Advertisement
Advertisement

বাড়িতে পোষা কুকুর, বিড়াল আছে? জানেন নিজের কী ক্ষতি করছেন?

সাবধান! প্রিয় পোষ্যটি কিন্তু আপনার বিপদের কারণ হতে পারে!

Adorable pets can be disease hub, reveals study
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:March 27, 2018 6:58 pm
  • Updated:March 27, 2018 9:27 pm  

ভালবাসুন। যত্নে রাখুন। পরিচ্ছন্ন রাখুন। পোষ্য থেকে অসুখ এড়ানোর পরামর্শে রুবি হাসপাতালের জেনারেল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অমিতাভ সাহা। লিখছেন সোমা মজুমদার।

রোগ ধরা পড়ছিল না কিছুতেই। শুধু প্রচণ্ড জ্বর। শেষে নিউমোনিয়া হয়ে মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন শমীকবাবু। বহু ডাক্তার দেখিয়েও অসুখের কারণ অনুসন্ধান করা যাচ্ছিল না। শেষে একদিন রোগীর বাড়ির সদস্যদের ব্যাপারে খোঁজ করে জানা গেল, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে আর পোষ্য টিয়া নিয়ে সংসার ৩৯ বছরের শমীকবাবুর। তখনই মনে খটকা লাগে ডাক্তারবাবুর। অসুখটা সিটাকোসিস নয় তো? পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ঠিক সেটাই ধরা পড়ল।

Advertisement

শুধু পোষা কুকুর, বিড়াল, মুরগি, ছাগল, গরু কেন! খরগোশ, ঘোড়া এমনকী টিয়া, ময়নার মতো রকমারি পাখি কিংবা অ্যাকোরারিয়ামে থাকা রংবেরঙের মাছের জন্য জটিল অসুখে আক্রান্ত হতে পারেন মনিব ও তাঁর পরিবার।

বাড়ির সদস্যদের মনের অনেকটা জায়গা জুড়ে থাকে। আবেগের অংশীদার হয়ে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে গৃহপালিত পশু-পাখি বাড়ির একজন সদস্য হয়ে ওঠে। আর অনেকেই পোষ্যর সঙ্গে মেশার সময় প্রাথমিক সাবধানতাও অবলম্বন করতে চান না। খানিকটা সচেতনতার অভাবে এই সব নিরীহ জীব থেকে কত বড় রোগ সংক্রমিত হতে পারে তা ভুলে যান। কেউ পোষ্যের সামান্য কামড়ানো বা আঁচড়ানোকে তোয়াক্কা করেন না। ফলে অজান্তে মারাত্মক রোগের কবলে পড়তে হয় প্রভুকে।

hR-BbEpm_400x400

[গরমেও নিজেকে আকর্ষণীয় রাখতে মেনে চলুন এই নিয়মগুলি]

রোগ-সংক্রমণ

গৃহপালিত পশু থেকে হওয়া কিংবা সংক্রামিত বিভিন্ন রোগকে জুনোসিস বলা হয়।

ব্যাকটেরিয়া বাহিত রোগ

১. অ্যানিম্যাল বাইট–  কুকুর, বিড়াল-সহ যে কোনও পশুর মুখের ভিতরে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে। কোনও মানুষকে কামড়ানোর সময় সেই ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে প্রবেশ করে যা থেকে ইনফেকশন হয়।

২. ক্যাট স্ক্র‌্যাচ ফিভার- বারটোনেল্লা নামে একটি অতি ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া থেকে এই রোগটি হয়। এর ফলে জ্বর হয়, লিম্ফ নোড ফুলে যায়। আঁচড়ের স্থানে ফোসকার মতো হয়। এর চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন।

