Advertisement
Advertisement

কেনা ঘিয়ে নেই চেনা গন্ধ, বাজার থেকে আনা প্রিয় জিনিসটা নকল নয়তো!

কীভাবে চিনবেন ভেজাল ঘি?

Adulterated ghee penetrates market, pose serious health hazard
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:March 21, 2018 10:36 am
  • Updated:August 6, 2019 3:56 pm

চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: চলছে বিয়ের মরশুম। বিয়ে মানে তো একেবারে জমজমাট বিষয়। হোম-যজ্ঞ যেমন আছে, তেমনই আছে ছাদনাতলার অনুষ্ঠান। আর সবচেয়ে বড় কথা হল বিয়ের ভোজ। গরম ভাতে ঘি। আহা! কিন্তু একবারও কী ভেবে দেখেছেন, পুরনো ঘিয়ের গন্ধ নেওয়াই ভাল, বাজার চলতি ঘিয়ের থেকে? দুধ মেরে মাখন তুলে এই ঘিও তৈরি হচ্ছে না। পুজোর উপকরণে ঠকলে সেটা ভগবান বুঝে নেবেন। আপনি তো ব্রাহ্মণকে পুজোর উপকরণ দিয়েই দায় সারলেন। কিন্তু এতগুলি লোককে যে নেমন্তন্ন করেছেন, খেয়ে যদি তাদের পেটের গোলমাল শুরু হয়, সেই দায় কি আপনি ঝেড়ে ফেলতে পারবেন? বলতেই পারেন, পাতে তো ঘি দেওয়ার চল উঠেছে। তাহলে ভয় কী? কিন্তু পাতে না দিলেও, বিভিন্ন রান্নাকে সুস্বাদু করতে ঘিয়ের ব্যবহার তো হয়ই। ফলে সাবধান। কারণ ঘিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ নকল ও ভেজাল ঘি তৈরি করে বাজারজাত করছে বলে অভিযোগ।

[ল্যাপটপে মুখ গুঁজে থাকা স্বভাব! জানেন কী বিপদ ডেকে আনছেন?]

Advertisement

নকল ঘি-তে ব্যবহার করা হচ্ছে সোয়াবিন, ভেজিটেবল ফ্যাট, রাসায়নিক দ্রব্য ও কলার ফ্লেভার। এ সকল নকল ঘি খাওয়ার ফলে জনসাধারন ক্যানসার, ডায়াবেটিস, কিডনির রোগ সহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। জেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে নকল ঘি তৈরির চক্র ও কারখানা। নকল ঘি, মধু, গোলাপ জল বানানোর কারখানার হদিশ মিলেছে। এছাড়া ভৌগোলিক অবস্থান এমনই যে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করা যায়। এনফোর্সমেন্ট বিভাগ সূত্রে খবর, রানিগঞ্জের সীমান্তের এলাকায় মতো এলাকায় কারখানা তৈরি করে উৎপাদিত ঘিয়ের কোটায় নামী দামী কোম্পানির লেবেল লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাজার জাত করা হয়।

Advertisement

কীভাবে তৈরি হয় নকল ঘি ?

দুধ ও ঘি ব্যবসায়ীরা এক মন দুধ থেকে আট কেজি ছানা ও তিন কেজি ননী তৈরি করেন। তিন কেজি ননী জ্বালিয়ে দেড় কেজি খাঁটি ঘি তৈরি করেন। অথচ অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লোভের আশায় খাঁটি ঘিয়ের সাথে নানা উপকরণ মিশিয়ে ভেজাল ঘি-কে খাঁটি ঘি হিসাবে বাজারজাত করছে। এই ঘি কিনে ক্রেতা সাধারণ শুধু আর্থিক ক্ষতির শিকারই হচ্ছেন না মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে সয়াবিন তেলের সাথে ১০ কেজি খাঁটি ঘি, পাঁচ কেজি গোল আলুর পেষ্ট, দুই কেজি ভেজিটেবল ফ্যাট ও কলার ফ্লেভার ভাল ভাবে মিশিয়ে নকল ঘি তৈরি করা হচ্ছে। ক্রেতাদের দেখে বোঝার উপায় থাকে না এটা নকল না আসল। ভেজাল ও নকল ঘি বাহ্যিক ভাবে দেখে চেনার উপায় থাকে না। প্রতি কেজি নকল ঘি তৈরিতে ব্যয় হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। আর বাজারে ও ক্রেতা সাধারনের কাজে বিক্রয় করছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি দরে। ভোক্তারা এই ভেজাল ঘি খেয়ে জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

