Advertisement
Advertisement
Heath Tips

ব্লাড সুগার-রক্তচাপ-কোলেস্টেরল, দিন দিন কেন বাড়ছে এই রোগ? জানালেন বিশেষজ্ঞ

এখন জীবনে যতই গতি আসুক, আসলে কিন্তু আমরা বন্দি।

Why diseases like Blood Sugar, Blood Pressure, Cholesterol are increasing, Heath Tips by experts
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:March 19, 2024 3:58 pm
  • Updated:March 19, 2024 3:58 pm

বঙ্গবিভূষণ প্রাপক, ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এসটাব্লিশমেন্ট কমিশন ও গ্লোবাল অ্যাডভাইসরি বডির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. সুকুমার মুখোপাধ্যায়। যাঁর উপর অগাধ ভরসা আমজনতা থেকে সেলিব্রিটির। ৮৫ বছর বয়সেও প্রেসক্রিপশন লিখে যাচ্ছেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে তাঁর প্রতিটি কথাই মহামূল্যবান। তিনি বলছেন, ব্লাড সুগার, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল কিংবা থাইরয়েড এখন যুগ্মভাবে কাহিল করছে। এই মন্দ কম্বিনেশনের পাকেচক্রে আসতে থাকে একের পর এক বাউন্সার। সামলাতে না পারলেই আউট। বর্ষীয়ান চিকিৎসকের মহামূল্য উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতার নির্যাস জিনিয়া সরকারের এই প্রতিবেদন।

এখন জীবনে যতই গতি আসুক, আসলে কিন্তু আমরা বন্দি। বলা ভালো, গতির অগতি। কেন? হাতের মুঠোয় সব পেলেও, নষ্ট জীবন। কুরে কুরে খাচ্ছে আলস্য। আর সেই পথেই শরীরে বাসা বাঁধছে সুগার-প্রেশার-কোলেস্টেরল ও থাইরয়েড। আবার এগুলো কোনওটাই একা নয়, দোকায় থাকে। কখনও আবার তিনটে কিংবা কারও আবার চারটেই একসঙ্গে। কাজেই রোগের ঘেরাটোপ থেকে পালানো মুশকিল হয়ে পড়ছে সকলেরই।

Advertisement

আমাদের জীবনের প্রারম্ভে অর্থাৎ বিংশ শতাব্দীতে দেখেছি সংক্রামক অসুখ বা ইনফেকশাস ডিজিজ ছিল মেজর থ্রেট। এখন সেই জায়গাটা নিয়েছে অন্য সব সমস্যা, যার মধ্যে অন্যতম ননকমিউনিকেবল ডিজিজ বা মেটাবলিক ডিজিজ।

Advertisement

আজকের দিনে আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে জীবনধারারও পরিবর্তন ঘটেছে। আগেকার সরল, সাদামাঠা জীবন। রিকশা, সাইকেল, ট্রাম, বাস চড়ে চলাফেরায় শরীর থাকতো সচল। খাদ্যাভ্যাস ছিল অতি সাধারণ। ফলে মেটাবলিক ডিজিজের এত বাড়বাড়ন্ত ছিল না। তবে এই বাহ্যিক পরিবর্তন যা আমাদের খারাপ করছে, সেটা ঠিক করাটা কিন্তু আমাদের হাতেই রয়েছে। জেনেটিক ব্যাপারটা ছেড়েই দিলাম। যেটা হাতে আছে সেটা নিয়েই ভাবতে হবে আগে। তবেই সুগার-প্রেশার, কোলেস্টেরলের যুগ্ম ছোবল থেকে বাঁচা সম্ভব হবে। তাই গুরুত্ব দিন। শরীর ভালো না থাকলে কীসের জন্য বাঁচা! আগে শরীর, তার পর সব কিছু।

ডেডলি বা বিপজ্জনক কম্বিনেশন
কারও যদি সুগার থাকে, সঙ্গে আবার যুক্ত হয় উচ্চ রক্তচাপ, তাহলে চিন্তা দ্বিগুণ হয়। অথবা দীর্ঘদিন উচ্চরক্তচাপের রোগী, ধরা পড়ল সুগার, সে ক্ষেত্রেও কিন্তু ভীষণ সাবধান হতে হবে। এছাড়া থাইরয়েড, কোলেস্টেরল থাকলে তো কথাই নেই। আবার কারও কারও দেখা যায় চারটেই একসঙ্গে রয়েছে, কারও একা একটা সমস্যা। সব ক্ষেত্রেই রিস্ক আছে, তবে যৌথ সমস্যায় রিস্ক আরও বাড়তে থাকে।

Blood-Pressure 1

যা থেকে শরীরের সমস্ত অঙ্গই ধীরে ধীরে বিকল হতে শুরু করে। এই সব অসুখের প্রভাব সর্বশরীরে বিরাজমান। ডায়াবেটিস, রক্তচাপ থেকে ইনসুলিন হরমোন কাজ করতে পারে না, ধমনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা থেকে ধমনিতে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। দেখা দেয় পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজ। অনেক সময় পায়ের ধমনিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত সঞ্চালন করতে না পারলে পায়ে ব্যথা শুরু হয়, হতে পারে গ্যাংগ্রিন। আবার কার্ডিওভাসকুলার বা হার্টের সমস্যাও বাড়ে। ধমনির অভ্যন্তরীণ দেওয়ালে ফ্যাট জমে বা লিপিড প্লাক হয়ে ক্রমশ তা সরু হতে থাকে। হার্ট বা করোনারি ডিজিজ, অ্যারিদমিয়া, ব্রেন স্ট্রোক, চোখের স্ট্রোক, কিডনি ফেলিওর, পেরিফেরাল ইসকেমিয়া, ইত্যাদির সম্ভাবনা খুব বেশি এই মেটাবলিক ডিজিজগুলো থেকে।
ব্লাড সুগারের সঙ্গে যদি কোলেস্টেরল থাকে তবে আবারও ঝুঁকি বেশি। সুগারের কারণে কোলেস্টেরল আরও দ্রুত ধমনিতে জমতে শুরু করে।

আবার থাইরয়েড, কোলেস্টেরল একসঙ্গে থাকলেও চাপ আছে। কারণ এই দুই ক্ষেত্রেই ওজন বাড়তে থাকে। যা ধীরে ধীরে সুগার, প্রেশার বাড়ায়। তারপর একদিন এই চারটি অসুখের জাঁতাকলে জীবন হয়ে ওঠে বিড়ম্বনার। খাওয়া, ঘুম, মনের ছন্দ সবই ফিকে হয়ে শুরু করে।
৪৫ বছর বয়সের পর পুরুষ-মহিলা প্রায় সকলেই আজকাল মেটাবলিক ডিজিজে ভুগছে। এমনকী, এদেশে এখন কম বয়সেও এই সব অসুখের প্রকোপ বেড়েছে। বিশেষত যাঁদের এই সব রোগের পারিবারিক হিস্ট্রি রয়েছে তাঁদের ঝুঁকি আরও বেশি। মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পর ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতি, অতিরিক্ত কন্ট্রাসেপটিভ পিলের ব্যবহার, ধূমপান, মদ্যপান, দূষণ ও ওবেসিটি দায়ী।

কেন্দ্রবিন্দুতে পেটে জমা মেদ
সেন্ট্রাল ওবেসেটিই হচ্ছে এই সব মেটাবলিক ডিজিজ বা লাইফস্টাইল ডিজিজগুলির মূল ইঞ্জিনিয়ার। আরও চিন্তার ব্যাপার, ভুঁড়ি বা পেটের মেদ। এরাজ্য তথা এদেশের অধিকাংশের মধ্যে দেখা যায় শরীরের অন্যান্য অংশের চেয়ে পেটে ফ্যাট বেশি। যে কারণেই এই চারটি সমস্যা বহির্ভূত জীবন এখন পাওয়া দুরূহ। কারও একটা রয়েছে, কারও দুটো কিংবা কারও সবগুলোই একসঙ্গে। তাই ওজন বুঝে চলুন। না হলেই নিস্তব্ধে শরীরে বাসা বাঁধে এইসব মেটাবলিক ডিজিজ।

অনুঘটক ধূমপান
এইসব লাইফস্টাইল ডিজিজের সঙ্গে যদি ধূমপান যুক্ত হয় তাহলে ভস্মে ঘি দেওয়ার মতোই ব্যাপারটা। এখন ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও ধূমপানে আসক্ত। যা থেকে সুগার-প্রেশার ক্রিটিক্যাল পর্যায়ে যাচ্ছে। ধূমপান রক্তধমনিকে আরও সংকুচিত করে, ফুসফুসের ক্ষতি তো করেই। আরও মারাত্মক হয় যদি ধূমপানের সঙ্গে মদ্যপান যুক্ত হয়। কোলেস্টেরলের সমস্যাকে আরও জটিল করে, সঙ্গে লিভারের বারোটা বাজায়, হার্টে চাপ ফেলে। মদ্যপানে মেটাবলিক অল্টারেশন হয়। অসুখ জটিল হয়।

[আরও পড়ুন: ঠান্ডা লাগা নিয়ে বাতিক কিন্তু সুবিধার নয়, সতর্ক করলেন বিশেষজ্ঞ]

চিন্তা নেই বলাটা কঠিন
চিন্তা নেই, এটা বলব না। সব কটা অসুখই যথেষ্ট চিন্তার। কোনওটা লুকিয়ে থাকে, কোনটা অন্য অসুখ ডেকে আনে। যেমন ডায়াবেটিসে পায়ে জ্বালাভাব, কাজ করতে ক্লান্তিবোধ, শরীর ভাঙতে থাকে, প্রায়ই সর্দি-কাশি-জ্বর ইত্যাদি উপসর্গ নিয়ে প্রকাশ পায়। ইনফেকশন ডায়াবেটিক রোগীদের বড় সমস্যা। থাইরয়েডে সব সময়ই ওজন হঠাৎ করে বেড়ে যায়। কোলেস্টেরলের কোনও লক্ষণই থাকে না, যতক্ষণ না তা থেকে অন্যান্য অঙ্গের কোনও ক্ষতি হচ্ছে।

আবার অনেকের ধারণা আপাত নিরীহ অসুখ থাইরয়েড। তাই তেমন কোনও
চিন্তার বিষয় নয়। তাই ওষুধও ঠিকমতো অনেকেই খান না। এমন করবেন না। যাদের হাইপো থাইরয়েড থাকে তাদের হার্টের অসুখের ঝুঁকি বেশি। কাজেই কোনও অসুখই নিরাপদ নয়।

thyroid

ভাতই কাল, যতটা সম্ভব হেঁটে যান
আপাত সুখেই খুলছে যুগ্ম অসুখের ‘প্যান্ডোরার বক্স’। কী রকম? বাঙালিরা ভাত ভালবাসে। বিশেষত মেয়েরা। রাতে-দিনে ভাত খান। এটাই কাল। আর একটা জিনিস হল মিষ্টি। শেষ পাতে একটা না হলে হয় না। ফ্রায়েড ফুড, ফাস্ট ফুড থেকে ঝুঁকি বাড়ছে। এক্সারসাইজের অভাব। কর্মব্যস্ততায় এক্সারসাইজের সময় নেই। কিংবা সময় পেলেও করতে মন চায় না। ক্লান্তি। এসব থেকেই নন-কমিউনিকেবল ডিজিজগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কোনও বয়স মানছে না। কার্বোবাইড্রেট বর্জন দরকার, ভাত খুব অল্প খাবেন, ফল খাবেন রোজ, তিন-চার রকমের শাক-সবজি খাবেন। আর যতটা সম্ভব হেঁটে হেঁটে চলা ফেরা করুন।

আরও চিন্তার ব্যাপার এই অসুখগুলো কারও কারও ক্ষেত্রে লক্ষণ নিয়ে প্রকাশ পায়, কারও ক্ষেত্রে পায় না। দেখা গেল হার্ট অ্যাটাকের পর ডায়াবেটিস ধরা পড়ল, কিংবা হার্ট ফেলিওর নিয়ে রোগী এলে দেখা গেল উচ্চরক্তচাপ। কিংবা অন্য সমস্যার সঙ্গে ধরা পড়ল থাইরয়েড।

