BREAKING NEWS

১৩ জ্যৈষ্ঠ  ১৪৩০  রবিবার ২৮ মে ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

ভেন্টিলেটরের নির্ভরতা সরিয়ে করোনায় মৃত্যুহার কমাচ্ছে অ্যালার্জির ওষুধ! দাবি চিকিৎসকদের

Published by: Sayani Sen |    Posted: October 21, 2020 9:22 am|    Updated: October 21, 2020 12:32 pm

Anti-allergic medicine effective in treating corona patients, says doctors ।Sangbad Pratidin

ছবি: প্রতীকী

গৌতম ব্রহ্ম: নাকের ভিতর দিয়ে ফুসফুসে পৌঁছনোর আগেই যদি ভাইরাসকে নিকেশ করা যায়! পাঁচিল তোলা যায় নাসাপথে! বন্ধ করে দেওয়া যায় জীবাণু প্রবেশের দরজা? সবই সম্ভব করছে হাতের নাগালে থাকা একটি মামুলি অ্যালার্জির ওষুধ (Anti-allergic medicine)। সুস্থতার হার যেমন বাড়াচ্ছে, কোভিড রোগীর হাসপাতালবাসের সময়সীমাও কমাচ্ছে। ভেন্টিলেটরের ব্যবহার কমিয়ে নামাচ্ছে মৃত্যুর হারও! অন্তত এমনটাই দাবি চিকিৎসকদের একাংশের। অ্যাজিলাস্টিন। এই অ্যান্টি হিস্টামিন ওষুধ শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহার করা হয়। এবার এই ইনহেলারই কামাল করল রাজ্যের একটি কোভিড হাসপাতালে।

টালিগঞ্জের এম আর বাঙুর হাসপাতাল। এখানেই ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (Critical Care Unit) থাকা রোগীরা এই ইনহেলার ব্যবহার করে প্রভূত উপকার পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে ফুসফুস দ্রুত আক্রান্ত হয়। সেক্ষেত্রে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা প্রযুক্তিতে অক্সিজেন দিতে হয়। কিন্তু, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় নাসাপথ বন্ধ থাকায় সেই অক্সিজেন ফুসফুস পর্যন্ত ঠিকমতো পৌঁছতে পারছে না। ফলে অক্সিজেন দেওয়া সত্ত্বেও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই বাড়ছিল তো না-ই, উলটে কমে যাচ্ছিল। কিন্তু অ্যাজিলাস্টিনের প্রয়োগে দ্রুত ন্যাজাল ইডিমা সেরে যাচ্ছে। সংক্রমণ কমায় নাসাপথ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। ফলে অক্সিজেন খুব সহজে ফুসফুসে পৌঁছচ্ছে। ভেন্টিলেশনের প্রয়োজনও রাতারাতি কমে গিয়েছে।

এক চিকিৎসকের দাবি, দু’ সপ্তাহ ধরে অ্যাজিলাস্টিন দেওয়া শুরু হয়েছে। তারপর সিসিইউ-তে ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছে। কমেছে মৃত্যুর হার। কমেছে সংকটজনক রোগীর হাসপাতালবাসের মেয়াদ। চিকিৎসকদের দাবি, অ্যাজিলাস্টিন নাসাপথেই সার্স কোভ ২ ভাইরাসকে খতম করে ফেলছে। ফুসফুস পর্যন্ত যাওয়ার ফুরসত পাচ্ছে না। ফলে সংক্রমণ সীমা ছাড়াচ্ছে না। ভেন্টিলেটর লাগছে না। রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। বাঙুরের ক্রিটিক্যাল কেয়ারে ৬৪ জন রোগী রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রত্যেককেই একটি করে অ্যাজিলাস্টিন ইনহেলার দেওয়া হয়েছে। তাতেই হচ্ছে মিরাকল।

[আরও পড়ুন: সারাদিনে ৫ ঘণ্টারও কম ঘুমোচ্ছেন? সাবধান, আপনার শরীরে হামলা চালাতে ওঁৎ পেতে বসে করোনা]

অস্ট্রিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অফ ভিয়েনা’ এবং হাঙ্গেরির ‘ইউনিভার্সিটি অফ প্রেকস’। এবং একটি বায়োটেকনোলজি সংস্থা। এই তিনটি সংস্থা মিলে সম্প্রতি অ্যাজিলাস্টিন নিয়ে কাজ করেছে। সেখানেই ভাল ফল লক্ষ্য করা যায়। গবেষণার ফল প্রকাশিত হয় ‘বায়ো আর্কাইভ’ জার্নালে। তাতে উল্লেখ, ‘ইন ভিট্রো’-তে সেললাইনের উপর এই অ্যান্টি হিস্টামিন ড্রাগ প্রয়োগ করা হয়। উল্লেখ্য, সার্স কোভ ১ আটকানোর ক্ষেত্রেও অ্যাজিলাস্টিন ব্যবহারে সাফল্য মিলেছিল। সেই তথ্যই গবেষকদের উৎসাহিত করে। ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, ভাইরাস রিসেপটর দিয়ে কোষের মধ্যে ঢুকে কোষকে মেরে ফেলে। যাকে বলা হয় সাইটোপ্যাথিক এফেক্ট। ন্যাজাল এপিথেলিয়াল সেলে সার্স কোভ ২ ঢোকার রিসেপটর রয়েছে। অ্যাজিলাস্টিন এই রিসেপটরকে ব্লক করে সাইটোপ্যাথিক এফেক্টকে বন্ধ করে।

আফ্রিকার গ্রিন মাাঙ্কির কিডনি এপিথেলিয়াল টিউমার থেকে পাওয়া ভেরোসেল নিয়ে গবেষণা চালানো হয়। অন্যদিকে মানুষের ন্যাজাল এপিথেলিয়াল কোষকে পুনর্নির্মাণ করে তার উপর প্রয়োগ করা হয় অ্যাজিলাস্টিন। দেখা গিয়েছে, এই ড্রাগের অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এবং সাইটোপ্যাথিক এফেক্ট আটকাচ্ছে। ফলে ভাইরাস আর নাসাপথ ধরে ফুসফুসের দিকে এগোতে পারছে না। ০.৪ থেকে ২৫ মাইক্রো মিলিমোলস, হরেক ডোজে সেল লাইনের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে অ্যাজিলাস্টিন। তাতে দেখা যাচ্ছে আরএনএ মজুত থাকলেও ভাইরাসের কোনও সক্রিয়তা নেই। সিদ্ধার্থবাবুর পর্যবেক্ষণ, হিস্টামিন রিসেপটর ব্লকার এবং অ্যান্টি ভাইরাল, দু’টো বৈশিষ্ট্য থাকায় অ্যাজিলাস্টিন কোভিড-১৯ প্রতিরোধে এবং চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা নিচ্ছে। এই গবেষণাপত্রের উপর ভিত্তি করেই বাঙুরের সিসিইউ ইউনিট অ্যাজিলাস্টিন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। তাতেই দারুণ কাজ হয়।

সার্স কোভ ২-এর কোনও ওষুধ এখনও আবিষ্কার হয়নি। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ঝুলিতে মজুত ওষুধকেই ‘রি-পারপাসিং’ করে প্রয়োগ করার চেষ্টা হয়। দেখা হয় তার কার্যকারিতা। যেমন ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, এডসের ওষুধ রেমডিসিভির, পরজীবীর ওষুধ আইভারমেকটিন প্রয়োগ করার চেষ্টা হয়েছে। এবার সেই তালিকায় ঢুকে পড়ল একটি অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধও। বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ধীমান গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কোভিডের (Covid-19) শুরুতে মনে করা হচ্ছিল, সিওপিডি ও হাঁপানির রোগীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কিন্তু দেখা গেল উলটো। আসলে এই দুই রোগীরা যে সব ওষুধ খান তাতে কোভিডের সঙ্গে লড়াই অনেক সহজ হয়ে যায়। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও গবেষণার দরকার।

[আরও পড়ুন: বাতিল হতে পারে চারটি পরিচিত ওষুধ! করোনা চিকিৎসার পদ্ধতিতে বদলের ভাবনা কেন্দ্রের]

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে