সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলায় এখন তিক্ততার জায়গা নেই। রসগোল্লার স্বীকৃতিতে শুধুই মিষ্টতা। নবীন চন্দ্র দাশের হাতযশে রসগোল্লা বাংলার রসবোধকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। এই গোলাকার মিষ্টান্ন কীভাবে জনপ্রিয় হল? নবীন চন্দ্র আবিষ্কারক হলেও রসগোল্লা তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে অনেক মিষ্টি মিষ্টি গল্প। এই প্রতিবেদনে থাকল তার কিছু নমুনা।
হারাধন ময়রা যোগ
রামায়ণের অনুবাদক কৃত্তিবাস ওঝার জন্মস্থান, তাঁতের শাড়ি। এর বাইরে আরও একটা গর্ব করার মতো বিষয় রয়েছে ফুলিয়ার। ভাগীরথীর তীরে নদিয়ার এই ভূমিতেই রসগোল্লার জন্ম। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের ১৩১৩ বঙ্গাব্দের কার্যবিবরণী (পৃষ্ঠা ১১১) বলছে কৃত্তিবাসভূমেই আত্মপ্রকাশ করেছিল রসগোল্লা। ওই গ্রামের হারাধন ময়রা রানাঘাটের জমিদার পালচৌধুরিদের মিষ্টি বানাতেন। হারাধন ময়রার মেয়ে কাঁদছিল। তাকে সান্ত্বনা দিতেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন হারাধন। রসে ছানা ফেলে দেখেছিলেন অন্যরকম স্বাদের মিষ্টি তৈরি হয়েছে। মনে করা হয় ১৮৪৬ এবং ১৮৫৬ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে এই মিষ্টির সূত্রপাত।
শান্তিপুর ভায়া ফুলিয়া
তৎকালীন নদিয়া জেলার ফুলিয়া গ্রামে রসগোল্লার উৎপত্তি হলেও পাশের জনপদ শান্তিপুরের সৌজন্যে তা জাতে ওঠে। প্রিয় এই মিষ্টিকে সাদরে বরণ করে নিয়েছিল শান্তিপুর। এখানকার রসগোল্লার জনপ্রিয়তার আঁচ মেলে গুরুচরণ মহালণবিশের আত্মকথায়। তিনি সেখানে লিখেছেন, ১৮৬৯ সালের নভেম্বর মাসে ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেন, কান্তিচন্দ্র মিত্র ও অমৃতলাল বসুর রানাঘাট যাওয়ার কথা ছিলে। গুরুচরণ তিন বন্ধুকে জানিয়েছিলেন রানাঘাট স্টেশনে দেখা করবেন। গুরুচরণকে তখন কেশবচন্দ্র সেন বলেছিলেন, বেশ তাহলে শান্তিপুরের রসগোল্লা অবশ্যই পাব। এভাবেই ফুলিয়া, শান্তিপুর থেকে রসগোল্লায় কলকাতায় আসে। তবে অন্যভাবে। খানিকটা ভিন্ন উপকরণে।
রসগোল্লার নবীন পর্ব
শান্তিপুরের চিনি ব্যবসায়ী রামকৃষ্ণ ইন্দ্র ব্যবসার সুবিধার জন্য চলে এসেছিলেন কলকাতায়। ১৭৯৪ খ্রীষ্টাব্দে কুমারটুলিতে বাড়ি কিনে থাকতে শুরু করেন। এর পরের বছর বর্তমান রাজবল্লভ স্ট্রিটে একটি মিষ্টির দোকান করার পর তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর তাঁর সন্তান কালীদাস ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যান। কালীদাসের হাত ধরে শান্তিপুরের রসগোল্লা বাগবাজারে আসে। তবে সেটা ছিল ডেলা রসগোল্লা অর্থাৎ ভিতরে শক্ত। এই সময় ১৮৬০ সালে কালীদাসের দোকানে আধুনিক রসগোল্লার আবিষ্কারক নবীনচন্দ্র দাশ কাজ শিখতে গিয়েছিলেন। অর্থকষ্টের জন্য নবীনকে অল্প বয়সে পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছিল। কালীচন্দ্রের দোকানে কাজ নিয়ে খুব একটা সুখে ছিলেন না কিশোর নবীন। প্রথমে কিছুদিন কাজ, তারপর কালীচন্দ্রের সঙ্গে অংশীদারী ব্যবসা। সব ছেড়ে নিজেই খুলে ফেলেন সন্দেশের দোকান। এরপর ১২৭৫ বঙ্গাব্দে নানারকম পরীক্ষার পর নবীনচন্দ্র রসসাগের ভাসমান অসংখ্য জালিযুক্ত ও রস পরিপুর্ণ ছানার গোলক করেন। নাম দেন রসগোল্লা। যাতে সুজি বা অন্য কিছু নেয়, স্রেফ ছানা। যা মুখে দিয়ে ভাব-সমাধি হয়েছিল স্বয়ং রামকৃষ্ণদেবের। এরপর আম বাঙালি কেন এই তুলতুলে মিষ্টি নিয়ে আহ্লাদ দেখাবে না!
তথ্যঋণ: রসগোল্লা, হরিপদ ভৌমিক (গাঙচিল)