সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মৃত মানুষের শরীর সংরক্ষণ করতে যে ফরমালিন ব্যবহার হয় তা আপনি দিব্যি খাচ্ছেন। অজান্তে প্রতিদিন শরীরে এই বিষাক্ত উপাদান কতটা প্রবেশ করছে, খেয়াল করেছেন? চোখ বুজে বাজার থেকে মাছ-মাংস, ফল-সবজি-দুধ কিনে আনেন। ঘুণাক্ষরেও টের পান না সেগুলি কতদিনের বাসি। সজীব দেখাতে তাতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কতটা ফরমালিন মিশিয়ে দিচ্ছেন। একটু ভেবে দেখুন। শিউরে উঠতে পারেন। ফরমালিনের ক্ষমতা এত বেশি যে, তা মরা মানুষের শরীরকেও তাজা রাখতে পারে। সেই জোরালো উপাদান একটু একটু করে আমাদের দেহে প্রবেশ করে ক্যানসারের মতো মারণরোগ ডেকে আনে।
আসলে কী?
ফরমালডিহাইড একটি জৈব রাসায়নিক পদার্থ। এটি জলে দ্রবীভূত হলে যে তরল তৈরি হয় সেটিই ফরমালিন। জলীয় এই রাসায়নিক আরও বেশি শক্তিশালী। জলের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ ফরমালডিহাইড মেশালে সেই জলীয় উপাদানের জীবাণুরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি হয়ে যায়। তাই চিকিৎসা শাস্ত্রের প্রয়োজনে মৃত মানুষের দেহ ও বিভিন্ন অঙ্গকে দীর্ঘদিন পচনের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখতে এই রায়াসনিক দ্রবণ ব্যবহার করা হয়।
মিশছে খাবারে
বর্তমানে অসাধু ব্যবসায়ীরা কেটে রাখা মাছ-মাংসে নির্বিচারে ফরমালিন মিশিয়ে প্রায় ৬-৭ দিন ধরে বিক্রি করছে। ফরমালিনের সঙ্গে বরফ মিশিয়ে রাখলে দুর্গন্ধ বের হয় না। দেখতে লাগে একদম ফ্রেশ। বিভিন্ন ফল, সবজিতেও ফরমালিন বা ফরমালডিহাইড মেশানো হচ্ছে। খুব উদ্বায়ী পদার্থ হলেও ফরমালিন ফল, সবজির মধ্যে প্রবেশ করে তাতে উপস্থিত অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। এরফলে বিভিন্ন যৌগ তৈরি করে। যা খেলে শরীরের ভয়ানক ক্ষতি হয়। দুধে প্রচুর পরিমাণে জীবাণু থাকে তাই দুধ কেটে যায় সহজে। দুধকে প্রসেস করার সময় ফরমালিন মিশিয়ে দিলে দুধ নষ্ট হয় না। তাই দুধকে ভাল রাখতে ফরমালিনের ব্যবহার এত বেশি।
কখন বিপদ
মুরগির মাংস, মাছ ইত্যাদিকে দীর্ঘদিন টাটকা রাখতে ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। একবার ফরমালিন মাছ, মাংসের প্রোটিনে এবং চর্বি ও রক্তে মিশে গেলে তা ভাল করে গরম জলে ধুলেও ফরমালিন মুক্ত করা যায় না। তা সরাসরি পেটে যায়। ফুড প্রিজার্ভেশনের স্ট্যান্ডার্ড মেথড অনুযায়ী, ফরমালিন খাবারে ব্যবহার করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
মাছ–মাংসে ফরমালিন চেনার উপায়
মাছের চোখ বলে দেয়, ফরমালিন ব্যবহার করা হয়েছে কি না। ঘোলাটে, অনুজ্জ্বল বা সজীবতার লক্ষণ না থাকলে বুঝতে হবে ফরমালিন মেশানো হয়েছে। মাছের মাথা, কানকো ও তেলে ফরমালিনের প্রকোপ বেশি। ফরমালিন যুক্ত মাছের পেটের দিক বেশি নরম হয়। মাছ কেনার সময় হাতে নিয়ে দেখে বুঝে কেনা উচিত। গাদার দিকে মাছ অনেকটা নিরাপদ। ফরমালিনযুক্ত মাছ সাধারণ মাছের তুলনায় খুব সহজে কাটা যায়। রক্তপাতও তেমন হয় না। বাজার থেকে কেটে রাখা মাংস কিনবেন না। কারণ বাসি মাংসকে ঠিক রাখতে তাতে ফরমালিন প্রয়োগ করা হয়। চোখের সামনে কাটা হচ্ছে এমন মাংস কিনুন। ফরমালিন দেওয়া হয়েছে, মনে এমন এতটুকু সন্দেহ জাগলে কিছুতেই তা কিনবেন না।
কোন রোগ
যেহেতু ফরমালিন জলীয় দ্রবণ, তাই এর প্রভাব শরীরে ধীরে ধীরে পড়ে। ফরমালডিহাইড বা এই সলিড উপাদানটি শরীরে কোনওভাবে পৌঁছলে সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হবে। লিভারে ক্ষতি হয় মারাত্মক। ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। হতে পারে ব্রংকাইটিস। ত্বকের সমস্যা বাড়ায়। অ্যালার্জি র্যাশের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। কিডনির ক্ষতি করে। দীর্ঘদিন ফরমালিন যুক্ত খাবার খেলে বমি ভাব হতে থাকে। মাথার যন্ত্রণা করে, মাইগ্রেন বৃদ্ধি পায়। ক্যানাসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ক্যানসার সেলের গ্রোথ বাড়ায়। ডিএনএ-এর পরিবর্তন ঘটায়।
সতর্ক করছেন যাদবপুরের ফুড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. উৎপল রায়চৌধুরি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.