BREAKING NEWS

১২ চৈত্র  ১৪২৯  সোমবার ২৭ মার্চ ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

বিষে বিষে বিষক্ষয়! ক্রনিক ব্যথা ভোলাতে ‘পেন কিলার’ হয়ে উঠছে করোনাই

Published by: Sayani Sen |    Posted: October 9, 2020 12:16 pm|    Updated: October 9, 2020 3:04 pm

Corona turning out to be painkiller ।Sangbad Pratidin

গৌতম ব্রহ্ম: বিষে বিষে বিষক্ষয়। শাপে বরও বলা যায়। যন্ত্রণাভোগের শিকড়েই কোপ! মগজে যন্ত্রণাবাহী অনুভূতি পৌঁছানোর পথ বন্ধ করে দিয়ে কেল্লাফতে। যত ব্যথাই হোক, শরীর টের পাবে না। এটাই হয়েছে। যে পথ দিয়ে ব্যথার অনুভূতি মস্তিষ্কে পৌঁছয়, তা অবরোধ করেই দস্তুরমতো ‘পেন কিলার’ (Painkiller) হয়ে উঠছে কোভিড-১৯। ম্যাজিকের মতো রাতারাতি কমিয়ে দিচ্ছে ‘ক্রনিক’ ব্যথা। আর এই ব্যথা উপশমের কাজ এতটাই ভালভাবে হচ্ছে যে, করোনার স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার করে ‘অ্যানালজেসিক’ তৈরির কথাও ভাবতে শুরু করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

মানবদেহে সার্স-কোভ-২ প্রবেশের সিংহদুয়ার অ্যাঞ্জিওটেনসিন কনভার্টিন এনজাইম-২ বা এসি-২ রিসেপ্টর। আরও একটি রিসেপ্টর নিউরোফিলিন-১ দিয়ে ভাইরাসটি শরীরে ঢুকছে বলে প্রমাণ মিলেছে। এখানেই শুরু ম্যাজিক! কী রকম?  ঘটনা হল, এই নিউরোফিলিনের মাধ্যমেই যন্ত্রণার অনুভূতি মস্তিষ্কে সংবাহিত হয়। আমাদের শরীর-মনে জেগে ওঠে কষ্ট, যন্ত্রণা। ব্যথা বিশেষজ্ঞ ডা. দেবাঞ্জলি রায়ের কথায়, “ব্যথা পেলে বা কোনও প্রদাহ বা সংক্রমণের জন্য যন্ত্রণার উদ্রেক হলে ভাসকুলার এন্ডোথেলিয়াল গ্রোথ ফ্যাকটর নামে একটি প্রোটিন শরীরে তৈরি হয়। ব্যথার জন্য দায়ী এই প্রোটিন নিউরোফিলিন-১ রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে একটি সংকেত তৈরি করে। যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে যন্ত্রণার বার্তা পাঠায়। আমরা ব্যথায় ককিয়ে উঠে।”

সম্প্রতি এমনটাই দাবি করেছেন আমেরিকার অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানীও। যার নেতৃত্বে এক ভারতীয়, ডা. রাজেশ খান্না। ফার্মাকোলজির এই অধ্যাপকের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় সাফল্য এসেছে। যার নির্যাস সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক ‘পেন’ জার্নালে। গবেষণাপত্র উদ্ধৃত করে দেবাঞ্জলি আরও জানান, ব্যথা সংবহনের পথ আটকে যায়, যখন করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন নিউরোফিলিন রিসেপ্টরে যুক্ত হয়। অর্থাৎ, ভাসকুলার এন্ডোথেলিয়াল গ্রোথ ফ্যাক্টরের বদলে নিউরোফিলিনের সঙ্গে যুক্ত হয় স্পাইক প্রোটিন। তাতেই শুরু হচ্ছে ব্যথা উপশমের কাউন্টডাউন।

[আরও পড়ুন: ক’দিন আগে সর্দি-কাশি হয়েছে? হয়তো কম ভোগাতে পারে করোনা, দাবি গবেষকদের]

এবার প্রশ্ন, সম্মুখ সমরে জিতছে কে? স্পাইক প্রোটিন, না ভাসকুলার এন্ডোথেলিয়াল গ্রোথ ফ্যাকটর? গবেষণায় প্রমাণিত, সব ক্ষেত্রেই ব্যথার জন্মদাতা প্রোটিন হেরে ভূত হচ্ছে। জিতে যাচ্ছে সার্স-কোভ-২। অর্থাৎ একসঙ্গে দু’জনেই নিউরোফিলিন রিসেপ্টরে যুক্ত হওয়ার দ্বৈরথে নামলে কোভিড (Covid-19) জিতবে। ফলে, বিষে বিষক্ষয়। পেনকিলারের কাজ করছে ভাইরাস। পুরনো ব্যথা কমে যাচ্ছে। অন্তত কোভিড যতদিন দেহে ঘর করছে, ততদিন তো বটেই। আবার কোভিড সেরে গেলে পুরনো যন্ত্রণা ফিরে আসছে। দুই প্রোটিনের দ্বৈরথ দেখে বিজ্ঞানীদের মনে নতুন আশার সঞ্চার। তাঁরা মনে করছেন, এতে ব্যথা চিকিৎসার নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের পর্যবেক্ষণ, “পরবর্তী ক্ষেত্রে ব্যথা উপশমের জন্য করোনার স্পাইক প্রোটিনকে ব্যবহার করা হলে আশ্চর্য হব না। বিশেষত যন্ত্রণাদায়ক ক্যানসার বা বাতের রোগীকে স্বস্তি দিতেই পারে এই স্পাইক প্রোটিনের আদলে তৈরি ওষুধ।”

বস্তুতই, জমাট অন্ধকারের মধ্যে এই নতুন তথ্য ব্যথা বিশেষজ্ঞদের কাছে আশার নতুন ঝিলিক হয়ে উঠেছে। সিদ্ধার্থবাবুর বক্তব্য, প্রি-সিম্পটোম্যাটিক ও অ্যাসিম্পটোম্যাটিকরাই করোনা বেশি ছড়াচ্ছে। এদের জ্বর, শ্বাসকষ্ট বা গন্ধ চলে যাওয়ার মতো উপসর্গ না থাকলেও সাবধান হওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, পুরনো ব্যথা গায়েব হয়ে যাওয়াটাও অন্যতম উপসর্গ হয়ে উঠেছে। এটাকে কোভিডের অন্যতম ‘মার্কার’ হিসাবেই দেখা উচিত। অ্যানিম্যাল ট্রায়ালও চালিয়েছেন রাজেশবাবুরা। প্রমাণ করেছেন কোভিডের ব্যথা উপশমের বৈশিষ্ট্য। ব্যথা বিশেষজ্ঞদের মত, ক্রনিক নিউরোপ্যাথির ক্ষেত্রে নিউরোফিলিন রিসেপ্টর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই রিসেপ্টরকে ব্লক করে ব্যথার অনুভূতি কমাচ্ছে সার্স-কোভ-২। এবং এই তথ্যটুকু পেন মেডিসিনে বিপ্লব এনে দিতে পারে। উন্নত ধরনের অ্যানালজেসিক হয়ে উঠতে পারে কোভিডের স্পাইক প্রোটিনের নির্যাস। তাহলে কী এবার করোনা-কাঁটায় উপড়ে যাবে ব্যথার কাঁটা? উত্তর দেবে ভবিষ্যৎ।

[আরও পড়ুন: ঘোড়ার রক্তের অ্যান্টিবডি ব্যবহার হবে কোভিড চিকিৎসায়! ট্রায়ালের অনুমতি পেল ICMR]

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে