Advertisement
Advertisement
Health Tips

সরষের তেলে মাছ ভাজা ভালো? সাদা তেল কীভাবে ব্যবহার করবেন? জানালেন বিশেষজ্ঞ

বেশি তেল যেমন ভালো নয়, কম তেলও কিন্তু ক্ষতি করতে পারে।

Oil use in regular food, know this health tips | Sangbad Pratidin
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:February 27, 2024 2:08 pm
  • Updated:February 27, 2024 2:08 pm

বাজারে অনেক রকম তেল পাওয়া যায়। কোনটা ভালো আর কোনটা অস্বাস্থ্যকর সেই নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কিন্তু শরীর কী চায়? কতটা চায়? নিত্য তেলের ধরন ও উপযুক্ত মাত্রা বুঝিয়ে বললেন রুবি জেনারেল হাসপাতালের এক্সপার্টরা। শুনলেন জিনিয়া সরকার।

অসুস্বাগতা মুখোপাধ্যায়, ডায়েটিশিয়ান
‘তেল’- খেতে, তেল দিতে সবই ভালো লাগে কিন্তু বেশি কোনওটাই ভালো নয়। আবার তেল ছাড়া চলাও কঠিন। কারণ, শরীরের নানা কার্যকারিতা ঠিক থাকে উপযুক্ত তেলের ব্যবহার দরকার। কিন্তু খুব বুঝে। তেল- যতটা ছোট একটা শব্দ, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি গভীরতা তার বিস্তারে। একটু বেশি খেলেই জমবে শরীরের আনাচে-কানাচে। তৈরি হবে রোগের পটভূমি। আবার একেবারে বাদ দেওয়া যাবে না। ভালো তেলের কিন্তু অনের গুণও রয়েছে। যেগুলো নিত্য ভালো থাকতে গেলে দরকারও। কাজেই তেলের ব্যাপারে খুব সজাগ থাকুন। গ্রহণ করুন, সঙ্গে প্রয়োজনে বর্জন করতেও শিখুন। কীভাবে?

Advertisement

oil

Advertisement

প্রথমে জানতে হবে শরীরের জন্য কোন তেল ভালো?
শরীরে শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল তেল বা ফ্যাট। মাত্র ১ গ্রাম তেল থেকে ৯ কিলো ক্যালোরি শক্তি মেলে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে কতটা এনার্জি মেলে তেল থেকে। বিভিন্ন কোষের কার্যকারিতা ঠিক থাকে, শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিকমতো কাজ করতে পারে। শরীরের নানা প্রয়োজনীয় ভিটামিন যেমন ভিটামিন, এ, কে, ই ইত্যাদি তেলের সংস্পর্শে এলে তবেই শরীরের শোষিত হয়। তাই একদম তেল বর্জন করলে শরীরে নানা ভিটামিনের অভাবও দেখা দেয়। কিন্তু উপকারী তেল ভেবে বেশি খেলে চলবে না। সোয়াবিন তেল, সরষের তেল, ক্যালোনা অয়েল, অলিভ অয়েল ইত্যাদি ভাল তেলের মধ্যে পড়ে।

তেল কেনার সময় দেখে নিন
পলি আনস্যাচুরেটেড (পুফা) ও মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (মুফা), ওমেগা ৩,৬ ফ্যাটি অ্যাসিড ও লিনোলেনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ তেল স্বাস্থ্যকর। এগুলো গুড ফ্যাট। স্যাচুরেটেড ফ্যাট ব্যাড ফ্যাট। দাম দেখে নয়, তেলের গুণমান বিচার করুন কী ফ্যাট, কতটা পরিমাণে রয়েছে সেটা দেখে।

রান্নার ধরন অনুযায়ী তেল
সরষের তেলে পুফা ও মুফার অনুপাত সমভাবে থাকে। তাই এই তেল পরিমাণ মতো সকলেই খেতে পারেন। সাধারণত ডিপ ফ্রাই করতে সরষের তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। মাছ এই তেলেই ভাজলে ভালো।
ক্যানোলা অয়েলে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা একেবারেই নেই। রয়েছে ভিটামিন ই ও কে। আর থাকছে উচ্চমাত্রায় ওমেগা থ্রি ও সিক্স ফ্যাটিঅ্যাসিড। কোন কিছু সেঁকতে বা অল্প তেলে ভাজার ক্ষেত্রে এই তেল উপকারী।

frying-oil
সানফ্লাওয়ার তেল বা যে কোনও রিফাইন্ডঅয়েল, সচরাচার আমরা যাকে বলি সাদা তেল। লুচি, পরোটা ভাজার ক্ষেত্রে এই তেল ভালো। রান্নায় ফোড়ন দেওয়ার ক্ষেত্রেও সানফ্লাওয়ার তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
তেল যদি সাধারণ তাপমাত্রায় (শীতকাল বা গ্রীষ্মকাল) জমে যায় তাহলে বুঝতে হবে স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। আর যদি না জমে তা হলে বুঝতে হবে গুড ফ্যাট সমৃদ্ধ সেই সব তেল।
নারকেল তেল, ডালডা ইত্যাদিতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। তাই এগুলি এড়িয়ে চলাই ভালো। নারকেল তেলে খেলেও সপ্তাহে এক থেকে দেড় চামচ খাওয়া যেতে পারে।

