সুপর্ণা মজুমদার: শনিবারই হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তা আর হল না বছর তেত্রিশের সুজিত অধিকারীর। ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সের কার্নিশ থেকে হাত ফসকে নিচে পড়ে গেলেন। তার কয়েক ঘণ্টা পরই সব শেষ। হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন লেকটাউনের বাসিন্দা। কিন্তু কেন? কেন এভাবে অকালে এমন ভাবে হতভাগ্য মৃত্যুর কবলে পড়তে হল সুজিতকে? কোন মানসিক পরিস্থিতিতে হাসপাতালের কার্নিশে ঝুলে পড়লেন তিনি? এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন শহরের বিশিষ্ট মনোবিদ সুমন্ত দাঁ (Sumanta Dawn)।
সুমন্ত দাঁর বক্তব্য, সুজিত অধিকারীর ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছিল তা তাঁর পক্ষে বাইরে থেকে বলা সম্ভব নয়। সেটা রোগীর চিকিৎসকরাই সবচেয়ে ভাল বলতে পারবেন। তবে মনোবিদ হিসেবে তাঁর মনে হয়েছে, অনেক সময় কাছের মানুষকে হারানোর নিদারুণ শোক বা অ্যালকোহল উইড্রয়ালের সময় এমনটা হতে পারে। হ্যালুসিনেট করতে পারে রোগী। অর্থাৎ একটা ভ্রমের শিকার হতে পারেন তিনি। যার ফলে রোগীর মনে হতেই পারে, কেউ তাঁর ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।
[আরও পড়ুন: খরচ ৬ হাজার টাকা, রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়বে স্তনের ক্যানসার]
এই ধরনের মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে কী কী করা উচিত? কী কী করা উচিত নয়? সে প্রশ্নেরও উত্তর দেন ডা. সুমন্ত দাঁ। তাঁর কথা অনুযায়ী-
উচিত –
- কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে সমস্ত সমস্যার সমাধান হয় না। রোগের গুরুত্ব বুঝে আরও বিস্তৃত চিকিৎসার প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞ মনোবিদের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
- রোগীর যখন ভ্রমের শিকার তখন তাঁর বক্তব্যের বিরোধিতা না করে তার কথা শোনা উচিত। ভরসা আদায় করা বড় কাজ।
- রোগীকে সবসময় চোখে চোখে রাখা উচিত। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন আবার তাঁর বিরক্তির কারণ না হয়ে ওঠে।
- নিয়মিত রোগীকে ওষুধ খাওয়াতে হবে।

অনুচিত –
- ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সে যেভাবে গ্রিল ছাড়া দরজা খোলা ছিল, মানসিক রোগীর ক্ষেত্রে তা একেবারেই করা উচিত নয়।
- রোগীর কাছে এমন কোনও জিনিস যেন না থাকে, যা দিয়ে তিনি নিজের ক্ষতি করতে পারেন।
- রোগীর সঙ্গে তর্ক কোনওভাবেই করা উচিত নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
অনেক সময় রোগী নিজের সমস্যা বুঝে উঠতে পারেন না। তাঁরা চিকিৎসকের কাছে যেতেও অস্বীকার করেন। তেমন ক্ষেত্রে কিছু ইনজেক্টেবল ড্রাগের ব্যবস্থাও আছে বলে জানান ডা. সুমন্ত দাঁ। গুরুতর মানসিক রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক সময় রোগীকে হাত-পা বেঁধেও রাখতে হয়। যদিও তা নিয়ে মানবাধিকার কর্মীরা সরব হন। কিন্তু রোগীকে মারাত্মক বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে এই ধরনের পদক্ষেপও নিতে হয় বলেই জানাচ্ছেন অভিজ্ঞ মনোবিদ।