[গরমে সুস্থ থাকতে ডায়েটে রাখুন এই সবজিগুলি]

পুষ্টি বিশেষঞ্জ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা জানান, খাঁটি ঘিয়ের গলনাঙ্ক থাকে ২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এর কম তাপ মাত্রায় জমাট না বাঁধলে বুঝতে হবে এতে ভেজাল রয়েছে। ২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বেশি তাপমাত্রায় ঘি জমে না। আসল ঘিয়ে জল থাকবে শূন্য দশমিক একভাগ। চিকিৎসকরা জানান ভেজাল ঘি খাওয়া মানে বিষ খাওয়া। এর ফলে দ্রুত কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, চোখের অসুখ বেড়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ব্যবসায়ীরাও মানছেন, ব্যবসায় অধিক লাভের আশায় মানুষ তাঁর মনুষ্যত্ব খুইয়ে ফেলছে দিন দিন। চাল-ডালে কাঁকর, ফলে রাসায়নিক পদার্থ, দুধে জল ইত্যাদি নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষ বিভিন্ন ভেজাল ব্যবহার এখন রোজকার ব্যাপার। পুলিশকে আরও সচেতন হতে হবে। বিশেষজ্ঞরা জানান সব ধরনের ভেজাল জিনিষ থেকে হয়তো খুব সহজেই নিস্তার পাওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু নিত্যব্যবহার্য কিছু জিনিষ ভেজাল মেশানো আছে কি না, তা পরখ করার পদ্ধতি রয়েছে।

দুধে ভেজাল

দুধ থেকে মাখন তুলে নিলে অথবা দুধে জল মেশালে দুধের আপেক্ষিক ঘনত্বের পরিবর্তন ঘটে। এটা ল্যাকটোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে খুব সহজেই ধরা পড়ে যায়। যন্ত্রকে ফাঁকি দেয়ার জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা আটা, গুঁড়া দুধ, ময়দা এমনকি চালের গুঁড়াও দুধের সাথে মেশান। এতে দুধের আপেক্ষিক ঘনত্বের খুব বেশি হেরফের হয় না। দুধে এসব ভেজাল মেশানো আছে কি না, তা বোঝার জন্য দু চামচ দুধ একটি কাপে নিন। এতে দুই ফোঁটা টিংচার আয়োডিন মিশিয়ে দিন। দুধের রং হালকা নীল হলে বুঝবেন এতে ভেজাল হিসেবে আটা বা ময়দা মেশানো রয়েছে।

ঘি বা মাখনে ভেজাল

বিশুদ্ধ ঘি বা মাখনে ভেজাল হিসেবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে বনস্পতি বা ডালডা। এক চামচ ঘি বা মাখন গলিয়ে একটি স্বচ্ছ কাচের বয়াম বা বোতলে রাখুন। এতে একই পরিমাণ মিউরিঅ্যাটিক অ্যাসিড ও সামান্য চিনি মেশান। এরপর এর মুখ বন্ধ করে খুব জোরে জোরে ঝাঁকান। কিছুক্ষণ ঝাঁকানোর পর পাত্রটি স্থির অবস্থায় রেখে দিন। কিছুক্ষণ পর এর নিচে যদি লাল রঙের আস্তর পরে তাহলে বুঝবেন এতে ভেজাল মেশানো রয়েছে।

ছবি : মৈনাক মুখোপাধ্যায়

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