[আরও পড়ুন: সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারকে খুন করল স্বামী! হাড়হিম করা সিসিটিভি ফুটেজ ভাইরাল]

কতটা তেল স্বাস্থ্যকর?
একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ৬-৭ চা-চামচ তেল বা ৩০-৩৫ এমএল (পুরুষ) ও ২০-২৫ এমএল (মহিলা) তেল সারাদিনে খেতে পারেন। যত ভালই তেল হোক না কেন এর বেশি খেলে ক্ষতি।
 ১-৫ বছরের শিশুদের জন্য একচামচ তেলই যথেষ্ট। মাঝেমধ্যে এদের বাটার দেওয়া যেতে পারে।
৬-১২ বছর বয়সিরা সারাদিনে ২ চামচ তেল খেতে পারে, আর ১২-১৬ বছর বয়সিরা ৩-৪ চামচ তেল সারাদিনে খেতে পারে।
আবার যাঁদের ওবেসিটি বা হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস থাকে তাঁদের ক্ষেত্রে ফ্যাটের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। সেটা একজন রোগীর সর্বোপরি স্বাস্থ্য দেখে তেলের মাত্রা ঠিক করা হয়। উচিত হালকা তেলে রান্না বা ভাজা খাবার এড়িয়ে চলা। একদম তেল বাদ দেবেন না। খেলে খুব অল্প মাত্রায় পুফা ও মুফা সমৃদ্ধ তেল খান।

 

ডা. অভিষেক চক্রবর্তী, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট
বর্তমানে পেটের অসুখ থেকে হার্টের অসুখ সব ক্ষেত্রেই খাদ্যাভ্যাস একটা জরুরি ফ্যাক্টর। যেখানে ভিলেন হল তেল। অতিরিক্ত তেল খাওয়া স্বাস্থ্যের প্রতি ভীষণ ক্ষতিকারক। রক্তে তেলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া (dyslipidemia) থেকে হতে পারে ফ্যাটি লিভার এবং কালক্রমে লিভার সিরোসিস। এই রাজ্যবাসীর সেই সম্ভাবনা আরও বেশি। কারণ, তেলেভাজা, চপ মুড়ি, ফাস্টফুড ছোট বয়স থেকেই খেতে আসক্ত বাঙালিরা। আর তেল ভাসা কষা মাংস থেকে তেলে চপচপে ফিসফ্রাই সবই রসনাতৃপ্ত করে কিন্তু এগুলো যে কতটা বিপদ ডেকে আনছে পেটের, সে ব্যাপারে অনেকেই জানেন না।

oil 2

শুধু পেট কেন, হার্টের অসুখেরও একটা অন্যতম ফ্যাক্টর হল তেল। হার্ট অ্যাটাক থেকে ব্রেন স্ট্রোকের মতো জটিল সমস্যা ডেকে আনে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক অসুস্থ মানুষের দৈনিক তেলের ব্যবহার ১৫-২০ মিলির বেশি হওয়া কখনই উচিত নয়। গোদা বাংলায়, একটা ৩ জনের পরিবারের মাসিক রান্নার তেলের ব্যবহার ২ লিটার অধিক্রম করা কোনোভাবেই উচিত নয়। বিশেষত যদি পরিবারে কারও হার্টে সমস্যা, পেটের অসুখ বা ওবেসিটি, ডায়াবেটিস থাকে। আর দোকানে তৈরি ভাজাভুজি তো বিশেষ ভাবে বর্জনীয়। তার কারণ রান্নার তেল যত বেশি বার গরম হতে থাকে (smoking point), ততই তাতে ট্রান্স স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা বাড়তে থাকে। এই ট্রান্স ফ্যাটের সঙ্গে রয়েছে করোনারি থ্রম্বোসিস বা সেরিব্রাল ইসকেমিয়ার সরাসরি যোগাযোগ।

এছাড়াও অতিরিক্ত তেল থেকে ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের প্রবণতাও বাড়ে। যা থেকে গ্যাস-অম্বল-বদহজমের সমস্যা শুরু হয়। এসব সমস্যার একটা প্রধান কারণ অধিকবার ব্যবহৃত বা ভেজাল মিশ্রিত তেল। তাই হার্ট, লিভার ও হজমযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে তেল কম খান, আর তেলেভাজা থেকে দূরে থাকুন।

[আরও পড়ুন: বিশ্বকাপের পর বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন, অস্ত্রোপচারের পর শামিকে কী বার্তা দিলেন মোদি?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