সকাল থেকে রাত খাবেন কী?
দু-তিন চামচের বেশি ভাত খাবেন না দুপুরে। সবচেয়ে ভালো ভাতের বদলে স্যালাড খাওয়া কিংবা আটা বা মিলেটের রুটি। রাত্রিবেলায়ও রুটি খান।

সকালে দু-তিন রকমের মরশুমি ফল খান। আর এক্সট্রা সল্ট বা নুন বিশেষত কাঁচা নুন একেবারেই খাবেন না।
বার্গার, পিৎজা, রোল, পকোড়া, মশলা মুড়ি, বাদামমাখা ইত্যাদি বাদ দিন। এগুলোতে নুনের পরিমাণ খুব বেশি।
আর নিয়মিত ৩০ মিনিট এক্সারসাইজ করতে ভুলবেন না।

বিএমআই বাড়লেও ভুঁড়ি যেন না বাড়ে, মেপে নিন
বিএমআই – বেসাল মেটাবলিক রেট ৩০-এর বেশি হলেই একজন ওবেসিটিতে আক্রান্ত। সাধারণত উচ্চতা ও ওজনের ভিত্তিতে একজনের বিএমআই ২৩-২৪ এর মধ্যে হওয়া ভালো। তবে কারও যদি বিএমআই একটু বেশি হয় ক্ষতি নেই, যদি না তার পেটে মেদ জমে। পেটের মেদ বিএমআই-এর চেয়েও মারাত্মক।

পেটের মাপ ঠিক রাখুন। অর্থাৎ মাপার ফিতেতে নাভির কাছ থেকে মাপলে পেটের পরিধি পুরুষদের ক্ষেত্রে ৯০ সেমি বা ৩৫ ইঞ্চির মধ্যে ও মহিলাদের ক্ষেত্রে ৮০ সেমি বা ৩০ ইঞ্চির মধ্যে থাকা উচিত। এর থেকে বাড়লে সেটাই ওবেসিটির মার্কার। এটা সকলের মাথার রাখা দরকার।

fat

আর একটা ব্যাপার, রক্তচাপ। স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রা হবে ১৩০/৮০ -এর মধ্যে। রক্তচাপ ১৫০/১০০ হলেও রিস্ক থাকে। তাই সাবধান।
সাধারণত রক্তে সুগারের মাত্রা ফাস্টিং ১২৬-এর বেশি, (পিপি) ২০০-র বেশি হলে ডায়াবেটিস। তখন ওষুধ খেতেই হবে।
ডায়াবেটিসের এইচবিএ১সি টেস্টের রিপোর্ট হওয়া দরকার ৬.৫ থেকে ৭ এর মধ্যে।
কোলেস্টেরলের ক্ষেত্রে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা রাখতে হবে ১৫০ এর কম। আর এলডিএল রাখতে হবে ১০০-এর কম। তবেই আপনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন সমস্যা নিয়েও।
এর সঙ্গে যুগ্ম মেটাবলিক ডিজিজে আক্রান্ত হলে অর্গান স্ক্রিনিং খুব জরুরি। হার্ট, ব্রেন, কিডনি, চোখ ও ফুসফুসের নিয়মিত স্ক্রিনিং দরকার চিকিৎসকের পরামর্শ মতো। তাহলে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মেটাবলিক ডিজিজ থেকে সেটা আগাম বোঝা সম্ভব। এটাই হলিস্টিক কেয়ার।

রেড অ্যালার্ট কোন সময়ে
সাধারণত এই কম্বিনেশন অসুখগুলো বয়সকালে বা ৩০ বছর বয়সে দেখা দিলে খুব ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। না মানলে, কথা না শুনলে বিপদের সম্ভাবনা প্রবল। অবহেলার কারণেই অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেলের ঘটনা বেড়েছে।
আর মহিলাদের গর্ভাকালীন অবস্থায় উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিসও বেশ চাপের ব্যাপার।

[আরও পড়ুন: সারা বাড়িতে দোলের রং, পরিষ্কার করবেন কীভাবে? জেনে রাখুন এই চার উপায়]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