গৌতম ব্রহ্ম: ভয়ঙ্কর পেটের রোগ থেকে স্নায়ুর রোগ। ভাগাড়ের মাংসে লুকিয়ে হরেক বিপদ। ডায়েরিয়া, রক্ত আমাশা, টাইফেয়ড, নিউরো সিস্টিসারকোসিস। রোগের তালিকা দীর্ঘ। এর মধ্যে কয়েকটি আবার প্রাণঘাতী!
[ভাগাড়ের মাংস খাবারের পাতে! চক্রের খোঁজে কোলে মার্কেটে হানা পুরকর্মীদের]
বিপদসীমার উপরে যত বেশি থাকবে ব্যাকটিরিয়া, ততই রোগের ভয়াবহতা বাড়বে। বিশেষজ্ঞদের মত, ৪০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রায় যদি প্রিজারভেটিভ ছাড়া মাংস রেখে দেওয়া হয় তবে প্রতি ২০ মিনিটে ব্যাকটিরিয়ার মাত্রা দ্বিগুণ হয়। সেই কারণেই ভাগাড়ের মাংস এত বিপজ্জনক। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, গরু, শূকর, কুকুর ও বিড়াল মরলে সাধারণত ভাগাড়ে ফেলা হয়। এই সব পচা মাংসে স্ট্যাফাইলোকক্কাস, সালমোনেল্লা, ব্যাসিলাস, ক্লসট্রিডিয়াম, ই কোলাইয়ের মতো ব্যাকটিরিয়া থাকে। মাংস রান্নার সময় বেশিরভাগ ব্যাকটিরিয়ার মৃত্যু হয়। এটা ঠিক। কিন্তু, মরার আগে খাদ্যদ্রব্যে টক্সিন বা বিষ মিশিয়ে দেয়। যেমন ক্লসট্রিডিয়াম ‘বটুলিজম’ নামে এক ধরনের বিষ উৎপাদন করে যা পেট খারাপের অন্যতম উপাদান। ব্যাসিলাস, স্ট্যাফাইলোকক্কাস আবার এমন কিছু রাসায়নিক উৎপন্ন করে যা খাবার ‘ফ্রিজ’ করতে বা রান্না করতে বাধা দেয়। ব্যাকটেরিয়ার এমনই মহিমা।
অতএব, ফ্রিজে রাখা মাংস রান্না করা নিরাপদ না-ও হতে পারে। কিংবা রান্নার পর মাংসে থেকে যেতে পারে পেট খারাপের উপাদান। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম বিশ্বাস জানিয়েছেন, ভাগাড়ের মাংস খেলে ডায়েরিয়া, রক্ত আমাশা হতে পারে। তাছাড়া শূকরের মাংসে ফিতাকৃমি থাকে যা মস্তিষ্কে পৌঁছে ‘নিউরো সিস্টিসারকোসিস’ হতে পারে। আর এই রোগ হলে মৃগীর মতো উপসর্গ দেখা যাবে রোগীর শরীরে। তাছাড়া দূষিত মাংসে থাকা রাসায়নিক ক্ষুদ্রান্ত্রের বারোটা বাজিয়ে দিতে পারে। অতএব সাবধান। ‘বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি’-র নিউরো মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “নিউরো সিস্টিসারকোসিস হলে মাথার যন্ত্রণা, চোখের সমস্যা মৃগী এমনকী পক্ষাঘাতও হতে পারে রোগীর।”
[ভাগাড়ে ফেলা মরা পশুর মাংস সাপ্লাই রেস্তরাঁয়, চক্রের পর্দাফাঁস]
মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রাজা ভট্টাচার্যও দূষিত মাংস নিয়ে সাবধান করেছেন। জানিয়েছেন, ব্যাকটিরিয়া থিকথিক করে পচা মাংসে। মাংসে থাকা সালমোনেল্লা অথবা ই-কোলাই ব্যাকটিরিয়ার প্রকোপে খাদ্যে বিষক্রিয়া দেখা যায়। পেটব্যথা থেকে ক্রমাগত বমি খাদ্যে বিষক্রিয়ার উপসর্গ। শুধু মানুষ নয়, ভাগাড়ের মাংস খেয়ে অন্য পশুরাও সারতে পারে না। একমাত্র ব্যতিক্রম শকুন। শকুনের পাকস্থলী এমন অ্যাসিড উৎপাদন করে যা সালমোনেল্লা, অ্যানথ্রাক্সের মতো জীবাণু মেরে ফেলতে পারে। বিজ্ঞানীদের মত, রান্না করা খাবারে অভ্যস্ত বলেই মানুষের পাকস্থলী এখন আর শক্তিশালী অ্যাসিড তৈরি করতে পারে না। ফলে, খাবারে ‘ব্যাকটিরিয়াল লোড’ বা ‘টক্সিন’ বেশি থাকলেই পেট খারাপ হয়। ক্ষতবিক্ষত হয় ক্ষুদ্রান্ত্র। তবে ভরসা একটাই, খাবার থেকে বিষক্রিয়া হলে ৬ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই খাদক তা টের পেয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে মল পরীক্ষা করে ব্যাকটিরিয়াল লোড জেনে নিতে পারবেন চিকিৎসকরা। সেই মতো দেওয়া হবে অ্যান্টিবায়োটিক। যদিও সাবধানবাণী আউড়েছেন চিকিৎসকরা। টালিগঞ্জের এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডা. শুভব্রত পাল জানিয়েছেন, ডায়েরিয়া থেকে শুরু করে সেপ্টিসিমিয়া, এমনকী মৃত্যুও হতে পারে পচা মাংস ভক্ষণে। কারণ এই মাংসে এমন সমস্ত ব্যাকটিরিয়া বা জীবাণু রয়েছে যা সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিকও অনেক সময় এর মোকাবিলা করতে পারে না।
[চিত্র প্রতীকী]