৩. মাইকোব্যাকটেরিয়াম ইনফেকশন– এই রোগকে মাইকোব্যাকটেরিয়ার গ্রানুলোমাও বলে।  অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছ দীর্ঘদিন পরিচর্যা করলে হতে পারে। মাছের থেকে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার মানুষের শরীরে প্রবেশের পর প্রধানত হাতের চারদিকে দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে ইনফেকশন হতে দেখা যায়। এর পর তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে ত্বকের কোষে ক্ষতি হয় এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়।

৪. মাইকোব্যাকটেরিয়াম এভিয়াম ইনট্রাকুলার– পাখি ও শুয়োরের দেহ থেকে মানব শরীরে ব্যাকটেরিয়াবাহিত এই রোগটি হতে পারে। গ্ল্যান্ড ফুলে যায়, এডসের মতো দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমলে এর প্রকোপ বাড়ে।

৫. সিটাকোসিস– ক্ল্যামিডোফিলা সিট্টাফি নামক একটি ব্যাকটেরিয়া থেকে হয়ে থাকে। টিয়া, পায়রা, কাকাতুয়া, ম্যাকাও, মুরগি, হাঁস-সহ বিভিন্ন পাখির এই রোগ হয়। এদের সংস্পর্শে দীর্ঘদিন থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে। এই রোগের লক্ষণ হিসাবেও নিউমোনিয়াও হতে পারে।

৬. কিউ ফিভার– এটি কক্সিয়েল্লা বার্নেট্টি নামক একটি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে হয় যা প্রধানত গরু, ভেড়া ও ছাগলের শরীরে থাকে। কোনও সংক্রামিত এই ধরনের পশুর দ্বারা দূষিত বাতাসে নিঃশ্বাস নিলে কিংবা পশুদের মূত্র থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের তিন সপ্তাহের মধ্যে ফ্লু-এর মতো লক্ষণ দেখা যায়। যা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যেতে পারে। কখনও সুস্থ হতে দীর্ঘদিন লেগে যায়। হার্ট, লিভার, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসের ক্ষতি করে।

৭. সালমোনেলাসিস– সালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া গবাদি পশুর ক্ষুদ্রান্ত্রে থাকে। আর এই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দূষিত জল বা খাবার থেকে মানুষের শরীরে এই রোগ হয়। এই রোগের লক্ষণ হল ডাইরিয়া, জ্বর, পেটে ব্যথা, বমি ইত্যাদি।

৮. টিউবারকিউলোসিস– বোভাইন টিউবারকিউলোসিস আমাদের দেশে ব্যতিক্রমী রোগ নয়। বিভিন্ন ধরনের গৃহপালিত পশুর মাধ্যমেই মানুষের শরীরে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। টিবি রোগের ব্যাকটেরিয়া টিউবারকিউলোসিসের থেকে এটি পৃথক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। এই রোগে কখনও কখনও টিবির উপসর্গ দেখা যায় আবার কখনও আলাদা লক্ষণও হতে পারে। ব্রুসোলোসিস, লেপটোস্পাইরোসিস, লিসটেরিওসিস রোগও গরু, ছাগল থেকে ব্যাকটেরিয়া বাহিত রোগ। ফুসফুস ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হয়।

Anushka-Sharma-throwback-Sultan

[মনের মানুষকে প্রেম নিবেদনের আগে এই ৬টি বিষয় মাথায় রাখুন]

প্রোটোজোয়া বাহিত রোগ

১. জিয়ারডিয়া ইনফেকশন- গবাদি পশুর মল, মূত্র থেকে জিয়ারডিয়া প্রোটোজোয়া রোগ ছড়ায়। এই ইনফেকশনের ফলে পেটে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, ডাইরিয়া ও কলেরা হতে পারে।

২. টোক্সোপ্লাসমোসিস- বিড়ালের মল, মূত্র থেকে হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে এবং বয়স্কদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের এই রোগ হলে বিপদ।

৩. ফাংগাস বাহিত রোগ- গৃহপালিত পশুর থেকে ফাংগাস বাহিত রোগ দাদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, ত্বকে গোলাকৃতি ইনফেকশন হয়।

৪. পরজীবী বাহিত রোগ- প্রধানত ইকাইনোকক্কাস গ্র‌্যানুলস পরজীবীর কারণে হয় যা কুকুরের ক্ষুদ্রান্ত্রে থাকে। এই পরজীবীর দ্বারা সংক্রামিত কোনও কুকুরের মলের সংস্পর্শে এলে মানুষের শরীরে এই রোগটি হয়। এর ফলে লিভার ও অন্য অঙ্গে সিস্ট হতে পারে।

৫. ভাইরাস বাহিত রোগ- জলাতঙ্ক-কুকুর কামড়ালে বা আঁচড়ালে জলাতঙ্ক হয়। ক্ষত কতটা তার উপর ভ্যাকসিন ও ইমুনোগ্লোবিউলিনের প্রয়োজন হয়। চিকিৎসা না করলে মৃত্যু হতে পারে।

download

সাবধান

  • গৃহপালিতর থাকার জায়গা মল, মূত্র ভালভাবে পরিষ্কার করুন। গৃহপালিত কামড়ে বা আঁচড়ে দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • পরিচর্যার সময় গ্লাভস, বুট-জুতো, অ্যাপ্রন, চশমা ব্যবহার করুন।
  • গৃহপালিতকে নিয়মিত ভ্যাকসিন দিতে হবে। অসুস্থ হলে পশু চিকিৎসককে দেখান।

পরামর্শে যোগাযোগ করুন : ৯৮৩০৪৫৭৪৪৪

 

ভ্যাকসিন

  • গরু– অ্যানথ্রাক্স স্পোর ভ্যাকসিন(৪ মাস বয়সে প্রথম। তারপর বর্ষার আগে)
  • ছাগল– এফএমডি(ছ’মাস অন্তর), পিপিআর(বছরে একবার)
  • কুকুর– কোরোনা ভ্যাকসিন(জন্মের পর ৪২তম দিনে)
  • মুরগি– রানিক্ষেত রোগের জন্য এফ১ ভ্যাকসিন, ২৪ দিন বয়সে
  • শুয়োর– সোয়াইন ফিভার এড়াতে ২ মাস বয়সে ভ্যাকসিন দিতে হবে। চার মাসের পর থেকে বুস্টার
  • হাঁস– ডাক প্লেগ এড়ানোর ভ্যাকসিন দিতে হবে। জন্মের চার সপ্তাহে।
  • ভেড়া– সিসিপিপি ভ্যাকসিন(প্রথমে ছ’মাস বয়সে। তারপর বছরে একবার)
  • পাখি– পলিমাভাইরাস বুস্টার ডোজ(একবার দেওয়ার পর ২১ দিন অন্তর দিতে হবে)

পশুর রোম থেকে বাচ্চা ও বয়স্কদের শ্বাসকষ্টের প্রবণতা বাড়ছে। তাই পোষ্যকে পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা উচিত। পোষ্যর রোমে উকুন হয়। তাই চিরুনি দিয়ে আলতো করে আঁচড়ে দিন। ডেটল দিয়ে ঘর পরিষ্কার করুন। নিজে অসুস্থ থাকলে পোষ্যর কাছাকাছি যাবেন না। আপনার অসুখ পোষ্যর শরীরে ছড়াতে পারে। পোষ্যর মুখে মুখ ঠেকিয়ে আদর করবেন না। পশুর মুখের ব্যাকটেরিয়া থেকে ইনফেকশন হতে পারে। পোষ্যকে প্রোটিন সমৃদ্ধ সুষম খাবার দিন।

এমনটাই জানাচ্ছেন,ওয়েস্ট বেঙ্গল ভেটিরনারি কাউন্সিলের সভাপতি ডা. জহরলাল চক্রবর্তী।

পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করুন: ৯৮৩০৬৫৪২৯৭

[এই পাঁচটি বিষয় স্বীকার করতে লজ্জা পান পুরুষরা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement