অভিরূপ দাস: খেলা হবে। কাতারে। গোটা বিশ্বকাপ চাক্ষুষ করতে চাইলে দেখতে হবে মশারির তলায় বসে। চিকিৎসকরা বলছেন, খেলা দেখতে গিয়ে বিভোর হয়ে যাবেন না। পায়ের গোড়ালি, কনুইয়ের চারপাশে কামড়ায় ডেঙ্গুর মশা। খেয়াল রাখুন মশার হুলে। নয়তো বিপদ। দুয়ারে বিশ্বকাপ। ভক্তদের নিয়ে চিন্তিত চিকিৎসকরা। অতি সম্প্রতি বড় ম্যাচ চলাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক ইস্টবেঙ্গল সমর্থকের। চিকিৎসকরা বলছেন, সাবধান। হাইপ্রেশার থাকলে অতিরিক্ত টেনশন নেবেন না।
প্রিয় দলের খেলা শুরু হলেই মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম। বুক ধুকপুক। জিতবে তো? ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার বলছেন,ডেঙ্গু নিয়ে সাবধান থাকতেই হবে। এডিস ইজিপ্টাই মশা সূর্যাস্তের পরও মানুষকে কামড়াতে পারে। ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকারের বক্তব্য, মশার দংশনের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও বিপদ ঘটাতে পারে। খেলা নিয়ে মারাত্মক টেনশন থেকে আচমকা হার্ট অ্যাটাকে বিপত্তি নেমে আসতে পারে।
হাইপ্রেশার থাকলে তো কথাই নেই। রক্ত শরীরে ধমনী ও শিরার মাধ্যমে চলাচল করে। ধমনী দিয়ে হৃদপিণ্ড থেকে বিশুদ্ধ রক্ত সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই ধমনীর প্রাচীরে প্রবহমান রক্ত যে পরিমাণ পার্শ্বচাপ প্রয়োগ করে তাকেই ‘ব্লাডপ্রেশার’ বলে। ধমনীর ভিতরে এই চাপ যখন বেশি হয়, সেটাই উচ্চ রক্তচাপ। সাধারণভাবে ১২০/৮০ রক্তচাপকেই চিকিৎসকরা ‘স্বাভাবিক’ রক্তচাপ বলে থাকেন। এর বেশি হলেই বিপদ। উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে টেনশন ভয়ঙ্কর কম্বিনেশন।
এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিয়াক অ্যানাস্থেশিওলজিস্ট ডা. সন্দীপ কর জানিয়েছেন, প্রিয় দল হেরে গেলে যেমন সমস্যা। তেমন অকল্পনীয় ভাল খেললেও সমস্যা। যাঁদের হার্টের সমস্যা রয়েছে আকস্মিক উত্তেজনায় তাঁদের সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সম্ভাবনা থাকে। উত্তেজনার চোটে হৃদপিণ্ডের ইলেকট্রিক সার্কিটগুলি গোলমাল করে হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। একেই বলা হয় সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। ডা. সন্দীপ করের কথায়, হৃৎপিণ্ড আচমকা থেমে গেলে মস্তিষ্ক রক্ত পায় না। শরীরকে চালানোর জন্য অত্যন্ত জরুরি মস্তিষ্ক যদি তিন মিনিট রক্ত না পায়, তা হলেই স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। ১০ মিনিটের মধ্যে মৃত্যু হতে পারে রোগীর। দ্রুত রোগীকে সিপিআর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। টেনশন কমাতে একা খেলা দেখতে বারণ করছেন মনোবিদরা। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সাইকিয়াট্রিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সৃজিত ঘোষ জানিয়েছেন, খুব টেনশনে ভুগলে একা খেলা দেখবেন না। এমন কোনও মানুষের সঙ্গ নিন, যিনি কাছে থাকলে অনেকটা চাপমুক্ত থাকতে পারেন। প্রিয় বন্ধু মনের চাপকে কমিয়ে দেয়।
চিন্তা রয়েছে শিশুদের নিয়েও। এসএসকেএম হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. সুজয় পালের কথায়, দশ থেকে ষোলো, এই বয়সের বাচ্চাদের নিয়েই সমস্যা সবচেয়ে বেশি। রাত সাড়ে বারোটা থেকে একাধিক খেলা রয়েছে। যা শেষ হতে হতে দুটো। এদিকে সকালে স্কুলে যেতেই হবে। এতদিন যে রাত ১১টায় ঘুমিয়ে পড়ত, আচমকা সে দুটোয় ঘুমালে কী হবে? ডা. সুজয় পালের পরামর্শ, বাচ্চাদের স্লিপ সাইকেলে সমস্যা হবে। খিটখিটে হয়ে পড়বে ওরা। খাবার হজম হবে না। চেষ্টা করবেন দিনে যেন অন্তত আট ঘণ্টা ঘুম হয়। রাত জেগে খেলা দেখলে ‘ডিহাইড্রেশন’-এর সমস্যা হতে পারে। দিনে দেড় থেকে দু’লিটার জল খেতে বলেছেন তিনি। খেলা চলাকালীন কোনওরকম ফাস্ট ফুড নৈব নৈব চ। মোবাইলে অ্যাপে খেলা দেখার চেয়ে টিভিকেই নিরাপদ বলেছেন চিকিৎসকরা। কান-নাক-গলার বিশেষজ্ঞ ডা. সৌত্রিক কুমার জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতি মানলে কোনওভাবে ৮৫ ডেসিবেলের উপর আওয়াজ শোনা উচিত নয়। হেডফোনে টানা ১ ঘণ্টা ৮৫ ডেসিবেলের উপর আওয়াজ বধির করে দিতে পারে চিরতরে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.