অভিরূপ দাস: জন্ম থেকেই হৃৎপিণ্ডে (Heart) ত্রুটি। চিকিৎসা শাস্ত্রে অত্যন্ত স্বাভাবিক যে অসুখের নাম পিডিএ বা পেটেন্ট ডাক্টাস আর্টেরিওসিস। দেশের মধ্যে এ পর্যন্ত যত শিশুর এই ধমনী মেরামত হয়েছে তাদের ওজন ছিল ৯০০ গ্রামের উপরে। দেশের মধ্যে দুর্বলতম (৮২০ গ্রাম) শিশুর শরীরে এবার অস্ত্রোপচার করল হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতাল।
কীসের অসুখ পিডিএ? শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুমিতা সাহা জানিয়েছেন, শিশু যখন মায়ের গর্ভে থাকে তখন তার হার্টের প্রধান ধমনীর সঙ্গে ফুসফুসের প্রধান ধমনীর সংযোগ থাকে। ভ্রূণ অবস্থায় এর সাহায্যেই মায়ের থেকে শিশুর ফুসফুস অক্সিজেন যুক্ত রক্ত পায়। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার দু-তিনদিনের মধ্যেই ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডের এই সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যদি এই সংযোগ থেকে যায় তখনই শুরু হয় সমস্যা। যে সমস্যা হয়েছিল হাবড়ার অশোকনগরের এই একরত্তির। অবস্থা বেগতিক দেখে জন্মের পাঁচ ঘণ্টা পরেই তাকে কোলে নিয়ে বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে এসেছিলেন শিশুটির মা–বাবা।
ইকোকার্ডিওগ্রাফি করে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন হৃদপিণ্ডের দুই মহাধমনীর মাঝখানে একটি বাড়তি পাইপ রয়েছে। যার জেরে কিছুই খেতে পারছে না শিশুটি। প্রথমে ওষুধ দিয়ে কমানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু লাভ হয়নি। অস্ত্রোপচার করে ওই বাড়তি পাইপ মেরামত করা যেত। কিন্তু এত ছোট বাচ্চার ক্ষেত্রে তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। একশো জনের মধ্যে ১০ জনকে বাঁচানো যায় না অস্ত্রোপচারে। সেই ঝুঁকি না নিয়ে ‘নন সার্জিকাল’ প্রক্রিয়ায় সাড়ানোর চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা। ব্যবহার করা হয় পিকোলো ডিভাইস। কোমরের আর্টারি থেকে সরু একটা পাইপ প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। তার মাথায় ছিল ধাতব টুকরো। সেই পাইপ ঢুকিয়ে মেরামত করা হল পিডিএ। বছর দুয়েক আগে ২০১৯ সালে এফডিএ প্রথম ছাড়পত্র দেয় এই যন্ত্রকে। কিন্তু এত ছোট বাচ্চার ক্ষেত্রে দেশে তা আগে ব্যবহার হয়নি।
গত ৬ জুন ভূমিষ্ঠ হয় শিশু। তখন তার ওজন ছিল মাত্র ৭২০ গ্রাম। এত ছোট শিশুর ক্ষেত্রে পিডিএ মেরামত করা সম্ভব ছিল না। চিকিৎসকরা চেয়েছিলেন ওজন বাড়লে অস্ত্রোপচার করবেন। কিন্তু ৮২০ গ্রামে এসে থমকে যায় ওজন। হৃৎপিণ্ড স্বাভাবিক ভাবে কাজ না করায় খেতে পারছিল না সে। কাজ করছিল না কিডনিও। শেষমেশ ৮২০ গ্রামের শিশুকেই অস্ত্রোপচার করে রেকর্ড করলেন ডা. সুমিতা সাহা, ডা. ধ্রীতব্রত দাস, ডা. অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়। বাইপাসের হাসপাতাল থেকে হাওড়ায় কেন আনতে হল শিশুটিকে? এহেন অস্ত্রোপচারের জন্য দরকার তিন বিশেষজ্ঞর। পেডিয়াট্রিক কার্ডোলজিস্ট, পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জন এবং নিওন্যাটোলজিস্ট। প্রথম দুই বিভাগ থাকলেও নিওন্যাটোলজি বিভাগ ছিল না হাওড়ার হাসপাতালে। ডা. সুমিতা সাহার তত্ত্বাবধানে অস্থায়ী নিওন্যাটোলজি বিভাগ তৈরি করা হয় শুধুমাত্র এই শিশুটির অস্ত্রোপচারের জন্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.