সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক : দাম্পত্যে অশান্তি কিম্বা সংসারে জটিলতা? বহির্জগতে বেশি ঝুঁকছেন আজকের প্রজন্ম? ঘরের চার দেওয়ালের বাইরে বাইরের মুক্ত হাওয়ায় শান্তির খোঁজেই মগ্ন তরুণ প্রজন্ম। বা সদ্য তারুণ্য পেরোনো বয়সি মানুষজন। তৈরি হচ্ছে বিবাহ বহির্ভূত একাধিক সম্পর্ক। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে পরকীয়াকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। যুক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে, পরকীয়া কিংবা দাম্পত্য অশান্তিতে বিধ্বস্ত হয়ে মানসিক শান্তির জন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হওয়া অপরাধের নয়।
কিন্তু, আজকের জেটযুগে যেভাবে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের বাড়বাড়ন্ত এবং তার খোলামেলা বহিঃপ্রকাশ ঘটছে, তাতে আদালতের পর্যবেক্ষণ একটু ভিন্ন। সম্প্রতি মাদ্রাজ হাই কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ কেন্দ্র এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকারের উদ্দেশে নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, ঘরে ঘরে দাম্পত্য অশান্তি এবং বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হওয়ার জন্য টেলিভিশনের মেগা ধারাবাহিকের কোনও ভূমিকা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। বিভিন্ন উচ্চ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের নিয়ে একটি বেঞ্চ গঠন করে এই বিষয়টি নজরে আনার পরামর্শ দিয়েছে মাদ্রাজ হাই কোর্ট। এই সমীক্ষায় সমাজকর্মী এবং বিশেষজ্ঞদের শামিল করার কথাও বলা হয়েছে বিচারপতিদের তরফে। ছোটপর্দার ধারাবাহিকের বিষয়বস্তু বা উপস্থাপনা কি কোনওভাবে সামাজিক অবক্ষয়, বিশেষত দাম্পত্য জীবনে আরও বেশি করে জটিলতা তৈরি করছে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চান বিচারপতিরা। তাঁদের আরও পরামর্শ, প্রয়োজনে প্রতিটি জেলায় জনসংযোগের মাধ্যমে মেগা সিরিয়ালের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করার দায়িত্ব নিতে হবে এই কমিটিকে। করতে হবে পাবলিক এবং ফ্যামিলি কাউন্সেলিংও।
মিলনের স্থায়িত্ব বাড়াতে ঘরোয়া উপায়েই বানিয়ে ফেলুন ভায়াগ্রা
মাদ্রাজ হাই কোর্টের বিচারপতিদের ধারণা, দিনশেষে সন্ধেবেলা ঘরে ফিরে টিভি খুললেই চোখ আটকে যায় মেগা সিরিয়ালগুলোয়। প্রায় আধঘণ্টা ধরে পারিবারিক কিম্বা সামাজিক গল্পগুলিতে একাধিক বাঁকঝোঁক মানুষের মনকেও নাড়া দেয়। সেসব নিয়ে ভাবায় এবং প্রভাবিত করে তোলে। কেউ কেউ ওই আধঘণ্টার বিনোদন সীমিত রাখতে পারেন ওইটুকু সময়েই। আবার অনেকে টিভির পর্দায় দেখা কাহিনির সঙ্গে এতটাই একাত্ম হয়ে যান যে গল্পের বিন্যাস বা সেসব চরিত্রের সংকট তাঁর নিজের জীবনের বলে মনে হতে থাকে। তার প্রভাবই পড়ে তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনে। ফলস্বরূপ, কখনও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা, ভুল বোঝাবুঝি, আবার কখনও নিজের সঙ্গী বা সন্তানদের প্রতি কর্তব্যে ঔদাসীন্য– এসবের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে দেখা যায়।
সঙ্গীর ভালবাসা কি কমে যাচ্ছে? এই লক্ষণগুলিতে মিলবে প্রমাণ
তরুণ প্রজন্মের একাংশের মত, মেগা ধারাবাহিকের গল্পগুলোই আসলে সমস্যার মূল কারণ। অধিকাংশ কাহিনিতে সমাজের ইতিবাচক দিক তুলে ধরার বদলে সংকীর্ণতাকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আলোর দিশা দেখানোর বদলে তুলে ধরা হচ্ছে অন্ধকারের দিকগুলি। সে বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্যই হোক বা বয়োজ্যেষ্ঠ, সকলের চরিত্রকে কূটিল মোড়ক দেওয়া হয়। আর এসব থেকেই নানা অপরাধের সুলুকসন্ধান পায় অপরাধী মন। তাতেই সামাজিক অবক্ষয় বাড়ছে। আবার আরেকাংশের মত, সব মেগাই এত খারাপ নয়। ঐতিহাসিক বা বিভিন্ন আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তৈরি ধারাবাহিক অনেক সহজে নবপ্রজন্মের ইতিহাস চেতনা তৈরি করে। আর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে অধিকাংশ মানুষের মতামত, এটা তো আজকের ব্যাপার নয়। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন সমাজে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক চিরকালীন। এর উপর মেগা সিরিয়ালের প্রভাব নিতান্তই নগণ্য বিষয় বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে, মাদ্রাজ হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে সামাজিক পর্যালোচনা করলে হয়ত বেরিয়ে আসতে পারে আরও নানা দিক।