চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: মকর সংক্রান্তি মানেই তিলের নাড়ু, তিলের মিষ্টি বা তিলকূট সন্দেশের থাকে চাহিদা। বিশেষ করে সংক্রান্তির পিঠে পরবের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে তিলকূট সন্দেশের নাম। বিহারের গয়া থেকে তিল মিষ্টির কারিগররা এখন অস্থায়ী আস্তানা গেড়েছেন আসানসোলে। দিনরাত এক করে তিলের নানা রকম মিষ্টি-মণ্ডার কাজে ব্যস্ত গয়া জেলার পারদর্শী কারিগররা। মকর সংক্রান্তির পরের দিনেই তাঁরা আবার চলে যাবেন নিজের রাজ্যে। কারণ তিল খাওয়ার ওপরে রয়েছে বিশেষ ধর্মীয় আচারবিধি। ধর্মীয় আচার মতে সংক্রান্তির পর এই মিষ্টি খাওয়ার রেওয়াজ নেই বাঙালিদের। সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে আসানসোলের হটনরোড, কুলটির নিয়ামতপুর, বারাবনির দোমাহানি, রানিগঞ্জ বাজার ও জামুড়িয়া বাজারে তাঁবু খাটিয়ে বসেছে তিল সন্দেশের কারখানা। সেখানেই চলছে বিক্রিবাট্টা।
[তারাপীঠে এবার ভক্তদের জন্য নিষিদ্ধ হচ্ছে স্নান দর্শন]
জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে গয়ার কারিগররা এবার নিয়ে এসেছেন সুগার ফ্রি তিলকূট সন্দেশ। সব থেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে বিশেষ পদ্ধতিতে গড়া এই সন্দেশটি। কাগরিগর বিষ্ণু প্রসাদ জানান, এই মিষ্টিতে সাদা তিলের ব্যবহার বেশি হয়। সুগার ফ্রি তিল সন্দেশ মূলত তৈরি হয় খোয়া দিয়ে। তিল হাল্কা ভেজে নিয়ে গুড়ো করে পেটানো নিয়ম। যত পেটানো হবে তত খাস্তা হবে তিলকূট। খোয়া বা সুগার ফ্রি মিষ্টির দাম কেজি প্রতি ২৫০ টাকা করে। এছাড়াও চিনির তিলকূট, গুড়ের তিলকূট ও তিলের নাড়ু তৈরি হচ্ছে চাহিদা অনুসারে। চিনির তিলকূট কেজি প্রতি দাম ২০০ টাকা ও গুড়ের তিলকূট কেজি প্রতি দাম ১৮০ টাকা। কারিগর গোপাল প্রসাদ জানান, ‘‘ সুগার ফ্রি তিলকূট তৈরি করতে বেশি সময় ও বেশি লোকবল লাগে। তাই দাম বেশি। খোয়ার তিলকূট তৈরি করতে পাঁচজন কারিগরকে একসঙ্গে কাজ করতে হয়। তারপর এয়ারসিল করে প্যাকেটিং হয়’’। কারণ খোয়ার তিলকূট হাওয়া ধরে নিলে আর খাস্তা থাকে না। তিলকূট কারখানার মালিক ধ্রুব কুমার জানান, ‘‘গত ১৫ দিনে সুগার ফ্রি তিলকূট তৈরি হয়েছে ৪০ কেজি। যা বিক্রি হয়ে গেছে। আবার নতুন করে তৈরি হচ্ছে’’। ওই ব্যবসায়ীর সংযোজন, গত বছর নোট বাতিলের জন্য ব্যবসা তেমন জমেনি। তবে এবার ভাল পসার রয়েছে।
[পথের বাঁকে ইতিহাস, ডালিমগড় চেনেন কি?]
নিয়ামতপুরে গৃহবধূ শ্রেয়সী মিশ্রর মতে, শুধু বাঙালি নয়, হিন্দি ভাষাভাষিদের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে তিলকূট সন্দেশের। তিলের নাড়ু বাড়িতে তৈরি করা গেলেও তিলকূট তৈরি করা যায় না। হাতে গরম পেয়ে তাই এর চাহিদা রয়েছে। যেভাবে সুন্দর সুন্দর প্যাকেট তৈরি করে বিক্রি হচ্ছে তাতে মকরসংক্রান্তি উপলক্ষ্যে অন্যকে উপহারও দেওয়া যাচ্ছে। এলাকার প্রবীণ নাগরিক প্রভাকর চট্টোপাধ্যায় সুগারের রোগী। সংক্রান্তিতে এইসব মিষ্টি নাড়ু খাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও খেতে পারতেন না। বিনা চিনির খোয়ার তিলকূট সন্দেশ আসায় তিনি পিঠে-পুলির সঙ্গে তিলের স্বাদও পাচ্ছেন। এই মিষ্টি নিয়ে কী বলছেন ডাক্তাররা। চিকিৎসক বাসুদেব সরকার জানান, ‘‘তিল শুধু ট্র্যাডিশনাল মিষ্টিই নয়, শীতের শরীর গরম করে তিল। এর সঙ্গে ভিটামিন, মিনারেলসও রয়েছে। যা সহজপাচ্য’’। এইসমস্ত কারিগররা সারা বছর বিহারের গয়ায় এই মিষ্টি তৈরি করেন। আর দিন পনেরো জন্য আসেন বাংলায়। তাদের দাবি বিশেষ এই মিষ্টি অন্য কোথাও সারা বছর পাওয়া যায় না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.