শোভনবাবুর সঙ্গে দলের দূরত্ব বাড়ে। যদিও, মন্ত্রী-মেয়র পদ ছেড়ে দেওয়ার পরও দলের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলতে দেখা যায়নি প্রাক্তন মেয়রকে। এই সময় থেকেই হঠাৎই দলে সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা যায় রত্নাকে। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরও অবশ্য তৃণমূলে রত্নার গুরুত্ব সেভাবে বাড়েনি বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। কিন্তু কেউ কেউ তাঁকে শোভনবাবুর বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর চেষ্টাও চালান। তার পরও দলে সেভাবে নিজের প্রভাব না থাকায় রত্না বিকল্প পথ খুঁজছেন বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। তাই বিজেপির সঙ্গে শোভনের সম্পর্ক আলগা হতেই সুযোগ-সুবিধার খোঁজে গেরুয়া নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগের পথ খুলে দিয়েছেন রত্না।
বেলেঘাটার অনুষ্ঠানে সৌমিত্র খাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী সুজাতা খাঁও। সেখানে রত্নার সঙ্গে আড্ডা দিতে দেখা দেওয়ার পরই জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। সৌমিত্র জানান, “শোভন-বৈশাখী জল্পনা শেষ। যদিও ওঁর বিজেপিতে যোগদান নিয়ে কথা হয়নি। উনি যদি আসতে চান তা হলে উচ্চ নেতৃত্বকে জানাব। তাঁরা যদি স্বাগত জানান, তা হলে বিজেপি আরও শক্তিশালী হবে।” রত্না বিজেপিতে যোগদান করছেন? সৌমিত্র খাঁ জল্পনা জিইয়ে রেখে জানান, “আমার সঙ্গে এ বিষয়ে রত্নাদেবীর কোনও কথা হয়নি। কিন্তু রাজনৈতিক বিষয়ে অনেক কথা হয়েছে।” তবে কী সেই রাজনৈতিক আলোচনা, তা খোলসা করেননি সৌমিত্র।
এদিকে দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে বরাবরই নিবিড় সম্পর্ক রেখে চলেছেন রত্না। এরই মধ্যে বুধবার দেবশ্রীর লেখা একটি চিঠি প্রকাশ্যে আসে। তাতে তিনি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকে জানিয়েছেন যে, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলে তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে আগ্রহী। যদিও এই চিঠি জাল ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন দেবশ্রী। কিন্তু শোভনবাবু যখন তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপির দিকে গিয়েছিলেন, তখন রত্না-দেবশ্রী সবাই এক হয়ে তাঁকে আক্রমণ করেছিলেন। এখন দেবশ্রীর চিঠি প্রকাশ্যে আসা এবং রত্নার বিজেপি সাংসদের সঙ্গে আলোচনা ফের নতুন রাজনৈতিক ইঙ্গিত দিচ্ছে বলেই মত অভিজ্ঞ মহলের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.