গৌতম ভট্টাচার্য: ২০১১, ২০১৬ – জোড়াফুলের প্রতিনিধি হয়ে জোড়া জয়ের মুখ দেখা হয়ে গিয়েছে। সামনে হ্যাটট্রিকের হাতছানি। তবে একুশের ভোটযুদ্ধে প্রতিপক্ষ আবার একদা সতীর্থ। ফলে নিজের কেন্দ্র বিধাননগরে লড়াই খানিকটা কঠিন। কিন্তু তা মোটেই মানতে চাইছেন না বিধাননগরের তৃণমূল (TMC) প্রার্থী তথা রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রী সুজিত বসু (Sujit Bose)। ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলছেন, ”প্রতিবারই লড়াই কঠিন থাকে। আমার জয় নিয়ে চ্যালেঞ্জ থাকে। তবু প্রতিবার জিতি। মানুষের ভোটে জিতি, ছাপ্পায় জিতি না। আমি সবসময়ে মনে করি, মানুষ গণতন্ত্রের উৎসবে ভালভাব অংশ নিক, কেউ ভয় পেয়ে যেন পিছিয়ে না যান।”
বিধাননগর (Bidhannagar) এলাকার রাজনীতিতে সুজিত বসুর উত্থান অনেকের জানা। একদা বাম রাজনীতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন সুজিত। ছিলেন বাম আমলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর ছায়াসঙ্গী। পরে অবশ্য বাম সংসর্গ ছিন্ন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় ঘাসফুল শিবিরে যোগ দেন। সুভাষ চক্রবর্তীর মৃত্যুর পর ২০০৯ সালে বিধাননগরে উপনির্বাচনে তাঁর স্ত্রী রমলা চক্রবর্তীকে হারিয়ে প্রথমবার বিধায়ক হন সুজিত বসু। আর বড় লড়াইয়ে নামেন ২০১১ সালে। বাম জমানার পতন ঘটাতে বিধাননগরে সফলই হন। রাজনৈতিক জীবনে সুভাষ চক্রবর্তীর অবদানের কথা স্বীকারও করেন তিনি। সুজিতের কথায়, ”রাজনীতিতে আমার দুই গুরু – সুভাষবাবু আর মমতাদি।”
[আরও পড়ুন: ‘শান্তিপূর্ণ ভোট চান না মমতা’, তৃণমূল নেত্রীর ‘CRPF ঘেরাও’ মন্তব্যের জবাব দিলেন শাহ]
দশ বছর পর ফের সেই লড়াই, বদলেছে শুধু প্রতিপক্ষ। একদা সতীর্থ এখনকার প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি আবার আরেক হেভিওয়েট – বিধাননগর পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচী দত্ত। ভোটযুদ্ধের এই সমীকরণ নিয়ে সুজিতের বক্তব্য, ”৪ বছর মেয়র ছিল সব্যসাচী। কী কাজ করেছে? কোনও উন্নয়ন করেনি। উলটে মানুষকে আরও কষ্ট দিয়েছে। তবে হ্যাঁ, বিশেষ বিশেষ মানুষের জন্য কাজ করেছে। আমি যেসব কাজ করেছি, তা চোখে দেখা যায়। ও তলে তলে সিন্ডিকেটকে শক্ত করেছে। তাই এই লড়াই সিন্ডিকেট বনাম ভিশনারির।”
[আরও পড়ুন: পুরনো বচসার জেরে একবালপুরে কিশোরকে পিটিয়ে খুন, পুলিশের জালে দাদা]
প্রার্থীর সঙ্গে আড্ডা এবার কিছুটা অন্যদিকে গড়াল, খানিকটা ব্যক্তিগত স্তরে। একসময়ে বাবুল সুপ্রিয়, মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক ছিল সুজিত বসুর। সময়ে-অসময়ে, সুখে-দুঃখে সবসময় পাশে ছিলেন তিনি। কিন্তু এই দু’জনই এখন বিজেপি শিবিরে। এই বদলটা কীভাবে দেখছেন সুজিত? এ বিষয়ে খানিকটা উদাসীন দেখাল তাঁকে। বললেন, ”মিঠুনদা কিংবা বাবুলের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই ভাল। তবে ওঁরা কী রাজনীতি করবেন, তা ওঁদের ব্যাপার। এ নিয়ে আমার বলার কিছু থাকতে পারে না।” এ প্রসঙ্গে জানালেন তাঁর সঙ্গে মিঠুন ও বাবুল সুপ্রিয়র সম্পর্কের রসায়নের কথাও। কীভাবে, কার লড়াইয়ে কতটা সঙ্গ দিয়েছেন, তাও আর গোপন রাখলেন না সুজিত বসু। শেষমেশ এই শুভেচ্ছাই জানালেন, সবাই ভাল থাকুন। ভোটপর্ব শেষের আগে বিরোধীদের প্রতিও সৌজন্য দেখালেন বহু যুদ্ধের সৈনিক সুজিত বসু। ‘বন্ধু’র বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধের পর শেষ হাসি কি তোলা থাকবে তাঁর জন্যই? এই উত্তর মিলবে ২ মে।