Advertisement
Advertisement

Breaking News

SSKM Hospital

এক বছর তিন মাসের শিশুর মস্তিষ্কে কয়েলিং, প্রাণ বাঁচাল পিজি

কীভাবে হল এই অসাধ্যসাধন? জানুন।

SSKM Hospital performs critical surgery to save one year old kid
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:April 1, 2024 10:19 am
  • Updated:April 1, 2024 10:19 am

ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: শুটিংয়ে যেমন হয়, তার প্রায় সবটাই হয়েছে গত তিন মাস এস এস কে এম হাসপাতালের কার্ডিওলজি ও নিউরোলজি বিভাগে। শুধু লাইট, ক্যামেরা, অ‌্যাকশন-এই শব্দগুলো অনুপস্থিত। নেপথ্যে ডায়মন্ডহারবারের এক বছর তিন মাসের এক শিশু।

মাস তিনেক আগের ঘটনা। ডায়মন্ডহারবারের ছোট্ট অনীক ঘুমিয়ে ছিল খাটে। হঠাৎ মাটিতে পড়ে যায়। প্রথমে কোনও উপসর্গ ছিল না। দিন পনেরো পর বাঁ চোখ ছোট হতে থাকে, গলার বাঁ দিক কালো। যেন রক্ত জমে আছে। পাড়ার ডাক্তার, ডায়মন্ডহারবার মেডিক্যাল কলেজ হয়ে কলকাতার এক প্রখ্যাত শিশু হাসপাতালে রোগ ধরা পড়ল। সিটি স্ক্যান করে জানা গেল, খুদের বাঁ দিকের মহাধমনি থেঁতলে ফুলে আছে। সেখান থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত বেরোচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন প্রায় বন্ধ।

Advertisement

খুদের বাবার কথায়, “হাসপাতাল জানিয়ে দেয়, বাচ্চা সম্ভবত বাঁচবে না। কারণ মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন ক্রমশ বন্ধ হচ্ছে।” ছেলের ভবিষ্যৎ শুনে পায়ের তলার মাটি যেন সরে গিয়েছিল বাবার।
ডাক্তারবাবু আরও বলেছিলেন, “এত ছোট বাচ্চার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। আর হলেও যে বাঁচবে তার গ্যারান্টি কোথায়? ওটি টেবিলেই ব্রেন স্ট্রোকের সম্ভাবনা ৭০ ভাগ।” এরপরে মাঝরাতে পিজির কার্ডিওলজি এবং নিউরো সার্জারি বিভাগে এক অসম লড়াই। ভোররাতে ঘুমচোখে হাজির সিটিভিএস এবং নিউরো সার্জারির বিখ্যাত সব চিকিৎসক। মেডিক্যাল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিল অনীকের মস্তিষ্ক থেকে জমাট রক্ত বের করে ধমনিতে কয়েলিং করা হবে। ডা. শান্তনু দত্তের কথায়, “ভবিষ্যৎ তো জানাই ছিল। তাই চ্যালেঞ্জটা নেওয়া হল। অস্ত্রোপচার হল নিউরোসার্জারি বিভাগে।”

Advertisement

স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য, হালফিলে রাজ্যের কোনও সরকারি হাসপাতালে এত ছোট কোনও শিশুর মস্তিষ্কের কয়েলিং করা হয়নি। অস্ত্রোপচারের পর ভেন্টিলেশনে দেওয়া হলেও সুস্থ হয়নি। শেষপর্যন্ত পিকু (পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট)-তে সুস্থ হয় অনীক ঘোষ। গত শুক্রবার পিজির নিউরো এবং সিটিভিএস চিকিৎসকরা যমের মুখে তুড়ি মেরে ছোট্ট অনীককে বাবা-মায়ের কোলে বাড়ি পাঠিয়েছেন। পেডিয়াট্রিক বিভাগে তখন ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নিরাপত্তা কর্মীরা।

[আরও পড়ুন: যক্ষ্মার ওষুধ নিয়ে সংকটে দেশ! রোগীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় স্বাস্থ্য দপ্তর]

এই তিন মাসে অনীক রীতিমতো সেলেব হয়ে গেছে পিজিতে। দুই বিভাগের চিকিৎসক নার্সরা তার চিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগত অবসর বাদ দিয়েছেন। নিয়ম করে পরীক্ষা হয়েছে। সিটিভিএসের এক স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ম করে নমাজ আদায় করেছেন। দোয়া করেছেন, অনীকের সুস্থতার জন্য। আবার নিউরো সার্জারির কয়েক জন সিস্টার মন্দিরে প্রার্থনা করেছেন এক শিশুর জন্য। নিউরো সার্জারি সার্জন অভীক সরকার বলেছেন, “সবার শুভেচ্ছায় বাচ্চা সুস্থ হয়েছে। খুব জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছে। বাঁ পায়ের কুঁচকি দিয়ে তার পাঠিয়ে ঘাড়ের ঠিক যে অংশে রক্ত জমে ছিল সেই অংশ আটকে দেওয়া হয়। গোটা প্রক্রিয়া কম্পিউটারে মনিটর করা হয়েছে। একটু এদিক ওদিক হলেই সমস্যা হত।” অনীকের এখন ডান দিকের মহা ধমনী দিয়ে মস্তিস্কে রক্ত চলাচল হয়। বাচ্চার ভবিষ্যতে কোনও সমস্যা হবেনা। শান্তনুবাবু বলেন, “জন্মগত মানবদেহে প্রায় সব অঙ্গ দুটি করে। একটি অকেজো হলে অন্যটি আরও সক্রিয় হয়। তাই অনীক ভালোই থাকবে।”

[আরও পড়ুন: কম ঘুমোলে ক্যানসার হতে পারে? বিশেষজ্ঞ জানালেন চাঞ্চল্যকর তথ্য]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