বৃষ্টির জল সংরক্ষণ নিয়ে লিখলেন তিতাস।
জানেন কি, বেঙ্গালুরুর বাসিন্দারা প্রতি বছরে বৃষ্টিপাতের ৩০ শতাংশ জল যদি সংরক্ষণ করে, সেই পরিমাণ জল প্রতি বছর কাবেরী নদী থেকে ব্যবহৃত জলের চেয়েও ঢের বেশি? স্বভাবতই কোনওকিছুর অভাব অনুভূত না হলে মানুষ তাকে মর্যাদা দেয় না। জলও ব্যতিক্রম নয়। অথচ বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা গেলে শক্ত হাতে মোকাবিলা করা সম্ভব জলের ঘাটতি।
রেন ব্যারেল
বাড়ির ছাদে বা বাইরে খোলা জায়গায় একটি ফাঁকা জলের ট্যাঙ্ক বসিয়ে দিন। বর্ষার দিনে তা ভরে উঠুক আপন খেয়ালে। মশার উপদ্রব রুখতে ট্যাঙ্কের মুখে সরু তারের জালি বা মশারি বেঁধে নিন। অথবা এক চা চামচ সাদা তেল ঢেলে দিন জলে। তেল জলের ওপরের স্তরে ভাসবে, মশার বাড়বৃদ্ধি রোখা যাবে।
[ আরও পড়ুন: দেশজুড়ে তীব্র সংকট, গেরস্থালির কাজে জল সাশ্রয় করুন এইভাবে ]
রেন গার্ডেন
বাড়ির ছাদ থেকে জল বের করার জন্য পাইপের ব্যবহার হয়, যা নিকাশি ব্যবস্থায় সাহায্য করে। ছাদের এই নিকাশি নালার সঙ্গে মাটির নীচে আরও একটি নালা সংযোগ করে দিন, যাতে বৃষ্টির সময় জল আপনার বাড়ির সামনের বাগানের মাটিতে শোষিত হয়। বাগানে স্থানীয় সব মরশুম উপযোগী কিছু গাছ লাগান, মরশুমি নয়। এছাড়াও বাগানের একপাশে খানিক উঁচু মাটির ঢিপি রেখে দিন, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘বার্ম’। এই মাটিও ভারী বৃষ্টির জল ধরে রাখতে সহায়ক।
রেন সসার
এটি তৈরি করার জন্য একটা জলের ড্রাম, পাইপ ও রেন সসার প্রয়োজন। রেন সসার হল কাঁপার একটি বড় সংস্করণ। দু’টি কাঁপা পাইপের সঙ্গে যোগ করা থাকবে। এবার এই পাইপের যোগ থাকবে জলের ড্রামে। বৃষ্টির সময় দু’টি কাঁপাতে জল ভরে তা চুঁইয়ে পড়বে ড্রামে। এভাবেই হবে সংরক্ষণ।
মাজহাপোলিমা প্রকল্প
উপকূলবর্তী কেরলে প্রতি বছর গড়ে বৃষ্টিপাতের হার ৩০০০ মিলিমিটার। অথচ এখানকার বহু এলাকা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে হয়ে পড়ত জলশূন্য। ত্রিশূর জেলা তারই অন্যতম। ঘরে ঘরে পাতকুয়া থাকলেও প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাস কুয়োর তলানির জল আয়রন ও নোনা জলের প্রকোপে হয়ে উঠত ঘোলাটে। পান করা তো দূরস্থ, সেই জল রান্না বা অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা যেত না। প্রতি ট্যাঙ্কার পানীয় জলের জন্য প্রায় ৬৫০ টাকা খরচ করতে হত স্থানীয়দের। দিনে পরিবার পিছু গড়ে প্রয়োজন পড়ত ২০ ট্যাঙ্কার জলের। বিকল্পে ৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে নদী থেকে বয়ে আনতে হত জল রান্না ও শৌচাগারে ব্যবহারের জন্য। ত্রিশূরের এহেন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতেই ২০০৯ সালে শুরু হয় ‘মাজহাপোলিমা রেন বাউন্টি’ প্রকল্প। প্রকল্পের ভিত্তি বৃষ্টির জল সংরক্ষণ। বর্ষাকালে ছাদের থেকে জল চুঁইয়ে পড়ে যেখানে, সেখানে একটি পাইপ বসিয়ে তা সংযোগ করা হয় একটি ফিল্টার চেম্বার অর্থাৎ জল পরিশোধন কক্ষে। এই কক্ষের একেবারে তলানিতে থাকে বালি ও নুড়ির আস্তরণ, তার ওপর কাঠকয়লার আস্তরণ। ছাদ থেকে জলের ধারা পাইপ বেয়ে জমা হয় কক্ষে, সেখান থেকে তা পরিশোধিত হয়ে পাইপ বেয়ে জল যায় পাতকুয়ার মুখে। পাইপের মুখে আটকানো থাকে নাইলনের জাল বা সুতির কাপড়। এছাড়াও কক্ষ থেকে যে পাইপ বের করা হয়, সেখানে থাকে একটি কল। সেই কল চালু করলে তবেই কক্ষের জল পৌঁছে যায় পাতকুয়ার মুখে। এছাড়া পাতকুয়ার মধ্যে মশার সংক্রমণ ও ধুলোবালি রোধ করতে তা ঢাকা থাকে মশারি দিয়ে। তিন ধাপে পরিশোধিত জল পানীয় হিসেবে যেমন ব্যবহার করা সম্ভব, অন্যান্য ঘরের কাজেও তা ব্যবহার্য। যোজনার মূলে ছিলেন জোস সি. রাফায়েল, যিনি বর্তমানে ‘মাজহাপোলিমা রেন বাউন্টি’ প্রোগ্রামের ডিরেক্টর। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম, দূরদৃষ্টি ও সাহায্য ছাড়া যোজনার রূপায়ণ ছিল অসম্ভব। তাঁর এই প্রচেষ্টায় সার্বিকভাবে সাহায্য করেছেন আরও অনেকে- ত্রিশূর জেলা প্রসাশন ও জেলা আধিকারিকগণ। ইতিমধ্যে ৩০ হাজারের বেশিসংখ্যক ওয়েল রিচার্জিং সিস্টেম বসানো হয়েছে, যার থেকে উপকৃত হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। ২০১৮ সালে ‘ওয়াটার, এয়ার অ্যান্ড ফুড উইনার্স’ (ওয়াফা) পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছে প্রোজেক্টটি।
[ আরও পড়ুন: অন্দরসজ্জায় পর্দা আনতে পারে চমক, ভেবেচিন্তে বেছে নিন ]