রঞ্জন মহাপাত্র: ফুটপাতে বিক্রি হওয়া ৫০ টাকার বিরিয়ানি কিংবা ১০ টাকার আলুর দম। যার রং ভাল তার কদর বেশি। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কম দামের বিরিয়ানিতে কী তেল ব্যবহার করা হচ্ছে? কখনও কী ভেবেছেন আলুর দমের রং কেন এমন টুকটুকে লাল হয়? বাড়িতে তৈরি আলুর দমে তো তেমন রং হয়না! তাহলে রাস্তার পাশে বিক্রি হওয়া আলুর দমের কেন এমন রং হয়?
[নীলরতন থেকে নিখোঁজ মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধা, অভিযোগ গাফিলতির]
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই গত এক মাস ধরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে তদন্ত শুরু করে সংবাদ প্রতিদিনের ক্রাইম কর্নার। তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। আলুর দম টুকটকে লাল করতে ব্যবহার করা হয় অ্যালামাটি। চমকে ওঠার কিছু নেই। এটি মিশিয়েই আকর্ষণীয় করে তোলা হয় আলুর দম। আর বিরিয়ানিতে ঘিয়ের বদলে ব্যবহার করা হয় কম দামের সাদা তেল। চিকিৎসকদের দাবি, দু’টোই শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। বিশেষত ছোটদের ক্ষেত্রে।
শুধু কাঁথি বা রামনগর নয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রতিটি প্রান্তেই রাস্তার পাশে বিক্রি হয় বিরিয়ানি। তমলুকের হাসপাতাল মোড় কিংবা মানিকতলা বা হলদিয়ার মাখনবাবুর বাজার সব জায়গাতেই গ্রাহক ঠকিয়ে রোজগারের ব্যবসা জমে উঠেছে। মানুষ ঠকিয়ে ব্যবসা করলেও সরকারি উদাসীনতায় অভিযুক্তদের ধরার উপায় নেই। গ্রাহকরা কখনও প্রতিবাদ করলে ব্যবসায়ীদের দল তাদের হেনস্তা করতে পিছপা হন না। তাই সব দেখেও কিছু বলার উপায় নেই গ্রাহক বা সাধারণ মানুষদের।
খাদ্যের গুণগতমান পরীক্ষা করা বা ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধের জন্য জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের খাদ্য সুরক্ষা বিভাগ ও খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিক থাকলেও গত চারবছর ধরে কর্মী কম থাকার ফলে গোটা বিভাগটাই প্রায় পঙ্গু হয়ে পড়েছে। এর ফলে শুধু খাদ্যের গুণগতমান পরীক্ষা বা ভেজাল প্রতিরোধ অভিযান প্রায় বন্ধ। মুখ থুবড়ে পড়েছে খাদ্য বা খাদ্যবস্তু বিক্রি করার লাইসেন্স (ফুড লাইসেন্স) দেওয়ার কাজও। ফলে লাইসেন্স ছাড়াই একদিকে গোটা জেলাজুড়ে চলছে অবাধ ভেজাল খাদ্যবস্তুর বিক্রি। খাদ্য লাইসেন্স ইস্যু করা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিবছর কোটি টাকারও উপর রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পূর্বমেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ও রাজ্য সরকার। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরে বর্তমানে মাত্র একজন খাদ্যসুরক্ষা আধিকারিক রয়েছেন। তাঁকে নিজের পূর্বমেদিনীপুর জেলা ছাড়াও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ও ঝাড়গ্রামের দায়িত্বে রাখা হয়েছে। ফলে স্বাস্থ্য দপ্তরের খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিকের অভাবে গোটা জেলায় খাদ্য সুরক্ষা অভিযান কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে।
[শীতে রোগ থেকে রেহাই চান? তাহলে ঘরেই তৈরি করুন চ্যবনপ্রাশ]
স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্তার কথায়, ওষুধ ছাড়া আর সমস্ত রকমের খাদ্য বা খাদ্য দ্রব্য বিক্রি করতে খাদ্য লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়। এমনকী ফুটপাত বা ঠেলায় করে খাবার, সবজি বিক্রি থেকে হোটেল রোস্তরাঁ এমনকী বেবিফুড বিক্রির জন্যও খাদ্য সুরক্ষা বিভাগের লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়। লাইসেন্স বাবদ রাজ্য সরকার ১০০-৫০০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে লাইসেন্স ফি হিসেবে রাজস্ব আদায় করে। গত তিনবছর ধরে সেই রাজস্ব আদায়ও হচ্ছে না।
[ডিম নাকি নিরামিষ, খাওয়া যাবে একাদশীতেও!]